অবশেষে চ্যাম্পিয়নের মত খেলল কুমিল্লা

নবম ম্যাচে এসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পারফরম্যান্সে দেখা গেল চ্যাম্পিয়নদের দাপট। তবে এত দিনে হয়ত দেরি হয়ে গেছে বড্ড! বিপিএলে ধুঁকতে থাকা দুই দলের লড়াইয়ে বরিশাল বুলসকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2016, 09:15 AM
Updated : 29 Nov 2016, 11:27 AM

আগে ব্যাট করা বরিশালের ইনিংস দিশা হারিয়েছিল মাঝপথে। লোয়ার অর্ডারের ব্যাটে তবু ১৪২ রান তুলতে পেরেছিল মুশফিকুর রহিমের দল। কিন্তু কুমিল্লার টপ অর্ডারই উড়িয়ে দিয়েছে সেই রান। জিতেছে এক ওভার বাকি থাকতে।

নবম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি মাত্র দ্বিতীয় জয়। ১০ ম্যাচে বরিশালের সপ্তম হার। প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই জয়ী বরিশাল হারল টানা ছয় ম্যাচ!

১৪৩ রান তাড়ায় কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দেন নিজেদের আসল জায়গা ফিরে পাওয়া দুই ওপেনার। ফর্মহীনতা আর দলের প্রয়োজন মিলিয়ে নিচে ব্যাট করতে হচ্ছিলো ইমরুল ও শেহজাদকে। মঙ্গলবার আবার ওপেনিংয়ে সুযোগ পান দুজন। কাজে লাগান দারুণভাবে।

স্বদেশী রুম্মান রাইসকে টানা দুটি চারে শুরু করেন শেহজাদ। পরের ওভারে তাইজুল ইসলামকে দুটি চার মারেন ইমরুল। দুজন এগিয়ে যান অনায়াসে। এক-দুইয়ের পাশপাশি সময়মতো এসেছে চার-ছক্কা।

দুজন মিলে গড়েন এবারের আসরে কুমিল্লার সবচেয়ে বড় জুটি। ইমরুল যখন অর্ধশতকের দোরগোড়ায়, দল শতকের, তখনই ভাঙে জুটি। অনিয়মিত লেগ স্পিনার ডেভিড মালানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৪৬ রানে (৩৫ বলে) আউট হন ইমরুল। ৭৭ বলে জুটি ৯৩ রানের।

শেহজাদ ফিরেছেন ৬১ রানে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক। তবে কুমিল্লা তখন জয়ের কাছে। টানা দুই বলে স্যামুয়েলসের ছক্কা ও চারে ম্যাচের ইতি। ১৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন জ্যামাইকান ব্যাটসম্যান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের টপ ও মিডল অর্ডার ছিল ব্যর্থ। একশর নীচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল দল। সেখান থেকে ১৪০ ছাড়িয়ে নিয়ে যায় লোয়ার অর্ডার!

ঘোড়শ ওভারে ৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছিল বরিশাল। অলরাউন্ডার এনামুল হকের সঙ্গে দুই বোলার তাইজুল ইসলাম ও আবু হায়দার রনির দুটি ছোটো কিন্তু কার্যকর ইনিংস দলকে এনে দেয় লড়াই করার মতো সংগ্রহ।

এবারের বিপিএলে প্রথম খেলতে নামা শাহাদাত হোসেন কুমিল্লাকে এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। শুরুতে কোনো দলেই ছিলেন না শাহাদাত। কুমিল্লা অধিনায়ক মাশরাফি তাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন দলের সঙ্গে অনুশীলনের। সেখানে ভালো করে জায়গা করে নিলেন মূল দলে। প্রথম ওভারেই ধরলেন শিকার।

শুরুটা অবশ্য ছিল ছক্কা হজম করে। প্রথম বলেই ছক্কায় শাহাদাতকে স্বাগত জানান দিলশান মুনাবিরা। এক বল পরই স্লোয়ারে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড লঙ্কান ব্যাটসম্যান। শাহাদতের উদযাপন হুঙ্কারে!

সাইফুদ্দিন বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ফেরান ডেভিড মালানকে। মাঝে নাজমুল হোসেন শান্তর তিন বলে এক চার, দুই ছক্কায় রান কিছুটা বাড়ান জিবন মেন্ডিস।

মেন্ডিস ও মুশফিক ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। বাধা হয়ে দাঁড়ান নাবিল সামাদ। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড মেন্ডিস। বাঁহাতি স্পিনার পরে এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন নাদিফ চৌধুরী ও মুশফিককে (২৯)।

মাঝে রশিদ খানের সোজা বল বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ শাহরিয়ার নাফীস। স্যামুয়েলসের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট রুম্মান রাইস। ২৮ রানের মধ্যে বরিশাল হারায় ৫ উইকেট।

সেখান থেকে লোয়ার অর্ডারের ঘুরে দাঁড়ানো। তাইজুল করেন ১৩ বলে ১৪। আবু হায়দার প্রথম বলেই ছক্কা মারেন লেগ স্পিনার রশিদকে। শেষ ওভারে সাইফুদ্দিনকে ছক্কা মারেন এনামুল, আবু হায়দার দুজনই।

শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ২০ রানে অপরাজিত এনামুল, ৬ বলে ১৬ আবু হায়দার। শেষ ৩ ওভারে বরিশাল তুলেছে ৪২।

মাঝ বিরতিতে রানটাকে মনে হচ্ছিলো চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ইমরুল ও শেহজাদের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত লড়াই হয়ে গেল এক তরফা! দারুণ বোলিংয়ে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়ে ম্যাচ সেরা অবশ্য নাবিল সামাদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বরিশাল বুলস: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (মুনাবিরা ৭, মালান ৯, মেন্ডিস ২৮, মুশফিক ২৯, শাহরিয়ার ১১, নাদিফ ০, এনামুল ২০*, , রাইস ৪, তাইজুল ১৪, রনি ১৬*,; মাশরাফি ০/১৭, শাহাদাত ১/২২, শান্ত ০/১৭. রশিদ ২/২১, সাইফুদ্দিন ১/৪৭, নাবিল ৩/১৭)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯ ওভারে ১৪৫/২ (ইমরুল ৪৬, শেহজাদ ৬১, স্যামুয়েলস ২৭*, লতিফ ৭*; তাইজুল ০/২৭, রাইস ১/৩৮, আবু হায়দার ০/৩০, রাব্বি ০/১১, মেন্ডিস ০/১১, এনামুল ০/১১, মুনাবিরা ০/৬, মালান ১/৮)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাবিল সামাদ