একই উদযাপন দেখা গেছে ম্যাচের প্রথম ভাগেও। তখন পোজ দিয়েছেন কেসরিক উইলিয়ামস। আর সতীর্থদের নিয়ে কাল্পনিক ছবি তুলেছেন স্যামি। উদযাপনের মতো ম্যাচের নায়কও এই দুজনই। দুই ক্যারিবিয়ানের অসাধারণ পারফরম্যান্সে চিটাগং ভাইকিংসকে বিদায় করে রাজশাহী কিংস উঠেছে কোয়ালিফায়ারে।
বিপিএলের এলিমিনেটরে চিটাগংকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রাজশাহী। ১৪২ রান তাড়ায় স্যামির দল জিতে যায় ৯ বল বাকি থাকতে।
বড় স্কোরের পথে থাকা চিটাগংকে মাঝারি স্কোরে আটকে রাখে উইলিয়ামসের দুর্দান্ত বোলিং। সেই রান তাড়ায়ও হারের দ্বারপ্রান্তে থাকা রাজশাহীকে অসাধারণ ইনিংসে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন স্যামি।
রান তাড়ায় ইনিংসের অর্ধেক শেষেও ধুঁকছিল রাজশাহী। শুরুটায় উইকেটের দুই প্রান্তে ছিল দুই চিত্র। এক পাশে রান করেছেন নুরুল হাসান, আরেক পাশে উইকেট পড়েছে নিয়মিত।
শুভাশীষকে পুল করে গিয়ে আউট হয়েছেন মুমিনুল হক। নিজের আসল ভূমিকায় প্রথম সুযোগেই ব্যর্থ আফিফ হোসেন। প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে।
একবার জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সাব্বির। সামিত প্যাটেল ও জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনও গা ভাসিয়েছেন সেই স্রোতে।
ভরসা হয়ে ছিলেন নুরুল। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন দুর্দান্ত এক দলীয় ক্যাচে (২৮ বলে ৩৪)। লং অফ দিয়ে ছক্কা হতে যাওয়া বল দারুণ দক্ষতায় ভেতরে ঠেলেন শোয়েব মালিক, লং অন থেকে ছুটে আসা জহুরুল সেটি জমান হাতে!
১১ ওভার শেষে রাজশাহীর রান ৬ উইকটে ৫৭। চিটাগংয়ের জয় মনে হচ্ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। স্যামির মনে ছিল অন্য ভাবনা। উইকেটে গিয়েই টানা তিন চার মোহাম্মদ নবিকে। সাকলাইন সজীবকে আছড়ে ফেললেন সাইটস্ক্রিনে। তাসকিনকে কাট করে বাউন্ডারি গুলির বেগে।
তার পরও ম্যাচ দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। শুভাশীষের তিন বলেই সেটি হেলে পড়ল রাজশাহীর দিকে। লেগ সাইডে সীমানায় তিন ফিল্ডার নিয়ে শুভাশীষ বোলিং করে গেলেন অফ স্টাম্পের বাইরে। স্যামির হ্যাটট্রিক চারে সহজ হলো সমীকরণ।
পরে নবিকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে অর্ধশতক ছুঁলেন ২৩ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানে। শেষ দিকে দারুণ সঙ্গ দিলেন ফরহাদ রেজা (১১ বলে ১৯*)। জয়ের পর ছুটে গিয়ে রাজশাহীর সহ-অধিনায়কও উদযাপনে দাঁড়ালেন অধিনায়কের পাশে।
অথচ দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও গেইলের জুটিতে বড় স্কোর দেখছিল চিটাগং। ৫ ছক্কায় ৪৪ রান করেন গেইল। ৫০ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন দুজন। দলের পথ হারানোর শুরু এই দুজনের বিদায়েই।
একাদশে ফেরা ডোয়াইন স্মিথকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম। তবে ক্রিস গেইলকে আসতে হয় দ্রুতই। পুরো ক্যারিবিয়ান সমন্বয়ে ফেরেন স্মিথ। সেন্ট ভিনসেন্টের উইলিয়ামসের বলে স্লিপে বারবাডোজের স্মিথের ক্যাচ নেন সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি।
উইলিয়ামস শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি উপহার দেন গেইলকেও। স্পিন আসতেই স্বরূপে গেইল। মেহেদী হাসান মিরাজকে পরপর দুই বলে ছক্কা মারেন লং অন ও লং অফ দিয়ে। পরের ওভারে জোড়া ছক্কায় ওড়ান অভিষেক ম্যাচের বিস্ময় আফিফ হোসেনকে।
শুরুর অস্বস্তিটকু ঝেড়ে তখন ছন্দে ফিরেছেন তামিমও। ড্যারেন স্যামিকে এক ওভারে তিনটি চার মারেন দুজন। ১০ ওভারে চিটাগংয়ের রান ১ উইকেটে ৭৫।
জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনকে বিশাল এক ছক্কায় স্বাগত জানান গেইল। ওই ওভারেই ছন্দপতনের শুরু। নিরীহ এক ফুলটসে টাইমিংয়ের গড়বড়ে লং অনে ফরহাদ রেজার হাতে ধরা পড়েন গেইল (২৯ বলে ৪৪)।
ফরহাদ পরে বল হাতেও ফিরিয়ে দেন শোয়েব মালিক ও এনামুল হককে। এর মাঝেই তামিম স্পর্শ করেন অর্ধশতক, এবারের বিপিএলে যেটি তার ষষ্ঠ। স্পর্শ করলেন বিপিএলের এক আসরে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতকের রেকর্ড।
একের পর এক উইকেটের মত উইলিয়ামস ও রাজশাহী মাতিয়েছে উদযাপনেও। উইলিয়মাসের ‘সেলফি’ তোলার চেনা উদযাপন তো ছিলই। সেটিকে নতুন মাত্রা দেন স্যামি। দলের সবাই মিলে কাল্পনিক ক্যামেরায় ছবি তোলা, আবার সবাই মিলে উইলিয়ামসের ছবি তোলা, ভিডিও করা… সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স আর উদযাপনে রাজশাহী জুগিয়েছে দারুণ বিনোদন।
শেষ উদযাপন দেখা গেল ম্যাচ শেষেও। রাজশাহী ভাসল জয়ের আনন্দে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (তামিম ৫১, স্মিথ ০, গেইল ৪৪ , মালিক ১৪, এনামুল ১১, নবি ৫, জহুরুল ১১*, রাজ্জাক ০, তাসকিন ০, সাকলাইন ১*; উইলিয়ামস ৪/১১, মিরাজ ০/৩৬, আফিফ ০/২৫, স্যামি ০/২০, ফরহাদ ২/২৬, ফ্র্যাঙ্কলিন ১/৮, নাজমুল ০/১৬)।
রাজশাহী কিংস: ১৮.৩ ওভারে ১৪৩/৭ (মুমিনুল ৪, নুরুল ৩৪, আফিফ ০, সাব্বির ১১, প্যাটেল ৫, ফ্র্যাঙ্কলিন ২, স্যামি ৫৫*, মিরাজ ১০, ফরহাদ ১৯*; রাজ্জাক ১/১৭, শুভাশীষ ২/২৮, স্মিথ ০/১৩, তাসকিন ০/৩১, সাকলাইন ২/২৪, নবি ১/৩০)।
ফল: রাজশাহী কিংস ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ড্যারেন স্যামি