ঢাকার জয়ে উজ্জ্বল সাকিব

প্রথম দুই আসরের টুর্নামেন্ট সেরা, বিপিএলের উজ্জ্বলতম তারকা। অথচ এবার ছিলেন আশ্চর্যরকম নিষ্প্রভ। প্রথম সাত ম্যাচের পারফরম্যান্সে যেন নিজের ছায়া। অবশেষে সাকিব আল হাসান খানিকটা ফিরলেন আপন চেহারায়। দুই ম্যাচ হারার পর জয়ে ফিরল তার দলও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2016, 09:04 AM
Updated : 26 Nov 2016, 11:51 AM

বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৩২ রানে হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। ১৭১ রান তাড়ায় কুমিল্লা ৮ উইকেটে ১৩৮ রান করে।

২৬ বলে ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস ও একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা সাকিব। তবে ঢাকার জয় আসলে দলগত পারফরম্যান্সের দারুণ প্রতিফলন।

দুদলের ইনিংসেই নেই কোনো অর্ধশতক। তবে ঢাকার ইনিংস ছিল “দশে মিলে করি কাজ”-এর আদর্শ উদাহরণ। শুরুটা করেছিলেন মেহেদি মারুফ। এগিয়ে নিয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। মাঝে হাল ধরেন সাকিব। অধিনায়কের সঙ্গে শেষ দিকে ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। সবার একটু একটু অবদানে ঢাকা গড়ে বড় সংগ্রহ। জবাবে কুমিল্লার না ছিল দলীয় পারফরম্যান্স, না ছিল ব্যক্তিগত ঝলক।

খানিকটা মন্থর উইকেটে ১৭০ রান তাড়া এমনিতেই ছিল কঠিন। ধুঁকতে থাকা কুমিল্লার জন্য তো কাজটি ছিল আরও বেশি কঠিন। প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারে কারও কাছ থেকে দারুণ কোনো ইনিংস। কিন্তু আবারও চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলেনি।

কুমিল্লা পিছিয়ে পড়ে শুরুতেই। নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে। আরেকপাশে খালিদ লতিফও ঝিমিয়ে। ৫ ওভার শেষে লতিফের রান ছিল ৬, দলের রান ২৫।

রান-বলের সেই টানাপোড়েন বেড়েছেই পরে। রানের গতি খানিকটা বাড়ালেও লতিফ পারেননি বড় ইনিংস খেলতে (৩৩ বলে ৩৮)। বড় ভরসা ইমরুল কায়েস ব্যর্থ আবারও। লিটন সেই ব্যর্থতার বলয়েই।

আহমেদ শেহজাদ খানিকটা টিকে ছিলেন। মাশরাফি গিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন সানজামুলকে। দুজনকে একই ওভারে ফেরান ব্রাভো। শেষ দিকেও ওঠেনি ঝড়। ঢাকা জেতে অনায়াসেই।

ব্যাট হাতে ঢাকার শুরুটা ছিল ঝড়ো। মেহেদি মারুফ ও সাঙ্গাকারা প্রথম ৩ ওভারে তোলেন ৩২ রান।

মাশরাফি বিন মুর্তজাকে প্রথম ওভারে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন মারুফ। পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তকে জোড়া বাউন্ডারিতে শুরু করেন সাঙ্গাকারা। তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ শরিফকে টানা দুই বলে চার-ছক্কা মারেন মারুফ।

তবে আবারও ভালো শুরুর পর ইনিংস টেনে নিতে ব্যর্থ মারুফ। স্টাম্পড হয়েছেন নাবিল সামাদের দারুণ ফ্লাইট ও টার্নে (১৭ বলে ২২)।

ক্যারিয়ারে অযুতবারের মতো সাঙ্গাকারার সঙ্গে জুটি বাধেন জয়াবর্ধনে। খানিকটা ধীরগতির উইকেটে রান বাড়ানোর কাজটি সহজ ছিল না। খুব গতিময় না হলেও দুই বন্ধু সচল রেখেছেন রানের চাকা। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটি ৩৮ বলে ৪৫।

দুই লঙ্কান কিংবদন্তিকেই ফিরিয়েছেন রশিদ খান। কাছাকাছি সময়ে কাছাকাছি রানে সুইপ করতে গিয়ে দুজনই বোল্ড আফগান লেগ স্পিনারের। টুর্নামেন্টে আগে একটিই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ১১ করেছিলেন জয়াবর্ধনে। এবার করেছেন ২৭ বলে ৩১। সাঙ্গাকারা ফিরেছেন ২৮ বলে ৩৩ রানে।

ঢাকার ইনিংস আরও গতিময় হয় ইনিংসের পরের ভাগে। ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টে ভীষণ বিবর্ণ সাকিব এদিন ইঙ্গিত দিয়েছেন ছন্দে ফেরার। মোসাদ্দেক তো ফর্মেই ছিলেন। ৩২ বলে ৪৯ রানের সময়োপযোগী জুটি গড়েন দুজন। সোহেল তানভিরকে সোজা ব্যাটে দারুণ একটি ছক্কাসহ ১৮ বলে ২৫ করেছেন মোসাদ্দেক।

সাকিব ছিলেন শেষ পর্যন্ত। আগের ৭ ইনিংসে একবারও ২৫ ছুঁতে না পারা ঢাকা অধিনায়ক এদিন অপরাজিত ২৬ বলে ৪১ করে। শেষ দিকে সিকুগে প্রসন্নর (৪ বলে ১১*) এক ছক্কা ও এক চারে ঢাকা স্পর্শ করে ১৭০।

রানের পেছনে ছোটা বহদূর, বিবর্ণ কুমিল্লা জানাতে পারল না চ্যালেঞ্জও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৭০/৪ (মারুফ ২২, সাঙ্গাকারা ৩৩, জয়াবর্ধনে ৩১, সাকিব ৪১*, মোসাদ্দেক ২৫, প্রসন্ন ১১*; মাশরাফি ০/৩১, শান্ত ০/১০, শরিফ ০/৪০, তানভির ১/৩৬, নাবিল ১/১৬, রশিদ ২/২৬, আল আমিন ০/৮)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৩৮/৮ (শান্ত ১৭, লতিফ ৩৮, ইমরুল ৯, শেহজাদ ২২, লিটন ৫, মাশরাফি ১০, তানভির ১৪, রশিদ ৩, আল আমিন ৯*, শরিফ ২* ; আবু জায়েদ ১/২০, শহিদ ১/৬, সাকিব ১/৩০, ব্রাভো ৩/৩২, প্রসন্ন ১/৩০, সানজামুল ০/১১, নাসির ১/৪, মোসাদ্দেক ০/৩)।

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৩২ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান