মুশফিক-মিরাজের হাতে আশার বৈঠা

রবীন্দ্র জাদেজার বলে মুশফিকুর রহিমের সুইপ। ফিল্ডারদের নড়ার সুযোগ না দিয়ে চার। প্রেসবক্সের ঘোষক ঠিক ওই সময়টাতেই জানাচ্ছিলেন, মাঠের দর্শক ২১ হাজার ৯০০। কিন্তু গ্যালারিতে আলোড়ন খুব একটা নেই! দিনের বেশির ভাগ জুড়েই ছিল চিৎকার-হল্লা। শেষ ভাগটায় সেখানে নীরবতা নামাতে পেরেছেন মুশফিক ও মিরাজ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিহায়দরাবাদ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2017, 01:18 PM
Updated : 11 Feb 2017, 03:20 PM

খানিক পর শেষ হলো দিনের খেলা। মুশফিক গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মিরাজকে। নিস্তেজ গ্যালারির ছায়া ভারতীয় ফিল্ডারদের শরীরী ভাষায়। বেশ ম্রিয়মান!

এখনও খুব অসাধারণ কিছু করে ফেলেনি বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ৩২২ রানে শেষ তৃতীয় দিন। ভারতকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামাতেই এখনও চাই ১৬৬ রান, উইকেট হাতে মাত্র চারটি। ভারতের ইনিংসের কাছাকাছি যাওয়াও অনেক দূরের পথ। কিন্তু শেষ দুই সেশনে অন্তত লড়াইটা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সেই অভিষেক টেস্টের পর এই প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে খেলতে পেরেছে একশ ওভার!

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের জুটিতে লড়াইয়ের শুরু। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে মুশফিকের জুটিতে এগিয়ে চলা। সাকিব থাকা মানে শুধু প্রতিরোধ নয়, পাল্টা আক্রমণও। এদিনও ব্যতিক্রম নয়। দারুণ খেলেও যদিও আরও একবার ফিরেছেন বাজে এক শটে। কিন্তু মুশফিক ও মিরাজের লড়াই যেমন ছিল বীরোচিত, দিনের শেষটাও স্বস্তির।

আরও একটি প্রাপ্য সেঞ্চুরি নিজের হাতেই মাঠে ফেলে এসেছেন সাকিব। ক্যারিয়ার রান ৩ হাজার ছুঁয়ে মুশফিক ছুটছেন সেঞ্চুরির দিকে। আর ব্যাটিং নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ খানিকটা দূর করলেন মিরাজ। দলকে, দেশকে আর নিজেকে উপহার দিলেন প্রথম টেস্ট অর্ধশতক। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এখনও রয়েছেন টিকে।

সকালে শুরুটা ছিল দু:স্বপ্নের মতো। তখনও মিনিট দশেক খেলা হয়নি। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে থমকে গেলেন মুমিনুল, থমকালেন তামিম। ইতস্তত করে আবার ছুটলেন দুজন। ততক্ষণে বল চলে এসেছে বোলারের হাতে। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম রান আউট নন স্ট্রাইক প্রান্তে!

সেই ভুল বোঝাবুঝি মনে ছাপ রেখেছিল বলেই কিনা, উমেশ যাদবের ভেতরে ঢোকা বলের জবাব পেলেন না মুমিনুল। দুর্দান্ত স্পেলটায় মাত্র ২০ ওভার পুরোনো বলেও অসাধারণ রিভার্স সুইংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেছিলেন উমেশ।

উমেশের সেই স্পেল পার করে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ফিরলেন ইশান্ত শর্মা আসতেই। কাটা পড়লেন ভেতরে ঢোকা বলে। টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্নটি আরও উচ্চকিত করার সুযোগ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন আরও একবার থিতু হয়ে (২৮)।

উমেশ দারুণ পরীক্ষা নিয়েছেন সাকিবেরও। দিনশেষে সাকিব বলেছেন, তার ক্যারিয়ারে খেলা অন্যতম সেরা স্পেল। বেশ কবার আউট হতে হতে বেঁচে যান, এর ফাঁকে খেলেছেন দারুণ শটও।

সেই সময়টা কাটিয়ে দেওয়ার পর আর কোনো অস্বস্তিই ছিল না সাকিবের ব্যাটিংয়ে। ছুটেছেন আপন গতিতে। থেমেছেনও আপন খেয়ালে। ওয়ানডের গতিতে ছাড়িয়েছেন আশি। সেঞ্চুরিকে যখন মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার, তুলে মারতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন অশ্বিনকে (১০৩ বলে ৮২)।

পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের জুটি ১০৭ রানের। সাব্বির এসে সঙ্গ দিতে পারলেন না অধিনায়ককে। টেস্টে মিরাজের যা ব্যাটিং ফর্ম, ৬ উইকেট হারানোর পরই যেন বেজে গিয়েছিল ইনিংস শেষের ঘণ্টা। কে ভাবতে পেরেছিল, দিন শেষেও উইকেট থাকবে ৬টিই!

সাকিবের সঙ্গে জুটিতে মুশফিকও খেলেছেন দারুণ সব শট। সাকিব ফেরার পর অনেকটা ঢুকে যান খোলসে। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় পড়ে থাকেন উইকেটে। এক পর্যায়ে ৪৬ রানেই আটকে ছিলেন ২০ বল! পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১৭৪ মিনিটে, ১৩৪ বলে। ষষ্ঠ বাউন্ডারির পর আরেকবার সীমা ছুঁয়েছেন ৬৫ বল পর!

মিরাজও কম যাননি। শারীরিক গঠন, উচ্চতায় দূর থেকে দুজনকে আলাদা করা কঠিন। মাঝেমধ্যে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ছিল ব্যাটিং দেখেও। মিরাজ ছিলেন এতটাই দারুণ। পেসারদের শর্ট বল সামলেছেন দারুণ। স্পিনে পায়ের কাজ ছিল দুর্দান্ত। যার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছে নিয়ে এসেছেন ভারতে, সেই অশ্বিনকে খেলেছেন সবচেয়ে ভালো। অশ্বিনের বলেই বেরিয়ে এসে স্পিনের বিপক্ষে মিরাজের একটি কাভার ড্রাইভ সম্ভব দিনের সেরা শট।

৮ ইনিংসে ২০ রান, সর্বোচ্চ ১০- এই পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু করা মিরাজের রেকর্ডে এখন আছে একটি টেস্ট ফিফটি।

৮৭ রানের জুটির পথে পায়ে ক্র্যাম্প দেখা দিয়েছে দুজনেরই। পুরোনো হ্যামস্টিংয়ে টান লেগেছে মুশফিকের। দিনের শেষ ওভারে ইশান্তের বল ছোবল দিল আঙুলে। সেটি সামলে পরের বলেই বাউন্সারকে পাঠালেন বাউন্ডারিতে। নেতৃত্ব আর কিপিংয়ে নিয়ে সংশয় জাগানো ক্রিকেটার নয়, ব্যাট হাতে মুশফিক যেন সত্যিকারের বীর!

সেই বীররোচিত ব্যাটিং চাই চতুর্থ দিনেও। মিরাজের সঙ্গে তার জুটি যত লম্বা হবে, ততই বাড়বে বাংলাদেশের ফলো অন এড়ানোর আশা। আর সেটি পারলে, কে জানে, ম্যাচ ড্র করাও খুবই সম্ভব!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস:  ১০৪ ওভারে ৩২২/৬ (আগের দিন ৪১/১)(তামিম ২৫, সৌম্য ১৫, মুমিনুল ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮২, মুশফিক ৮১*, সাব্বির ১৬, মিরাজ ৫১*; ভুবনেশ্বর ০/৪৬, ইশান্ত ০/৫৪, অশ্বিন ১/৭৭, উমেশ ২/৭২, জাদেজা ১/৬০)