মাঠে ট্রেন্ট বোল্ট, গ্যালারিতে গর্বিত বাবা

ট্রেন্ট বোল্টের ফুল লেংথ বলে সাকিব আল হাসানের ড্রাইভ। বোলারের ঠিক সোজাসুজি পেছনে গ্যালারিতে যন্ত্রণার মতো ভঙ্গি করলেন একজন। চোখে মুথে তার বিরক্তির ছাপ, “এতো সামনে কেন? আরেকটু পেছনে পিচ করিয়ে বল বাইরে টেনে নেওয়া যায় না…!” প্রতিটি বলেই তার কিছু না কিছু বলার আছে। আলাপ জমতে সময় লাগল না। হুট করে নিজেই বললেন, “ইউ নো হোয়াট, আই অ্যাম হিজ ড্যাড…।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিক্রাইস্টচার্চ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2017, 02:55 AM
Updated : 20 Jan 2017, 12:24 PM

খানিকটা চমকে গিয়ে এবার ভদ্রলোকের দিকে আরেকবার তাকানোর পালা। গায়ে কালো পোলো শার্ট, চোখে সানগ্লাস, মুখে হাসি। গর্বিত কণ্ঠে বলছেন, “আমি ট্রেন্ট বোল্টের বাবা, ইয়ান বোল্ট।”

ছেলের খেলা থাকলে গ্যালারিতে বাবার উপস্থিতি নিয়মিতই। দেশের সব ম্যাচে থাকার চেষ্টা করেন, ছেলের খেলা দেখতে যান দেশের বাইরেও। এই সিরিজেই মাউন্ট মঙ্গানুইতে টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচে কোরি অ্যান্ডারসনের একটি ছক্কা গ্যালারিতে ক্যাচ নিয়েছেন এক দর্শক। মাঠের লাউড স্পিকারে তখন ঘোষণা করা হয়েছিল, গ্যালারিতে ক্যাচ নেওয়া দর্শক ট্রেন্ট বোল্টের বাবা। সেটি মনে করিয়ে দিতেই বেশ একটা ভাব নিয়ে এমন ভঙ্গি করলেন, যেন ‘এ আর এমন কী’!

“উসাইন বোল্টও কি আপনার পরিবারের কেউ?” সস্তা এই রসিকতায়ও হেসে উঠলেন হো হো করে, “নাহ, আমার আরেক ছেলেও ক্রিকেটার, জোনাথন। নর্দান ডিস্ট্রিক্টসের হয়ে খেলছে এখন।”

ট্রেন্টের চার বছরের বড় জোনাথন বোল্ট। বাবার হাত ধরেই বাড়ির আঙিনায় দুজনের ক্রিকেটে হাতেখড়ি। এসব ক্ষেত্রে সবার গল্পটা প্রায় যেমন হয়, বড় ভাই শুধু ব্যাট করতেন, ছোট ভাই বোলিং। ট্রেন্টের বোলার হওয়ার শুরু সেখানেই। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার জোনাথনের ক্যারিয়ার সেভাবে প্রস্ফুটিত হয়নি। ৩১ বছর বয়স, ঘরোয়া দলে জায়গা পেতেই লড়ছেন। ট্রেন্ট ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার, সময়ের সেরা সুইং বোলারদের একজন। লাল বল হোক বা সাদা, তার বোলিং দেখাই দারুণ বিনোদন।

বাবা ইয়া্ন নিজেও খেলেছেন ক্রিকেট। ক্লাব পর্যায়ের বেশি অবশ্য যেতে পারেননি। তবে দুই ছেলেকে নিয়েই গর্বের শেষ নেই।

“ওদের প্রথম কোচ আমিই। এখনও অনেক কথা হয় ক্রিকেট নিয়ে। টুকটাক পরামর্শ দেই। ট্রেন্ট অবশ্য ওর ভাইয়ের সঙ্গেই বেশি কথা বলে। বিশেষ করে, একটু খারাপ করলেই। জোনাথন ওর ভাইয়ের খেলাটা দারুণ বোঝে।”

এমনিতে তারা ওয়েলিংটনের, তবে বাবার কাজের সুবাদে দুই ভাইয়েরই জন্ম রোটোরুয়ায়। এখন পুরো পরিবারই থিতু তাওরাঙ্গায়। ক্রিকেট মৌসুমে অবশ্য বোল্টের ম্যাচের ভেন্যুগুলোই বাবার ঠিকানা। ঘুরে ঘুরে ছেলের খেলা দেখেন। “ইন্টারমিডিয়েটের পর থেকে ট্রেন্ট প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলা শুরু করে, ১২-১৩ বছর হবে। মাঠে নিয়ে যেতাম তখন। মালেয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গিয়েছিলাম ট্রেন্টের খেলা দেখতে। চেষ্টা করি যতটা পারা যায় ওর ম্যাচে মাঠে থাকতে। ট্রেন্ট যখন বোলিং রান আপে ছোটে, ও জানে যে বাবা ঠিকই মাঠে কোথাও না কোথাও আছে।”

ছেলের বোলিংয়ের গুণমুগ্ধ ভক্ত বাবা। ছেলের হাত থেকে বের হওয়া সুইং-শেপ দেখে মন ভরে যায়। পাশাপাশি ছেলের ক্রিকেট ভাবনাও মুগ্ধ করে বাবাকে।

“ট্রেন্ট সব সময়ই খুব ভালো বক্তা। ক্রিকেট খুব ভালো বোঝে, বলে। ক্রিকেট নিয়ে ওর চিন্তা ভাবনা দারুণ।”

শুধু আনন্দময় বোলিংয়ে নয়, ট্রেন্ট বোল্ট মাতিয়ে রাখেন ড্রেসিং রুম। বাড়িতেও বেশ মজার ছেলে। তবে বেশি পছন্দ করেন সৈকতে সময় কাটাতে। এজন্যই মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাড়ি কিনেছেন সৈকতের পাশে। মাছ ধরা, সার্ফিং করা তার প্রিয় শখ।

ছেলের সবকিছুই পছন্দ বাবার। শুধু একটি ব্যাপার ছাড়া, “ওর গাড়ি চালানো ভয়াবহ। আমার শখের গাড়িটা ওকে চালাতে দিয়েছিলাম জীবনে মাত্র দুবার, অনেক ভয়ে ছিলাম…।”

বাবা পছন্দ করেন না মমতা আর ভালোবাসার টানে, আসলে জোরে গাড়ি চালানোও বোল্টের সঙ্গে খুব মানিয়ে যায়। ফাস্ট বোলার যখন, ঝড় তো তুলতেই চাইবে, তা হাতে থাকুক বল কিংবা স্টিয়ারিং!