এসেই ব্যাটিং তাণ্ডবে ঢাকার নায়ক লুইস

মাত্রই জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে ১২২ বলে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে এসেছেন। গত বিপিএলেও ছিলেন একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। এবার প্রথম ম্যাচেই জাগিয়েছিলেন আরেকটি সেঞ্চুরির সম্ভাবনা। সেটি পারেননি, তবে খুনে ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়েছেন ঠিকই। এসেই ঢাকা ডায়নামাইটসের দারুণ জয়ের নায়ক এভিন লুইস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2016, 09:15 AM
Updated : 30 Nov 2016, 11:49 AM

বিপিএলে রংপুর রাইডার্সকে ৪২ রানে হারিয়ে শীর্ষস্থান সংহত করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। ৩৪ বলে ৭৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন লুইস। মেহেদী মারুফ ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটেও ছিল রান। ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করে ১৮৮। সেই রানের চাপ নিতে পারেনি রংপুর। সপ্তম উইকেটে জিয়াউর রহমান ও সোহাগ গাজীর দারুণ একটি জুটির পরও তুলতে পেরেছে ১৪৬ রান।

মারুফের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৯ বলে ১০৩ রান এনে দেন লুইস। এক সময় মনে হচ্ছিল ঢাকার রান পেরিয়ে যাবে দুইশ। রংপুরের অনিয়িমিত বোলার সৌম্য সরকার ও জিয়ার বোলিংয়ে মাঝে দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে কমে যায় রানের গতি। তবে দারুণ শুরুর  কারণে রানটা ঠিকই হয় হৃষ্টপুষ্ট।

জবাবে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিব্রতকর হারের শঙ্কায় ছিল রংপুর। জিয়া ও সোহাগের ৫৪ বলে ৮৭ রানের জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কমেছে।

বড় রান তাড়ায় শুরুতে ঝড় তুলতে রংপুর ওপেনিংয়ে পাঠিয়েছিল শহিদ আফ্রিদিকে। কিন্তু দলের প্রত্যাশার বেলুন ফুটো করতে আফ্রিদি সময় নেননি একটুও। প্রায় ৫ বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে নেমে আউট হয়েছেন দুই বলে শূন্য করে।

সেটা ছিল কেবলই শুরু। আবু জায়েদ ও সাকিবের বোলিংয়ে একের পর এক ব্যাটসম্যান সামিল হন আসা-যাওয়ার মিছিলে। টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় এ দিন একটু লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান জিয়া ও সোহাগ।

অনেক দিন থেকেই নিজেকে হারিয়ে খোঁজা জিয়া অবশেষে ফিরেছেন আপন চেহারায়। সোহাগ ব্যাট হাতে টুকটাক রানে ছিলেনই। লেগ স্পিনার সিকুগে প্রসন্নর এক ওভারে দুজন নেন ২৩ রান।

৪ ওভারে ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া সাকিবের স্পেল তখন শেষ। বাকি বোলারদের ওপর ভালোই তোপ চালান জিয়া-সোহাগ। শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ৩৬ করে আউট হন সোহাগ।

জিয়া করেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম অর্ধশতক। শেষ বলে বোল্ড হওয়া অলরাউন্ডার ৬০ করেছেন ৪৩ বলে। রংপুরের হারের ব্যবধান তাতে কমেছে অনেকটা।

চোটের কারণে এই ম্যাচেও রংপুর পায়নি নাঈম ইসলামকে, নেতৃত্ব দেন আরাফাত সানি। কুমার সাঙ্গাকারাকে বসিয়ে ঢাকা একাদশে আনে লুইসকে। চোট কাটিয়ে ফেরা আন্দ্রে রাসেলও জায়গা পান একাদশে।

রুবেল হোসেনের করা ইনিংসে প্রথম ওভারে রান এসেছিল একটি। সেটি যেন ছিল ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি। দ্বিতীয় ওভারে মুক্তার আলিকে দুটি চার মারেন মারুফ। পরের ওভারে সোহাগ গাজীকে চার ও ছক্কায় শুরু করেন লুইস।

সময়ের সঙ্গে তীব্র থেকে তীব্রতর হয় ঝড়। আফ্রিদিকে চার-ছক্কায় স্বাগত জানান লুইস। সোহাগ গাজীকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ওড়ানোর পরের বলেই ছক্কা স্কয়ার লেগ দিয়ে।

আফ্রিদি তুলোধুনো হন পরের ওভারেও। স্লগ সুইপে উড়িয়ে দেন লুইস। মারুফ তখনও পর্যন্ত ছিলেন অনেকটা দর্শক। সিদ্ধান্ত নিলেন বুঝি ছক্কা উৎসবে সামিল হওয়ার। বেরিয়ে এসে আফ্রিদিকে আছড়ে ফেললেন সাইটস্ক্রিনে। ওই ওভারেই শেষ বলে আরেকটি ছক্কায় লুইস স্পর্শ করলেন অর্ধশতক, মাত্র ২১ বলে।

আরাফাত সানিকে প্রথম বলেই মাথার ওপর দিয়ে ওড়ালেন মারুফ। লিয়াম ডসনের প্রথম ওভারেও দুজনের ব্যাট থেকে দুটি ছক্কা। ৯ ওভারেই ঢাকা পেরিয়ে যায় শতরান।

দিশাহারা রংপুর অধিনায়ক বল তুলে দেন সৌম্য সরকারকে। টুর্নামেন্টে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন সৌম্যই। হাঁটু গেড়ে মারতে গিয়ে এলবিডব্লিউ মারুফ (৩১ বলে ৪০)।

প্রথম উইকেটের হাত ধরে আসে আরও তিনটি উইকেট। সৌম্যর সাফল্যেই হয়ত আরেক স্লো মিডিয়াম পেসার জিয়াউর রহমানকে বোলিংয়ে আনেন সানি। প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন তিনি প্রমোশন পাওয়া সিকুগে প্রসন্নকে। পরে বিপজ্জনক আন্দ্রে রাসেলকেও ফেরান জিয়া।

মারুফের পর লুইসকেও ফিরিয়েছেন সৌম্য। ৮ ছক্কায় ৭৫ করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ধরা পড়েছেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে।

২৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে একটু কমে যায় রানের গতি। আবার জোয়ার আসে সাকিবের ব্যাটে। ২০ বলে ২৯ করেন সাকিব। ৯ বলে অপরাজিত ১৪ মোসাদ্দেক হোসেন। ঢাকা ওঠে রান পাহাড়ে।

পরে জিয়া ও সোহাগ মান বাঁচিয়েছেন রংপুরের, কিন্তু ম্যাচ বাঁচানোর জো ছিল না!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৮৮/৭ (মারুফ ৪০, লুইস ৭৬, প্রসন্ন ১, রাসেল ৮, সাকিব ২৯, ব্রাভো ১৬, মোসাদ্দেক ১৪*, নাসির ৩, সানজামুল ০*; রুবেল ৩/২৫, মুক্তার ০/৯, সোহাগ ০/২৫, আফ্রিদি ০/৪০, সানি ০/১০, ডসন ০/২৯, সৌম্য ২/২৭, জিয়াউর ২/২২)।

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৪৬/৮ (জামশেদ ২১, আফ্রিদি ০, মিঠুন ১, রূপাসিংহে ৮, ডসন ১১, জিয়াউর ৬০, সৌম্য ১, সোহাগ ৩৬, মুক্তার ৪*; আবু জায়েদ ৩/২০, রাসেল ০/৩৩, ব্রাভো ১/৪৩, সাকিব ২/১১, মোসাদ্দেক ০/৯, প্রসন্ন ১/২৮)।

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৪২ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এভিন লুইস