সবুজের আড়ালে রান হাসে

“এটা তো আপনার হোমগ্রাউন্ড?” প্রশ্নটা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তামিম ইকবাল। বুঝে উঠতে সময় নিলেন খানিকটা। রসিকতাটা ধরতে পেরে মুখে হাসি, “ওই যে দেখেন, মাঠের বাইরে হোটেলটা দেখা যায়, ওখানেই থাকতাম আমি…।” হ্যাঁ, এই বেসিন রিজার্ভ কিছুদিনের জন্য তামিমের ঘরের মাঠ ছিল!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি ওয়েলিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 04:42 AM
Updated : 11 Jan 2017, 10:21 AM

২০১২-১৩ মৌসুমে ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসের হয়ে নিউ জিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে খেলেছিলেন তামিম। ফায়ারবার্ডসের কোচ তখন জেমি সিডন্স। সাবেক বাংলাদেশ কোচ তার প্রিয় শিষ্যকে এনেছিলেন এখানে খেলাতে। এখানকার উইকেট-কন্ডিশন সম্পর্কে সবচেয়ে টাটকা ধারণা তাই তামিমেরই থাকার কথা।

তামিম অবশ্য সেটিকে মোটেও বড় করে দেখছেন না, “এখানে খেলেছি চার বছর হয়ে গেছে। তাছাড়া সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি। উইকেট তখন ফ্ল্যাট থাকে। টেস্টের ব্যাপার তো আলাদা।”

টেস্টের ব্যাপার আলাদা বলেই উইকেট নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আগের দিনও মাঠ থেকে আলাদা করা যাচ্ছিল না উইকেট। বুধবার বাংলাদেশ দল অনুশীলনে আসার পর সবার আগে মাঠে নামলেন আকরাম খান ও মিনহাজুল আবেদীন। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আর জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক সোজা চলে গেলেন উইকেটে। পেছনেই তামিম। মাঠ কর্মীদের একজন তখন ছেঁটে চলেছেন উইকেটের ঘাস। ছাটার পর যে অবস্থা হলো, তাতে এখন মাঠ থেকে কিছুটা আলাদা করে চেনা যায় উইকেট।

মাঠকর্মীর সঙ্গে অনেকটা সময় নিয়ে কথা বললেন তামিম। কি কথা হলো? পুরোটা খোলাসা করলেন না বাংলাদেশের ওপেনার, “একটু খোঁজখবর নিলাম কেমন আচরণ করতে পারে… বলা যাবে না!”

তামিম বলতে না চাইলেও সাম্প্রতিক ইতিহাস ঠিকই বলে দিচ্ছে এখানকার উইকেটের ধরন। সবুজের মায়া কেবল প্রথম এক-দেড় দিন। তার পর ওই মায়া কেবলই বিভ্রান্তি। বেসিন রিজার্ভের উইকেট নিয়ে বলা যায়, “সবুজ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার রান হাসে!”

উইকেটের ঘাস ম্যাচের সকালে ছাঁটা হবে আরও। তার পরও যথেষ্টই সবুজাভ থাকবে। তবে সেখানে পেসারদের রাজত্ব প্রথম এক-দেড় দিনেই। ঘাসটুকু মরে আসতেই ক্রমে উইকেট হতে থাকে ব্যাটিংবান্ধব। বল দারুণ ব্যাটে আসে। বাউন্সটা সামলাতে পারলে উইকেট হয় রানের খনি।

গত ৩ বছরে এই মাঠের তিনটি টেস্ট গড়িয়েছে একই ধারায়। টস জিতলেই বোলিং। প্রথম ইনিংসে পেসারদের দাপট। এরপর ব্যাটসম্যানদের রান উৎসব।

গত ফেব্রুয়ারিতে এখানে হয়েছে সবশেষ টেস্ট। টস জিতে নিউ জিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে কিউইরা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৮৩ রানে। প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়াও শুরুতে হারিয়েছিল দুই ওপেনারকে। পরে অ্যাডাস ভোজেসের ২৩৯ ও উসমান খাওয়াজার সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৫৬২ রান। নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে আগের চেয়ে ভালো ব্যাট করেও (৩২৭) হারে ইনিংস ব্যবধানে।

এর আগের টেস্টে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউ জিল্যান্ডকে। কিউইরা গুটিয়ে যায় ২২১ রানে। প্রথম দিনে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কাও। কিন্তু পরদিনই কুমার সাঙ্গাকারা করেন ডাবল সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কা তোলে ৩৫৬। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডও ব্যাট করে দুর্দান্ত। অপরাজিত ২৪২ করেন কেন উইলিয়ামসন, বিজে ওয়াটলিং ১৪২। দুজনে গড়েন রেকর্ড জুটি। ৫ উইকেটে ৫২৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতে নিউ জিল্যান্ড।

তার আগে টেস্টেও ছিল এই ধারা। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি, এবার ভারত টস জিতে নেয় বোলিং। ইশান্ত শর্মার ৬ উইকেট আর মোহাম্মদ শামির ৪ উইকেটে ১৯২ রানেই শেষ নিউ জিল্যান্ড। প্রথম দিন শুরুতে দ্রুত উইকেট হারানোর পর ভারতও শেষ পর্যন্ত তোলে ৪৩৮। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড গড়ে রানের পাহাড়। ইতিহাস গড়া ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। আবারও ওয়াটলিংয়ের সেঞ্চুরি, অভিষেকেই সেঞ্চুরি জিমি নিশাম। ৮ উইকেটে ৬৮০ তুলে ইনিংস ঘোষণা করেন কিউইরা। ম্যাচ ড্র।

এক মাঠকর্মী জানালেন, উইকেট এবার সবশেষ তিন টেস্টের চেয়ে একটু আলাদা। সামান্য নরম আছে ঘাসের নীচে। তবে সেটা খুব বড় কিছু হওয়ার কথা নয়। আগের মতোই হওয়ার কথা উইকেটের আচরণ।

বাংলাদেশের জন্য আরেকটা সুখবর, এখানে সবশেষ টেস্টেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন নাথান লায়ন। তার আগের টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কিউই অফ স্পিনার মার্ক ক্রেগ। মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলানো নিয়ে দোটানায় আছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সবশেষ দুই টেস্ট দেখলে ভাবনাটা সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। বাড়তি বাউন্স আছে, সোজা বল বেশ কার্যকর বলে স্পিনারদেরও এখানে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।

আরেকটা ব্যাপারও মাথায় রাখা জরুরি। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ হয়ে উঠলেও বাউন্সটা থাকবেই। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডে বাউন্স প্রায় সব মাঠেই থাকে, বেসিন রিজার্ভে বাউন্স একটু বেশিই। সেটুকু সামলাতে জানলে, সাইড শট ভালো খেলতে জানলে এই বাউন্স বরং ব্যাটিংয়ে সাহায্যই করে। আর সামলাতে না পারলে বিপদ!

তবে সব কিছুর আগে প্রথম দিন, প্রথম ইনিংস। প্রথম ইনিংসে বাজে করলেও ফেরার সুযোগ আছে, উদাহরণও আছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সেই মানসিক পরীক্ষার জায়গাটায় বাংলাদেশ পাশ নম্বর পায় না প্রায়ই!

মহাগুরুত্বপূর্ণ তাই টসটাও। প্রথম ইনিংসে এখানে ব্যাট করতে চায় না কোনো দলই; বাংলাদেশ তো অবশ্যই নয়!