তামিমের ব্যাটে চিটাগংয়ের প্রতিশোধ

ঝড় তোলার আগে ফিরে গেলেন ক্রিস গেইল। এনামুল হক, শোয়েব মালিকরাও ফিরলেন দ্রুত। তবুও জয় পেতে সমস্যা হল না চিটাগং ভাইকিংসের। তামিম ইকবালের অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে খুলনা টাইটানসকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে তারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2016, 01:41 PM
Updated : 29 Nov 2016, 03:45 PM

দুই দলের প্রথম দেখায় শেষ ওভারে তালগোল পাকিয়ে ৪ রানে হেরেছিল চিটাগং।

১০ ম্যাচে টানা পঞ্চম জয়ে চিটাগংয়ের পয়েন্ট ১২। একই পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে শীর্ষে রয়েছে এক ম্যাচ কম খেলা ঢাকা ডায়নামাইটস। সমান পয়েন্ট নিয়েই রান রেটে পিছিয়ে তিন নম্বরে খুলনা।

অনুজ্জল শুরু ও বিবর্ণ শেষের মাঝে মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ১৩১ রান করেছিল খুলনা। চলতি আসরে তামিমের চতুর্থ অর্ধশতকের ওপর ভর দিয়ে ১৮ ওভার ৪ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় চিটাগং।

লক্ষ্য তাড়ায় চিটাগংয়ের শুরুটা ছিল উড়ন্ত। প্রথম চার ওভারে ৩৯ রান সংগ্রহ করেন তামিম-গেইল। বোলিংয়ে এসেই বিপজ্জনক উদ্বোধনী ভাঙেন শুভাগত হোম চৌধুরী। এই অফ স্পিনারকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান গেইল। ১১ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ১৯ রান করেন বিপিএল তিনটি শতকের মালিক।

দ্রুত ফিরে যান এনামুল হক, শোয়েব মালিক ও জাকির হাসান। রান আউট হন এনামুল-মালিক। মোশাররফ হোসেনের বলে ক্যাচ দেন জাকির। তিন ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

চিটাগংয়ের পরিস্থিতি হতে পারতো আরও খারাপ। শফিউল ইসলামের বল আকাশে তুলে দিয়েও বেঁচে যান তামিম।

২৪ রানে জীবন পাওয়া তামিমকে কিছুটা সঙ্গ দেন জহুরুল ইসলাম (১৮ বলে ২২)। দলের সংগ্রহ তিন অঙ্ক ছুঁতেই ফিরে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তবে মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে বাকিটুকু সহজেই সারেন তামিম।

দলকে টানা পঞ্চম জয় এনে দিতে ৬৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেন তামিম। অধিনায়কের ৫৯ বলের ইনিংসটি গড়া ৮টি চার ও একটা ছক্কায়। ৮ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন নবি।

খুলনার ফিল্ডিং ছিল সাধারণ মানের। কোনো হাফ চান্স এদিন কাজে লাগাতে পারেনি তারা। নবিকেও একবার জীবন দেন শুভাগত। কেভন কুপার আঁটসাঁট বোলিং করলেও অন্য কারোর কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাননি। 

টপ অর্ডার নিয়ে দুর্ভাবনা এখনও কাটেনি খুলনার। একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। কিন্তু সমাধান মেলেনি টুর্নামেন্টের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেও।

বিপিএলের চলতি আসরে একবারও পাওয়ার প্লের ৬ ওভার বিনা উইকেটে কাটাতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রথম ওভারেই ভাঙে দলটির উদ্বোধনী জুটি।

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনা। মোহাম্মদ নবির করা প্রথম ওভারে বোল্ড হয়ে ফিরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাইবুর রহমান। তিন নম্বরে নেমে ব্যর্থ অলক কাপালী। বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন সজীবের সাদামাটা বল ইয়র্কার বানিয়ে বোল্ড হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

শুভাশীষ রায়কে উড়াতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শুভাগত। ১৬ বলে তিনটি চারে ২০ রান ইমরান খানকে উইকেট দেন রিকি ওয়েসেলস। ৬ ওভারের মধ্যে ৩৮ রানেই নেই খুলনার প্রথম চার ব্যাটসম্যান।

আরিফুল হককের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ইনিংস পুনর্গঠন পর্বে আসেনি খুব বেশি রান। ৪৪ রান করতে এই দুই ব্যাটসম্যান খেলেন ৭.৫ ওভার। দুই জনের ভুল বোঝাবুঝিতে আরিফুলের রান আউটে ভাঙে খুলনার প্রতিরোধ।

তাসকিন আহমেদকে ছক্কা-চার হাঁকানোর আবার এই পেসারকে উড়াতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক ৩৯ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় করেন ৪২ রান।

মঞ্চ প্রস্তুত ছিল নিকোলাস পুরান-কেভন কুপারের জন্য। ৪ ওভারে ৩২ রানের জুটিতে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন তারা। ১৯তম ওভারে দারুণ সব স্লোয়ারে এই দুই ব্যাটসম্যানকে বেধে রাখেন ইমরান খান জুনিয়র। তার শেষ বলে উইকেটরক্ষক এনামুল হকের চমৎকার এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যান কুপার।

শেষের দাবি মেটাতে পারেননি পুরান। ১৭ বলের ইনিংসে একটি করে ছক্কা-চার হাঁকিয়েই ফিরে যান এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ইমরান-তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ে শেষ দুই ওভার থেকে ৭ রানের বেশি নিতে পারেনি খুলনা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৩১/৮ (ওয়েসেলস ২০, তাইবুর ১, কাপালী ৩, শুভাগত ২, মাহমুদউল্লাহ ৪২, আরিফুল ১৮, পুরান ১৮, কুপার ১৫, মোশাররফ ১*, জুনায়েদ ০*; নবি ১/২৬, শুভাশীষ ১/৩২, সাকলাইন ১/২৩, ইমরান ২/১৬, তাসকিন ২/২৮ )

চিটাগং ভাইকিংস: ১৮.৪ ওভারে ১৩৫/৫ (তামিম ৬৬*, গেইল ১৯, এনামুল ৩, মালিক ১, জাকির ৩, জহুরুল ২২, নবি ১৭*; মাহমুদউল্লাহ ০/২৪, জুনায়েদ ০/৩১, শুভাগত ১/৭, শফিউল ০/২৯, কুপার ১/১৮, মোশাররফ ১/২৫)

ফল: চিটাগং ভাইকিংস ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল