শুরু আর শেষে কত অমিল!

প্রভাত সবসময় দিনের পূর্বভাস দেয় না। উইকেটের চেহারার প্রতিফলনও সবসময় পড়ে না আচরণে। নতুন কিছু নয় কেনোটিই। তবে ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে নতুন করে আবার সেই অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশের।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিহায়দরাবাদ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2017, 12:42 PM
Updated : 9 Feb 2017, 03:45 PM

প্রথম ওভারেই উইকেট, পরে সারাদিনে আর মাত্র দুটি। প্রথম ৫ ওভারে স্কোরিং শট চারটি। শেষ ১০ ওভারে রান ৭১। প্রথম দিকে বাতাসে আর পিচে মিলে মুভমেন্ট। পরে উধাও মুভমেন্ট, নেই টার্নও। খানিকটা ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও উইকেট হয়ে গেল ব্যাটিং স্বর্গ। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ বিশ্বের সেরা। এসব চ্যালেঞ্জে কবারই বা জিতেছে টেস্টের বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে আরেকটি বিবর্ণ দিন। উইকেট-আনন্দে শুরু হওয়া দিনটাও শেষ পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার মত।

তিন সেশনে তিন উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত প্রতি সেশনে টেক্কা নিয়েছে নিজেদেরই। প্রথম সেশনে ৮৬, দ্বিতীয় সেশনে ১২০। শেষ সেশনে ১৫০! প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেটে ৩৫৬।

সেঞ্চুরি করে ফিরেছেন মুরালি বিজয়, হাতছাড়া করেছেন চেতেশ্বর পুজারা। সেঞ্চুরি করেও টিকে বিরাট কোহলি। সবশেষ ৫ টেস্টে বিজয়ের এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি। সবশেষ ৭ টেস্টে কোহলির চতুর্থ। থিতু হয়ে গেছেন অজিঙ্কা রাহানেও।

বিজয়-কোহলির মত একটা জায়গায় দারুণ ধারাবাহিক বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ড থেকে দেশে হয়ে এখন ভারত সফরেও বাংলাদেশের সঙ্গী বাজে ফিল্ডিং আর দৃষ্টিকটু শরীরী ভাষা। নতুন বলে তাসকিন আহমেদ আর কামরুল ইসলাম রাব্বি ছিলেন দারুণ। স্পিনে খারাপ করেননি তাইজুল ইসলাম। তবে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন বিবর্ণ। টার্ন করার দুর্ভাবনায়ই কিনা, শর্ট বল করেছেন প্রচুর। ভারতীয়রা ফায়দা নেবে না কেন!

অথচ ফায়দা নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং উইকেটে টস হারলেও প্রথম ওভারে মিলেছিল উপহার। তাসকিনের বাইরের বল আলসে শটে স্টাম্পে টেনে আনেন লোকেশ রাহুল।

দুই পেসার শুরুতে ভারতকে চেপেও ধরেছিলেন খানিকটা। বাধন আলগা করতেই হয়ত ষষ্ঠ ওভারে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে অনেক বাইরের বল তাড়া করেন পুজারা, ব্যাটের কানা থেকে প্রথম বাউন্ডারি পায় ভারত।

তবে খানিকপরই তাসকিন-রাব্বির শুরুর দম কমতে থাকে, বাংলাদেশের শরীরী ভাষা পড়তে থাকে, ফিল্ডিং হাজির হয় আপন চেহারায়। নবম ওভারে রাব্বির দুর্দান্ত এক লেট সুইং নিয়েছিল পুজারার ব্যাটের কানা। মুশফিকুর রহিমের ছিল ক্যাচ, তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন বল এক ড্রপে গেল প্রথম স্লিপে।

মিরাজের দ্বিতীয় ওভারে দুই বার স্লিপে সাকিবের পাশ দিয়ে গেল বল। জোর চেষ্টা করলে অন্তত একটি জমানো যেত। ভারতের বিপক্ষে লড়াই করতে হলে তো প্রায় সুযোগগুলোকে নিতে হবেই! বাংলাদেশ উল্টো নিতে পারেনি হাতে তুলে দেওয়া সুযোগও। প্রায় এক প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু রাব্বির থ্রোয়ে থাকল না জোর, নন-স্ট্রাইকপ্রান্তে সেই বলটিও হাতে নিতে পারলেন না মিরাজ। ৩৫ রানে বাঁচলেন বিজয়।

নিজে জাগলেন, বাংলাদেশকে ডোবালেন। দ্বিতীয় উইকেটে বিজয়-পুজারা জুটি ১৭৮ রানেই। এই মাঠের সবশেষ টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৭০ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। এবার সেই তুলনায় বাংলাদেশ ভাগ্যবানই! ৮৩ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন পুজারা। সহজ ক্যাচ কঠিন বানিয়ে নিয়েছেন মুশফিক।

কোহলিকে পেয়ে নার্ভাসনেস থেকেই কিনা, প্রথম বলটি মিরাজ করলেন শর্ট ও অনেক বাইরে। চার মেরে ছুটলেন কোহলি, আর থামাথামি নেই। আরেকপাশে বিজয় ছুটেছেন আপন গতিতে। নবম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ঠাণ্ডা মাথায়। সেঞ্চুরির পরপর অবশ্য উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন তাইজুলকে।

কোহলি ঠিক প্রতিপক্ষকে কিছু উপহার দেওয়ার ‘মুডে’ নেই। বরং উজ্জ্বল আপন আলোয়। যেন প্রতিদিনর মতোই এলাম, খেললাম, সেঞ্চুরি করলাম! দেখে মনে হয় ব্যাটিংয়ের চেয়ে সহজ কাজ আর নেই।

শুধু নিজে নন, কোহলি জিতেছেন উইকেটের আরেক প্রান্তেও। আগের টেস্টের ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান করুন নায়ারকে বাদ দিয়ে রাহানেকে ফিরিয়েছেন। রাহানে সেটির প্রতিদান দিচ্ছেন দারুণ জুটিতে। প্রথম দিন শেষে যে জুটির রান অবিচ্ছিন্ন ১২২।

৫৪ টেস্টে ১৬তম সেঞ্চুরি করে অপরাজিত কোহলি। নেতৃত্বের ২৩ টেস্টেই সেঞ্চুরি হলো ৯টি।

প্রথম দিনের উইকেটে মিরাজের অফ স্পিনে দেদার রান নিয়েছে ভারত। সাকিব খুব একাট কার্যকরী ছিলেন না। তবু প্রশ্ন জাগবে অভিজ্ঞতম বোলারকে মাত্র ১৩ ওভার করানোয়। সকালের পুনরাবৃত্তির আশায় শেষ বলায় নতুন বল নিয়েছিলেন মুশফিক। কোহলি-রাহানে চকচকে বলেই সেরেছেন ‘বিকেলের নাস্তা।’ শেষ ১০ ওভারে রান এসেছে টি-টোয়েন্টির গতিতে।

বাংলাদেশের শেষ বিকেলের স্বস্তি, দিনটা তো শেষ হলো! তবে স্বস্তির পিঠেই তো আছে শঙ্কা! দ্বিতীয় দিন সকালের সূর্য চোখ রাঙিয়ে বলবে, বড় স্কোর আসছে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩৫৬/৩ (রাহুল ২, বিজয় ১০৮, পুজারা ৮৩, কোহলি ১১১*, রাহানে ৪৫*, তাসকিন ১/৬৮, রাব্বি ০/৯১, সৌম্য ০/৪, মিরাজ ১/৯৩, সাকিব ০/৪৫, তাইজুল ১/৫০, সাব্বির ০/১০)।