‘ধরন বদলালে আমি আর সাকিব থাকব না’

সংবাদ সম্মেলনের সেটি শেষ প্রশ্ন; অনেকটাই লম্বা। “সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন, ‘শেষ কবে ভালো বলে আউট হয়েছি, মনে নেই।’ গত ৫ টেস্টে আপনার অন্তত ৩টি আউটের ধরন বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। আপনি টিভিতে বলছিলেন যে নিজের খেলার ধরন পাল্টাতে চান না। বিরাট কোহলির চারটি ডাবল সেঞ্চুরিতে একটি মাত্র ছক্কা। তো কখনও কি মনে হয়, দলের অবস্থা বুঝে বা পরিস্থিতি বুঝে মাঝে মধ্যে নিজের খেলার ধরন একটু পাল্টাই?”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি হায়দরাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2017, 02:33 PM
Updated : 11 Feb 2017, 03:20 PM

প্রশ্ন শেষ হতে সময় লাগলো, উত্তর আসতে নয়। সাকিব আল হাসানের উত্তর একদমই সংক্ষিপ্ত। কতটা? মুখে একটি শব্দও নয়। মুখে অনিচ্ছার একটি ভঙ্গি ফুটিয়ে তুলে স্রেফ মাথা নাড়লেন দুদিকে। প্রশ্নকর্তার আবার জিজ্ঞাসা, “মনে হয় না পাল্টাই?” সাকিবের আবারও এমন ভঙ্গি, যেটির অর্থ ‘না’।

শেষ প্রশ্নটি আসলে আরও অনেক প্রশ্নেরই ধারাবাহিকতা। প্রসঙ্গ একই। ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। খেলেছেন দারুণ কিছু শট। কিন্তু শেষটাই বেশি চোখে লাগছে সবার। আরও একবার তুলে মারতে গিয়ে আউট। আরও একবার সম্ভাবনাময় একটি ইনিংসের অপমৃত্যু। সংবাদ সম্মেলনে তাই বারবারই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন হলো তার আউটের ধরন, মানসিকতার বদল নিয়ে।

ব্যাটিংয়ের মতো সাকিব ভাবনায়ও অনড়। সেটির প্রকাশ ভাষায়, ভঙ্গিমায়। আউট হওয়ায় হতাশা আছে, আউটের ধরনে অনুতাপ নেই।

“আপনি যদি আমার পুরো ইনিংস দেখেন, আমি শটস খেলেছি। ওই শটটা ভালভাবে খেলতে পারিনি। এটাই বলতে পারি আমি। ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই ব্যাটিং করেছি। আমি যেভাবে শেষ পাঁচ-ছয় বছর খেলেছি, এই ইনিংসেও সেভাবেই খেলেছি। পরিবর্তন করতে চাই না।”

“ওই সময় আউট না হলে হয়ত আমার ১০০টা হয়ে যেত। কিংবা দলের জন্য বেশিক্ষণ ব্যাটিং করতে পারতাম। অবশ্যই ভাল হতো। তবে আসলে আমি অত কিছু চিন্তা করে ব্যাটিং করি না তো…।”

আগের টেস্টেই ক্রাইস্টচার্চে দুই ইনিংসে আউট হয়েছিলেন বাজে শটে। তার আগের টেস্টে ওয়েলিংটনে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে ফিরেছিলেন ভীষণ দৃষ্টিকটু এক শটে। এর আগে ইংল্যান্ড সিরিজে চট্টগ্রামে মইন আলিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে জন্ম দিয়েছিলেন তুমুল সমালোচনার।

এত কথা, এত আলোচনা কি প্রভাব ফেলে মনোজগতে? সাকিবের ব্যাটিং যা বলে, কণ্ঠেও সেটিরই প্রতিধ্বনি।

“না তেমন নয়। আমি ওভাবে ভাবি না। আমার ভাবনা দলে অবদান রাখা। ২১৭ রান করেও আমি খুশি ছিলাম না। দলের জন্য আরও রান করতে চেয়েছিলাম। জানি সেটা সবসময় হবে না। তবে সেটির জন্য নিজের খেলার ধরন বদলাবো না। যদি ধরন বদলাই, তাহলে আমি আর সাকিব থাকব না। আমি এভাবেই ভাবি।”

দলে অবদান রাখার ভাবনাটিও তাহলে কৌতুহল জাগানিয়া। দলে অবদান রাখার কথা ভাবলে তো দলের অবস্থা, ম্যাচের পরিস্থিতিও ভাবা উচিত! কিন্তু সেই প্রশ্নে বারবারই বলছেন এবং বলে এসেছেন, নিজের খেলার ধরনের সঙ্গে আপোশ নয়।

আবার ভাবনাটি যে নিজের জন্য স্বার্থপর ব্যাটিং, সেটিও নয়! নইলে কেন আরও একটি সেঞ্চুরি এভাবে মাঠে ফেলে আসবেন! টেস্ট ক্যারিয়ারে তার সেঞ্চুরি চারটি। অথচ অনয়াসেই থাকতে পারত ১৩টি। এই নিয়ে ৯ বার আশি পেরিয়েও আউট হলেন সেঞ্চুরির আগে!

এই আলোচনাতেও খুব একটা আগ্রহ নেই সাকিবের। প্রশ্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেমনই হোক, সাকিবের উত্তর একই রকম।

“ব্যাটিং করার সময় আসলে এত কিছু কাজ করে না। ব্যাটিং করতে থাকি, শটস খেলতে ভাল লাগে। ওটাই খেলতে থাকি। কখনও সফল হই, কখনও হই না। এগুলো খুব বেশি চিন্তা করার আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। কারণ এটা আমার সহজাত খেলা। আমি এভাবেই খেলতে পছন্দ করি।”

ব্যাটিংয়ের ধরন বা সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা, কোনোটিই নতুন কিছু নয়। তার ব্যাটিং, তার শট, তার সামর্থ্য, তার আউটের ধরন, সেটি নিয়ে ভাবনা, শুরু থেকে শেষ সবই চেনা। দিনের খেলা শেষে স্টার স্পোর্টসেও বলেছেন, “সমালোচনা তো হবেই। তবে আমি নিজের সহজাত খেলাই খেলে যাব। আমি দলে অবদান রাখতে চাই নিজের মত করেই।”

ভাবান্তরের সুযোগ যেখানে নেই, ভাবনার খোরাক জোগানোই বৃথা!