অভিষেকেই ৫ উইকেটে রেকর্ডের পাতায় আফিফ

রূপকথা বুঝি একেই বলে! এই বিপিএলের খেলোয়াড় তালিকায় তার নাম ছিল না। থাকার কথাও নয়। মাত্র তো খেলছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। যুব দলের হয়ে অনুশীলন আর প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্সেই তাকে দলে নিয়েছিল রাজশাহী কিংস। সেই আফিফ হোসেন প্রথম ম্যাচেই জায়গা করে নিলেন রেকর্ডের পাতায়!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 01:18 PM
Updated : 3 Dec 2016, 03:02 PM

বিপিএলে রাজশাহী কিংসের টিকে থাকার ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন আফিফ। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এই ১৭ বছর ৭২ দিন বয়সী ক্রিকেটারের। আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের লাহোর লায়ন্সের বাঁহাতি পেসার জিয়া-উল-হকের। ১৭ বছর ১০৯ দিন বয়সে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন তিনি।

এই প্রথম টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৫ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের কোনো বোলার। ৪ ওভারে ২১ রানে আফিফ নিয়েছেন ৫ উইকেট। যার মধ্যে আছে ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলের উইকেটও।

বল হাতে সাড়া জাগালেন, অথচ আফিফ মূলত ব্যাটসম্যান। এই মাসেই অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক। বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। পছন্দ করেন শট খেলতে। সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। বিকেএসপি ও বয়সভিত্তিক দলের কোচরা তার ব্যাটিংয়ের ধরন ও মানসিকতায় দেখেন তামিম ইকবালের ছায়া।

সেই ব্যাটসম্যানই অভিষেকে আলো ছড়ালেন বোলিংয়ে। বিস্ময়ের শেষ নয় এখানেই। মাত্র মাস তিনেক আগেও তার বোলিং অ্যাকশন ছিল অবৈধ। অ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ার পর সেটি নিয়ে কাজ করে বিসিবির পরীক্ষায় উতরে তবেই বোলিংয়ের অনুমতি পেয়েছেন।

রাজশাহী কিংসের টিম ম্যানেজমেন্টের নজর কেড়েছিলেন তিনি ব্যাটিং দিয়েই। এশিয়া কাপের জন্য বিকেএসপি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রস্তুতি ম্যাচে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। তিন প্রস্তুতি ম্যাচের একটিতে দেড়শ রান করেছিলেন, পরেরটিতে সেঞ্চুরি। আরেকটিতেও খেলেছিলেন বড় ইনিংস। তাকে দলে নিয়ে নেয় কিংস।

খেলার সুযোগ মিলছিল না, সেটি এল প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে। বল হাতে পেয়ে গেলেন পাওয়ার প্লের মধ্যেই। মেহেদী হাসন মিরাজ ভালোই আটকে রেখেছিলেন ক্রিস গেইলকে। পঞ্চম ওভারে ড্যারেন স্যামি বোলিংয়ে আনলেন আফিফকে।

শুরুতে স্ট্রাইকে জহুরুল ইসলাম। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান প্রথম দুই বলেই চার মেরে তরুণ ক্রিকেটারকে স্বাগত জানালেন সিনিয়র ক্রিকেটে। তৃতীয় বলেই সাফল্য। যদিও সেটিতে ভাগ্যের অবদানই বেশি। আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ জহুরুল।

আফিফ থামতে চাননি সেখানেই। পরের ওভারেই ঝুলিয়ে দেওয়া বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড গেইল। তৃতীয় ওভারে জাকির হাসানকে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেট। শেষ ওভারে আরও দুটি নিয়ে রেকর্ডে পাতায়!

আফিফের আগে অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৭ জন বোলার। আফিফের চেয়ে ভালো বোলিং আছে ৬ জনের। অভিষেকে ৬ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার মাইকেল ডাইটন। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে তাসমানিয়ার হয়ে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। আফিফের মতো ডাইটনও ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান।

এই টুর্নামেন্ট শেষেই যুব এশিয়া কাপ খেলতে যাবেন আফিফ। শ্রীলঙ্কায় টুর্নামেন্টটি হবে ১৩ ডিসেম্বর। তবে যুবাদের ক্রিকেটে খেলতে যাওয়ার আগেই বড়দের ক্রিকেটে গড়লেন বড় কীর্তি!