দু প্লেসির দারুণ শতকে দ.আফ্রিকার জয়

সিরিজে প্রথম অর্ধশতক করলেন কুইন্টন ডি কক, ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম অর্ধশতক পেলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। দুই জনকে পেছনে ফেলে সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন ফাফ দু প্লেসি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে দলকে এনে দিলেন দারুণ জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2017, 08:09 PM
Updated : 7 Feb 2017, 08:09 PM

বিশাল রান তাড়ায় ২০১৩ সালের পর শতক হাঁকালেন উপুল থারাঙ্গা। অর্ধশতক এলো দুই তরুণ সান্দুন বিরাক্কডি ও নিরোশান ডিকভেলার ব্যাট থেকে। তবুও ফলে কোনো পরিবর্তন অসেনি। অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে হারের বৃত্তে বন্দি শ্রীলঙ্কা এবার লড়াই করলো।

মঙ্গলবার ৪০ রানের জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ এ ব্যবধানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

কেপ টাউনের নিউ ল্যান্ডসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ৩৬৭ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মাঠে ওয়ানডেতে এটাই সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল কেনিয়ার বিপক্ষে স্বাগতিকদেরই ৩৫৪/৩।

জবাবে ৪৮ ওভার ১ বলে ৩২৭ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ফল যা বলছে তার চেয়ে অনেক বেশি লড়াই করেছে অতিথিরা। যে লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা থারাঙ্গা।

চতুর্দশ শতক পাওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তরুণ ডিকভেলার সঙ্গে ১৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে লঙ্কানদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। ৪৭ বলে ৯টি চারে ৫৮ রান করা ডিকভেলাকে ফিরিয়ে ১৬.১ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস।

কুসল মেন্ডিসের সঙ্গে ৬৪ রানের আরেকটি জুটিতে দলের সংগ্রহ দুইশ’ পার করেন থারাঙ্গা। এরপরই ছোটোখাটো ধসে পড়ে অতিথিরা। ২৩ রানের মধ্যে মেন্ডিস, থারাঙ্গার সঙ্গে বিদায় নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও।

১১৯ রানের চমৎকার ইনিংস খেলা থারাঙ্গার ৯০ বলের ইনিংসটি ১১টি চার ও ৭টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডারদের ক্যাচ হাত ছাড়ার সুযোগ নিয়ে ৭৯ রানের দারুণ জুটিতে লঙ্কানদের আশা বাঁচিয়ে রাখেন বিরাক্কডি ও আসেলা গুনারত্নে। সিরিজে এর আগে একবারও দুইশ’ পর্যন্ত যেতে না পারা অতিথিরা জাগায় সাড়ে তিনশ’ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ার আশা।

কিন্তু শেষটায় ঘুরে দাঁড়িয়ে ১১ বল আগেই লঙ্কানদের গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। মাত্র ২০ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে আরেকটি হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ে অতিথিরা।

ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রান করা গুনারত্নেকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের প্রতিরোধ ভাঙেন কাগিসো রাবাদা। ওভারে তৃতীয়বারের মতো রিভার্স সুইপ করে ইমরান তাহিরকে চার হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন বিরাক্কডি। ৫১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় তিনি ৫৮ রান করে ফেরার পর অতিথিদের সংগ্রহ বেশিদূর যায়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ওয়েইন পার্নেল ৪ উইকেট নেন ৫৮ রানে। দুটি করে উইকেট নেন রাবাদা, প্রিটোরিয়াস ও তাহির। রাবাদা ছাড়া তাদের কেউই ওভার প্রতি ৬ এর নীচে রান দেননি।

এর আগে বোলারদের খানিকটা বিলাসিতা করার মতোই সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন সিরিজে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক পাওয়া দু প্লেসি। দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে আসা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ফিরেন ৫০তম ওভারে। তাকে ঘিরে গড়ে উঠে জুটি, একটু একটু করে রানের পাহাড়ে চড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পাওয়া দু প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে প্রয়োজন ছিল ৪ রান। ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়ার চেষ্টায় লং-অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার ১৪১ বলে খেলা ১৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি গড়া ১৬টি চার ও ৩টি ছক্কায়।

দু প্লেসির সঙ্গে একশ’ রানের জুটিতে ডি ককের অবদান ৫৫ রান। ৪৬ বলে এই রান করতে ৭টি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান তরুণ এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ম্যাচ সেরা দু প্লেসির সঙ্গে ১৩৭ রানে আরেকটি দারুণ জুটিতে ডি ভিলিয়ার্স খেলেন ৬২ বলে ৬৪ রানের কার্যকর ইনিংস।

নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি জেপি দুমিনি। দু প্লেসির সঙ্গে ৭৪ রানের জুটি উপহার দেওয়া ফারহান বেহারডিন অপরাজিত থাকেন ৩৬ রানে।

দু প্লেসির কাজটাই করতে পারেননি লঙ্কানদের কোনো ব্যাটসম্যানদের। বিশেষজ্ঞ কোনো একজন ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত থাকলে ম্যাচের চিত্রটা ভিন্ন হতেই পারতো। হারের বৃত্ত ভাঙার আরেকটি সুযোগ অতিথিদের আছে। আগামী শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৬৭/৫ (আমলা ১, ডি কক ৫৫, দু প্লেসি ১৮৫, ডি ভিলিয়ার্স ৬৪, দুমিনি ২০, বেহারডিন ৩৬*, পার্নেল ১*; কুলাসেকারা ০/৭৪, কুমারা ২/৭৩, মদুশঙ্কা ১/৬৯, ডি সিলভা ০/১৮, সান্দাকান ০/৬২, পাথিরানা ২/৫৫, গুনারত্নে ০/১৬)

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.১ ওভারে ৩২৭ (ডিকভেলা ৫৮, থারাঙ্গা ১১৯, মেন্ডিস ২৯, বিরাক্কডি ৫৮, ডি সিলভা ৫, গুনারত্নে ৩৮, কুলাসেকারা ১, পাথিরানা ১, মদুশঙ্কা ৬, কুমারা ১*, সান্দাকান ১; পার্নেল ৪/৫৮, প্রিটোরিয়াস ২/৫৫, দুমিনি ০/১২, রাবাদা ২/৫০, তাহির  ২/৭৬, শামছি ০/৬০, বেহারডিন ০/৯)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ফাফ দু প্লেসি।