সাকিবদের জেতালেন দুই ‘ফিনিশার’

দুই জনের নামের পাশেই ‘ফিনিশার’ তকমা। তবে একজনের সেই পরিচয় হারিয়ে যাওয়ার পথে। আরেকজন কেবলই নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন এই পরিচয়ে। সেই নাসির হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনই জুটি বেধে জেতালেন দলকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2016, 09:08 AM
Updated : 27 Nov 2016, 11:17 AM

যদিও জয়ের মুহূর্তটা পর্যন্ত থাকতে পারেননি কেউ। তবে মাঝের অস্বস্তি কাটিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছে এই জুটিই। বরিশাল বুলসকে ঢাকা ডায়নামাইটস হারিয়েছে ৪ উইকেটে।

বরিশালের ১৩২ রান তাড়ায় ঢাকা জিতে যায় ৪ বল বাকি থাকতে। ব্যবধান দেখে যতটা না মনে হচ্ছে, জয়টা এসেছে তার চেয়ে অনায়াসে। জয়ের কাছে গিয়ে টপাটপ কয়েকটি উইকেট না হারালে আরও বড় হতো ব্যবধান।

কুমার সাঙ্গাকারা ও সাকিব আল হাসানের উইকেট পরপর দুই ওভারে হারিয়ে রান তাড়ায় একটু দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল ঢাকা। নাসির ও মোসাদ্দেকের জুটিতে দূর হয়েছে শঙ্কা।

৯ ম্যাচে ঢাকার এটি ষষ্ঠ জয়। সমান ম্যাচে বরিশালের ষষ্ঠ হার।

রান তাড়ায় ঢাকা শুরুতেই হারায় মেহেদী মারুফকে। ইনিংসের তৃতীয় বলেই তাইজুলকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড।

দ্বিতীয় উইকেটে কুমার সাঙ্গাকারা ও সাকিব আল হাসানের জুটিতে এগিয়ে যায় ঢাকা। ঝড়ের গতি ছিল না দুজনের ব্যাটে, তবে ছিল নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু পরপর দুই ওভারে দুজনের বিদায়ে পাল্টে যায় চিত্র।

তাইজুলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন সাঙ্গাকারা (৩৩ বলে ৩২)। এনামুল হকের অফ স্পিনে ফিরতি ক্যাচ দেন সাকিব (২১ বলে ২২)।

সেখান থেকেই নাসির-মোসাদ্দেকের জুটি। শুরুতে দুজনই ছিলেন সাবধানী। এক-দুই করে বাড়িয়েছেন দলের রান। তবে রান রেটকে নাগালের বাইরে যেতে দেননি। থিতু হওয়ার পর চার-ছয়ে লক্ষ্য এনেছেন নাগালে।

জুটি ভাঙে নাসিরের বিদায়ে। বাঁহাতি স্পিনার মনিরকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কার পরের বলেই সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ (২৯ বলে ৩৪)।

তবে ৪২ বলে ৫৫ রানের জুটি অনেকটাই নির্ধারণ করে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। ২০ বলে তখন প্রয়োজন ছিল ২০ রান।

শেষের আগের ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন মোসাদ্দেক (২০ বলে ২৩)। পরের বলে রান আউট সিকুগে প্রসন্ন। জয় পেতে তাতে সমস্যা হয়নি। শেষ ওভারে দুই বলেই শেষ করে দেন ডোয়াইন ব্রাভো।

শেষটার মতো বরিশালের শুরুটাও ছিল বিবর্ণ। এরপর ধুঁকতে ধুঁকতে এগিয়ে চলা। মাঝে একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়ে আবার নিস্তেজ। শেষ দিকে রুম্মান রাইসের ব্যাটে একটু প্রাণের সঞ্চার। পাকিস্তানি পেসার দলকে খানিকটা লড়ার রান এনে দেন ব্যাট হাতে। ১৩ বলে অপরাজিত ২৫।
 
টস জিতে ব্যটিংয়ে নেমে বরিশাল ছিল গতিহীন। আবু জায়েদকে তুলে মারতে গিয়ে তৃতীয় ওভারে যখন ফিরছেন শাহরিয়ার নাফীস (৩), দলের রান মাত্র ৬। প্রথম চার ম্যাচে তিনটি অর্ধশতকের পর টানা পাঁচ ম্যাচ আর তিরিশও ছুঁতে পারলেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
 
প্রথম উইকেটের পর জোড়া ধাক্কা হয়ে আসে দুটি রান আউট। মেহেদী মারুফের দারুণ থ্রো আর জিবন মেন্ডিসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট দিলশান মুনাবিরা। খানিক পর মেন্ডিস নিজেও রান আউটের শিকার। ৭ ওভারে বরিশালের রান তখন ৩ উইকেটে ৩৭।
 
নাদিফ চৌধুরীকে নিয়ে এর পর দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ধাক্কা সামলে যখন রান বাড়ানোর সময়, তখনই ভাঙে ৪১ বলে ৪৭ রানের জুটি।
 
সাকিবের খানিকটা শর্ট বল পুল করতে চেয়েছিলেন মুশফিক, মিস করেন লাইন। বল তার পায়ে লেগে পথ বদলে গিয়ে লাগে স্টাম্পে (৩০ বলে ৩৬)।
 
ছক্কার মারার চেষ্টায় নাদিফ ফিরেছেন লং অনে সিকুগে প্রসন্নর দুর্দান্ত ক্যাচে। ঝড় তুলতে পারেননি থিসারা পেরেরাও (১৫ বলে ১৫*)। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বলে উঠেন রাইস।
 
ডোয়াইন ব্রাভোর করা ইনিংসের ১৯তম ওভার থেকে ১৫ রান নেন রাইস। শেষ ওভারে আসে ১২। তাতে ১৩০ ছাড়াতে পারে বরিশাল। 

সেই রানে খানিকটা লড়াই হয়েছে। জয়ের দেখা মেলেনি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বরিশাল বুলস: ২০ ওভারে ১৩২/৬ (শাহরিয়ার ৩, মুনাবিরা ১০, মেন্ডিস ৭, মুশফিক ৩৬, নাদিফ ২১, পেরেরা ১৫*, এনামুল ৩, রাইস ২৫*; আবু জায়েদ ১/১২, সাকিব ১/৩১, ব্রাভো ১/৩৫, সানজামুল ০/১১, বোপারা ১/২৩, প্রসন্ন ০/১৭)।

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৯.৪ ওভারে ১৩৫/৬ (মারুফ ১, সাঙ্গাকারা ৩২, সাকিব ২২, নাসির ৩৪, মোসাদ্দেক ২৩, প্রসন্ন ১০, বোপারা ১*, ব্রাভো ৬*; তাইজুল ২/১৯, রাইস ০/২৫, এনামুল ১/২৪, মুনাবিরা ০/৪, রাব্বি ১/১৪, মেন্ডিস ০/১৭, পেরেরা ০/১৫, মনির ১/১২)।

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান