বাউন্সি উইকেটে ধুঁকল বাংলাদেশ

ম্যাচের প্রথম বলটিই লাফিয়ে উঠল অনেকটা। পরের বলটিও। দিনজুড়ে এটিই হয়ে রইল নিয়মিত চিত্র। নিউ জিল্যান্ড ছেড়ে ভারতে এসেছে বাংলাদেশ দল, কিন্তু পিছু ছাড়েনি বাউন্স। বদলায়নি বাউন্স সামলানোর চিত্রও। ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিনে ধুঁকল বাংলাদেশের ব্যাটিং।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিসিকান্দারাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2017, 11:16 AM
Updated : 5 Feb 2017, 01:19 PM

সিকান্দারাবাদ জিমখানা মাঠের একেকটি উইকেটের রঙ একেকরকম। উইকেটের আচরণও। এই প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হলো ঘাসের ছোঁয়া থাকা শক্ত উইকেট। খুব গতিময় নয়, তবে বাউন্স মিলেছে অনেক। ভারত ‘এ’ দলের দুই বাঁহাতি পেসার চামা মিলিন্দ ও অনিকেত চৌধুরীকে সামলাতে হিমশিম খেলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। উইকেটে বল লাফিয়েছেন যেমন, একটু নীচুও হয়েছে মাঝেমধ্যে।

টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করেছে ৬৭ ওভারে ৮ উইকেটে ২২৪ রানে। পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন মাত্র দুজন।

নিউ জিল্যান্ডে শেষ টেস্টে দারুণ ব্যাটিংয়ের পর প্রস্তুতি ম্যাচেও হেসেছে সৌম্যর ব্যাট। ব্যাটিংয়ে ছিল সেই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। সম্ভাবনাময় ইনিংসটি বড় করতে পারেননি নিজের ভুলেই। অর্ধশতকের পরপর ফিরেছেন মুশফিকুর রহিমও। তবে চোট কাটিয়ে ফিরে তার রান পাওয়া ও ছন্দে থাকাই বড় খবর। আউটও হয়েছেন দারুণ এক ডেলিভারিতে।

টেস্ট একাদশের সম্ভাব্য দুই পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে এই ম্যাচে বিশ্রাম পেয়েছেন সাকিব। ব্যাটসম্যানদের অন্যরা হারিয়েছেন উইকেটে সময় কাটানোর সুযোগ।

শুরুটা যথারীতি ইমরুল কয়েসকে দিয়ে। পুরো লেগ সাইডে সীমানায় একজন ফিল্ডার থাকলেও তাকে খুঁজে বেরার করার বিরল এক ক্ষমতা গত কিছুদিনে দারুণ ভাবে রপ্ত করে ফেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার! চামা মিলিন্দের বাউন্সারে ইমরুলের হুক, লং লেগে একমাত্র ফিল্ডারকে জায়গা থেকে নড়তেও হয়নি ক্যাচ নিতে। ওয়েলিটংটন টেস্টে ঠিক এভাবেই টিম সাউদির বলে ধরা পড়েছিলেন লং লেগে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে।

দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন তামিম। স্কয়ার ড্রাইভে মারলেন আরেকটি। গত কিছুদিনের ধারাবাহিকতায় ভালো খেলতে খেলতেই আউট। স্টাম্পে টেনে আনলেন বাইরের বল।

সৌম্যর শুরুটা ছিল ব্যাটের কানায় লেগে চার দিয়ে। তবে এক বল পরই হার্দিক পান্ডিয়াকে চার মারলেন ফ্লিক করে। আত্মবিশ্বাসটাও বুঝি পেয়ে গেলেন। খেলতে থাকলেন চোখ জুড়ানো সব ফ্লিক আর ড্রাইভ। বাউন্স সামলেছেন দারুণ, সুযোগ পেলে করেছেন পুল। মিলিন্দ ও অনিকেতকে সামলাতে বাকিরা জেরবার হলেও সৌম্যর সমস্যা হয়নি একটুও।

পেস দাপটের সঙ্গে খেলে সৌম্য কাটা পড়লেন স্পিনে। বলা ভালো, স্পিন না করা বলে। এবার রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বাঁহাতি স্পিনার শাহবাজ নাদিমের জোরের ওপর করা সোজা বল পেছনের পায়ে খেলে এলবিডব্লিউ (৭৩ বলে ৫৬)।

সৌম্যর আগে-পরে ফিরেছেন মুমিনুল ও মাহমুদউল্লাহ। পাঁজরের চোটের অস্বস্তি না থাকলেও বাউন্সে ভুগেছেন মুমিনুল। অনিকেতের লাফানো বলেই ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। মাহমুদউল্লাহ আবারও থিতু হয়ে বড় করতে পারেননি ইনিংস।

১১৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন বিব্রতকর অবস্থায় দল। আরও একবার উদ্ধারকর্তা মুশফিক। মনেই হয়নি চোট থেকে ফিরেছেন বা দল বিপদে। শুরু থেকেই যেন ছিলেন থিতু! সঙ্গী সাব্বির শুরুতে ভুগেছেন। তবে টিকে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে খুঁজে পান ছন্দ। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের ৭১ রানের জুটিই যা একটু এগিয়ে নিয়েছে দলকে।

এই জুটি ভাঙার পর আবার মিনি ধস। বিজয় শঙ্করের মিডিয়াম পেসে এলবিডব্লিউ সাব্বির (৩৩)। অনিকেতের লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক। ৫৮ রানের চেয়ে বড় ব্যাপার অবশ্য তার ১৩৭ মিনিট উইকেটে কাটানো।

মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং নিয়ে হতাশার প্রহর দীর্ঘায়িত হয়েছে আরেকটু। ভেতরে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ প্রথম বলেই। বাইরে থেকে দেখে অবশ্য মনে হয়েছে, বলটি স্টাম্পের ওপর দিয়েও চলে যেতে পারত। লিটন দাস অবশ্য যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগিয়েছেন। দুই চার ও এক ছক্কায় ৩৫ বলে করেছেন অপরাজিত ২৩।

পেসারদের বিপক্ষে সুবিধে করতে না পারলেও একটা স্বস্তি থাকতে পারে। হায়দরাবাদ টেস্টে ভারতের সম্ভাব্য তৃতীয় স্পিনার জয়ন্ত যাদবকে দারুণ খেলেছে দল। টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবেই ব্যাটে-বলে আলো ছড়ানো অফ স্পিনারের ৯ ওভারে ৪১ রান নিয়েছে দল।

অসম বাউন্সে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিবর্ণ হলেও ভারত ‘এ’ দল পেয়েছে দারুণ শক্ত ভিত। ৫ বছর পর টেস্ট দলে ডাক পাওয়া অভিনব মুকুন্দ একাদশে জায়গার জোর দাবি জানাতে পারেননি। ‘এ’ দলের অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন শুভাশীষ রায়। স্লিপে ক্যাচটি যেমন নিয়েছেন ইমরুল, তেমনি ছেড়েছেনও। এবার রঞ্জি ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান করা (১ হাজার ৩১০) প্রিয়াঙ্ক কিরিত পাঞ্চাল ও শ্রেয়াস আইয়ার গড়েছেন ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

শফিউল, আবু জায়েদ বা মিরাজ, প্রথম দিনে বল হাতে সুবিধা করতে পারেননি। তবে দিন শেষে ব্যাটিংয়ের কাঁটাই বিঁধছে বেশি। টেস্টের উইকেট এরকম বাউন্সি হওয়ার সম্ভাবনা বা শঙ্কা সামান্যই। বাড়তি বাউন্স হয়ত তখন তাড়া করবে না বাংলাদেশ দলকে। তবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস বয়ে নেওয়ার সুযোগটা আবারও হারালো ব্যাটসম্যানরা। টেস্টে নামতে হবে তাই ব্যাটিং শঙ্কা মাথায় ও মনে রেখেই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৭ ওভারে ২২৪/৮ (ইনিংস ঘোষণা) (তামিম ১৩, ইমরুল ৪, সৌম্য ৫২, মুমিনুল ৫, মাহমুদউল্লাহ ২৩, মুশফিক ৫৮, সাব্বির ৩৩, লিটন ২৩*, মিরাজ ০, তাইজুল ৪*  মিলিন্দ ১/২৬, হার্দিক ০/২৯, অনিকেত ৪/২৬, বিজয় ১/৩২, জয়ন্ত ০/৪১, নাদিম্ ১/৩৮, কুলদিপ ১/৩২)।

ভারত ‘এ’ ১ম ইনিংস: ২১ ওভারে ৯১/১ (পাঞ্চাল ৪০*, মুকুন্দ ১৬, শ্রেয়াস ২৯*; শফিউল ০/১৭, আবু জায়েদ ০/২৫, শুভাশীষ ১/১১, মিরাজ ০/২৭, তাইজুল ০/৭)।