আফিফ চমকে রাজশাহীর সহজ জয়

টপ অর্ডারের সমাধান পেতে সবশেষ যুব দলের সহ-অধিনায়ককে বেছে নিয়েছিল রাজশাহী কিংস। তবে আফিফ হোসেন চমকে দিলেন তার অফ স্পিন দিয়ে। ক্রিস গেইল-জহুরুল ইসলামদের ফিরিয়ে দিয়ে তিনিই উড়তে দিলেন না চিটাগং ভাইকিংসকে। ছোট লক্ষ্য পেয়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সহজেই জিতল ড্যারেন স্যামির দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 01:53 PM
Updated : 3 Dec 2016, 03:46 PM

৬ উইকেটের জয়ের পর তিন নম্বরে উঠে এসেছে রাজশাহী। সমান ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরেই রয়েছে এক পর্যায়ে টানা ৫ জয় পাওয়া চিটাগং।

চিটাগংয়ের রান রেট +০.২৩৩, রাজশাহীর +০.২০৮। সমান ১২ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে থাকা রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইটানসের এখনও একটি করে ম্যাচ বাকি। দুই দলই নিজেদের ম্যাচ জিতলে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাবে স্যামিদের।    

আফিফের দারুণ বোলিংয়ে চিটাগংয়ের শতরান করা নিয়েই শঙ্কা জাগে। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দারুণ এক অর্ধশতকে দলকে ৯ উইকেটে ১১১ রানের সংগ্রহ এনে দেন শোয়েব মালিক। জবাবে ১৩ ওভার ৫ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রাজশাহী।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি রাজশাহীর। অষ্টম ওভারে ৩৭ রানের মধ্যে ফিরে যান দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। নুরুল হাসান ও মুমিনুল হক বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন সজীবের বলে। দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান।

রান রেটের কথা মাথায় রেখে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে চার-পাঁচ নম্বরে উঠে আসেন ফ্র্যাঙ্কলিন-স্যামি। নিউ জিল্যান্ডের অলরাউন্ডার খুনে মেজাজে ব্যাট করলেও সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক। সীমনায় ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান স্যামি।

তাসকিন আহমেদের করা চতুর্দশ ওভারটি দুই দলের জন্যই ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিটাগংয়ের চেয়ে এগিয়ে যেতে তিন বলের মধ্যে শেষ ১১ রান তুলে নিতে চেয়েছিল রাজশাহী। হিসাবটা জানা ছিল তামিমেরও। তিনি সেভাবেই ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন।

তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ে প্রথম তিন বলে তিন রানের বেশি নিতে পারেননি ফ্র্যাঙ্কলিন ও সামিত প্যাটেল। পরের দুই বলে ভাগ্যপ্রসুত দুটি চার এলেও ততক্ষণে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যায় চিটাগং। জিতেও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রাজশাহীকে।   

মাত্র ২৭ বলে অপরাজিত ৬৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন ফ্র্যাঙ্কলিন। এই অলরাউন্ডারের খুনে ইনিংসটি গড়া ৪টি ছক্কা ও ৫টি চারে।

এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি চিটাগংয়ের। টানা তিন অর্ধশতক পাওয়া তামিমকে প্রথম বলেই বিদায় করেন দলে ফেরা কেসরিক উইলিয়ামস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসারের বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন চিটাগং অধিনায়ক।

চার হাঁকিয়ে শুরু করা এনামুল হক ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজের পরের ওভারে বোল্ড হয়ে।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আফিফ অফ স্পিনটাও নিয়মিত করেন। তার আইডল মিরাজ, তবে বোলিং অ্যাকশন আরেক অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের সঙ্গেই মিলে বেশি। চট্টগ্রাম পর্ব থেকে দলের সঙ্গে আছেন আফিফ। এই তরুণকে বাঁচা-মরার ম্যাচে নামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সফল সরওয়ার ইমরানের দল। 

আফিফ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের প্রথম দুই বলেই চার হজম করেন। তৃতীয় বলে পান জহুরুলের উইকেট। অবশ্য বল ব্যাটের কানায় লাগার পরও আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেন চিটাগংয়ের মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে। এই উইকেটই পাল্টে দেয় খেলার চিত্র।

খুলনার ছেলে আফিফের পরের শিকারটা আরও বড়। জ্যামাইকান ব্যাটিং দানব গেইলকে বোল্ড করেন এই তরুণ। তিন ওভারের স্পেলের শেষটায় জাকির হাসানকে বিদায় করেন আফিফ। অনেকটা দৌড়ে বল তালুবন্দি করা সাব্বিরেরও রয়েছে বড় অবদান।

ত্রয়োদশ ওভারে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর আফিফ। এই অফ স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন সাকলাইন। ইমরান খানকে ফিরিয়ে নেন পাঁচ উইকেটে। উইকেট-মেডেন নেওয়া সেই ওভারের শেষ বলে জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যান তাসকিন।

বিপিএলে প্রথম স্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখানো আফিফের বোলিং ফিগার ৪-১-২৫-৫।

প্রায় একার লড়াইয়ে দলকে তিন অঙ্কের রানে নিয়ে যান মালিক। শেষ পর্যন্ত ৬৭ রানে অপরাজিত থাকা পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডারের ৫৪ বলের চমৎকার ইনিংসটি ৬টি চার ও তিনটি ছক্কায় গড়া। 

মালিকের ঝড়টা গেছে ফরহাদ রেজার ওপর দিয়ে। এই পেসার ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার উইলিয়ামস ১১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন মিরাজ ও নাজমুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১১১/৯ (তামিম ০, গেইল ৫, এনামুল ৮, জহুরুল ১৩, মালিক ৬৭*, জাকির ৩, নবি ১২, সাকলাইন ১, ইমরান ০, তাসকিন ২, শুভাশীষ ০*; উইলিয়ামস ২/১১, মিরাজ ১/১৫, আফিফ ৫/২১, রেজা ০/৩৬, নাজমুল ১/২৩, প্যাটেল ০/৫)

রাজশাহী কিংস: ১৩.৫ ওভারে ১১২/৪ (নুরুল ১২, মুমিনুল ২১, সাব্বির ৮, ফ্র্যাঙ্কলিন ৬৩*, স্যামি ৩, সামিত ৩*; নবি ০/৩০, মালিক ০/৯, সাকলাইন ২/৯, ইমরান ২/৩০, তাসকিন ০/৩৪)

ফল: রাজশাহী কিংস ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আফিফ হাসান।