রোমাঞ্চকর রান তাড়ায় পেরে উঠল না পাকিস্তান

ব্যাক অব লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল। আসাদ শফিকের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে উঠে গেল ওপরে। গালিতে ক্যাচটি নিয়েই ডেভিড ওয়ার্নার আবার বল উড়িয়ে দিলেন শূন্যে। যেন ছুঁড়ে দিলেন পাকিস্তানের জয়ের আশাকেও!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2016, 06:12 AM
Updated : 19 Dec 2016, 06:14 AM

অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় এক জয়ের পথে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন শফিক। কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত। মিচেল স্টার্কের আগুনে এক ডেলিভারিতে শেষ হলো শফিকের সাড়ে ৫ ঘণ্টার বীরোচিত লড়াই। বড় বাধা সরানোর পর শেষ উইকেটটি নিতে একদমই সময় নেয়নি অস্ট্রেলিয়া।

পাকিস্তান ছুটছিল ইতিহাস গড়ার হাতছানিতে। কিন্তু রোমাঞ্চকর রান তাড়ার ইতি ৫ বলের মধ্যে শেষ দুই উইকেট হারিয়ে। ৩৯ রানের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেছে ১-০ তে।

শেষ ইনিংসে ৪৯০ রান তাড়ায় পাকিস্তান অলআউট ৪৫০ রানে। চতুর্থ ইনিংসে এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেই চতুর্থ সর্বোচ্চ রান।

সেই ১৯৯৫ সালে সিডনিতে জয়ের পর এই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১০ টেস্ট হারল পাকিস্তান।

শেষ দিন শুরুর সময় পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০৮ রান, অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেট। ইয়াসির শাহকে নিয়ে অনায়াসেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন শফিক। একটি-দুটি রান, মাঝেমাঝেই চার আসছিল নিয়মিত। আগের দিনই সেঞ্চুরি করা শফিক তো বটেই, দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ইয়াসিরও।

পাকিস্তানের লক্ষ্য আস্তে আস্তে ষাট হয়ে পঞ্চাশের নিচে নামতেই ম্যাচে পড়ত থাকে উত্তেজনার পারদ। স্টিভেন স্মিথসহ অস্ট্রেলিয়ানদের চোখেমুখে শঙ্কার ছাপ ছিল স্পষ্ট। এক পর্যায়ে দুই মূল বোলার স্টার্ক ও জস হেইজেলউডকে নতুন স্পেলে আনতে বাধ্য হন স্মিথ।

সেই স্টার্কই করে দেন কাজের কাজ। দুর্দান্ত ওই ডেলিভারিতে শফিককে ফিরিয়ে ভাঙেন ৭১ রানের নবম উইকেট জুটি। ৩৩৪ মিনিটে ১৩৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেও শফিক ফিরলেন আরও বড় কিছু করতে না পারার হতাশায়।  

ওই ওভারেই সরাসরি থ্রোয়ে ইয়াসিরকে (৩৩) রান আউট করে দেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ানদের বাধনহারা উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল, হারের শঙ্কা তাদের পেয়ে বসেছিল যথেষ্টই!

অথচ এক সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২২০ রানে পাকিস্তান হারিয়েছিল ৬ উইকেট। কিন্তু বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়ান শফিক, পাশে পান লেজের ব্যাটসম্যানদের। সপ্তম উইকেটে মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে গড়েন ৯১ রানের জুটি, অষ্টম উইকেটে ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে ৬৬, নবম উইকেটে ইয়াসিরের সঙ্গে ৭১।

শেষ পর্যন্ত শফিক পারলেন না বলেই পারল না পাকিস্তান। বড় লক্ষ্য দিয়েও আরও একবার হারের বিব্রতকর স্বাদ থেকে রক্ষা পেল অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচ হারলেও প্রথম টেস্টের সেরার পুরষ্কার উঠেছে শফিকের হাতে। তার ইনিংসটির বিশালত্ব ফুটে ওঠে তাতেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪২৯

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪২

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২০২/৫ (ডি.)

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৪৫ ওভারে ৪৫০ (লক্ষ্য ৪৯০, আগের দিন শেষে ৩৮২/৮) (শফিক ১৩৭, ইয়াসির ৩৩, রাহাত ১; স্টার্ক ৪/১১৯, হেইজেলউড ০/৯৯, বার্ড ৩/১১০, লায়ন ২/১০৮, ম্যাডিনসন ০/৯)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩৯ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আসাদ শফিক।