প্রসন্ন ঝড় থামিয়ে খুলনার জয়

দারুণ সব ছক্কায় ঢাকা ডায়নামাইটসকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন সিকুগে প্রসন্ন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার। তাকে ফিরিয়েই ৯ রানের জয় তুলে নেয় খুলনা টাইটানস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2016, 09:13 AM
Updated : 19 Nov 2016, 12:00 PM

মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতকে লড়াই করার মতো সংগ্রহ গড়ে টানা তৃতীয় জয় পেল খুলনা। বাজে ফিল্ডিং ও ব্যাটিং ব্যর্থতায় টানা তিন জয়ের পর হারল তারকাখচিত ঢাকা। ছয় ম্যাচে ঢাকার পয়েন্ট ৮। পাঁচ ম্যাচে সব মিলিয়ে চতুর্থ জয় পাওয়া খুলনার পয়েন্টও ৮।

দুবার করে জীবন পান আন্দ্রে ফ্লেচার ও মাহমুদউল্লাহ। দুবার ক্যাচ ধরেও সীমানা দড়িতে পা দিয়ে ছক্কা বানান ফিল্ডাররা। অধিনায়কের অর্ধশতকের ওপর ভর করে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করে খুলনা।

বিপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতক করা প্রসন্নর ঝড়ের পরও ১৯ ওভার ১ বলে ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ঢাকা।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। ঝড় তুলতে পারেননি মেহেদী মারুফ। কুমার সাঙ্গাকারা, ম্যাট কোলস, নাসির হোসেনও ব্যর্থ এদিন। সাকিব আল হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভোও পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে।

তিন পেসার শফিউল ইসলাম, জুনায়েদ খান ও কেভন কুপার শুরুতে চেপে ধরেন ঢাকার ব্যাটসম্যানদের। ৩০ রানের মধ্যেই ফিরে যান প্রথম চার ব্যাটসম্যান। স্পিনে চড়াও হতে গিয়ে বিদায় নেন সাকিব ও ব্রাভো।

ঢাকার আশা হয়ে টিকে ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন (৩৫)। দুটি করে ছক্কা-চার হাঁকানো এই তরুণের ওপর বাড়ছিল রানের গতি বাড়ানোর চাপ। রান-বলের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে মোশাররফ হোসেনের বলে তিনি ক্যাচ দেন সীমানায়। 

মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করা সিকুগে প্রসন্ন ম্যাচে রাখেন ঢাকাকে। কুপারের ওভারে তিন ছক্কাসহ ২১ রান নিয়ে শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজনীয়তাটা ৪৪ রানে রাখেন এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার।

প্রসন্ন ছক্কা হাঁকান শফিউলকে। মোশাররফকে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান আরও কমান। কিন্তু সানজামুল ও সোহরাওয়ার্দীর দ্রুত বিদায়ে ম্যাচে ফিরে খুলনা। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শহীদকে নিয়ে লড়াইয়ে চালিয়ে যান প্রসন্ন। 

কেভন কুপারের শেষ ওভারে ঢাকার দরকার ছিল ১০ রান। প্রথম বলেই চড়াও হন প্রসন্ন। কিন্তু লংঅফ সীমানা পার করতে পারেননি। ২২ বলে ৭টি ছক্কায় ফিরেন ৫৩ রান করে। ১৮ বলে স্পর্শ করেন অর্ধশতক। বিপিএলে তারচেয়ে কম বলে অর্ধশতকের কৃতিত্ব আছে কেবল আহমেদ শেহজাদের। ২০১২ সালে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে বরিশাল বানার্সের হয়ে ১৬ বলে অর্ধশতক করেছিলেন তিনি।

খুলনার কুপার ও বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ তিনটি করে উইকেট নেন।

এর আগে পাঁচটি ক্যাচ ছাড়েন ঢাকা ডায়নামাইটসের ফিল্ডাররা। আন্দ্রে ফ্লেচার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পেরেছেন মাহমদুউল্লাহ। তার অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে খুলনা টাইটানস।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবারের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। চতুর্থ বলেই ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি। নিজের ভুলেই ‘ডায়মন্ড ডাক’ পান হাসানুজ্জামান।

আন্দ্রে ফ্লেচারের কলে সাড়া দিয়ে দ্রুত রান নিতে গিয়ে আউট হন হাসান। লাইন ক্রস করলেও ব্যাট শূন্যে ছিল ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের।

পাঁচ দিনের বিরতিতে মাঠে নামা খুলনার শুরুটা হতে পারতো আরও বাজে। ২ রানে মোসাদ্দেক হোসেন ও ৯ রানে নাসির হোসেনের হাতে জীবন পান ফ্লেচার। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ক্যারিবিয়ান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। সানজামুল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।

চার ওভারে ২৩ রানের মধ্যে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো খুলনার স্কোর হঠাৎ গতি পায় শুভাগত হোম চৌধুরী ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ৪.৩ ওভারে তারা গড়েন ৪৪ রানের জুটি।

ডোয়াইন ব্রাভোকে টানা দুটি চার হাঁকানো শুভাগত পরাস্ত হন গতিতে। ফুল লেংথের বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। একটি করে ছক্কা-চারে ১৬ রান করা নিকোলাস পুরানকেও ফেরান ব্রাভো।

প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তাইবুর রহমানের সঙ্গে ৬ ওভারে ৫৭ রানের আক্রমণাত্মক জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ ও ৩৬ রানে জীবন পাওয়া অধিনায়ক ফেরার আগে করেন ৬২ রান। চলতি আসরে এটাই তার প্রথম অর্ধশতক। মাহমুদউল্লাহর ৪৪ বলের ইনিংসটি গড়া চারটি করে ছক্কা-চারে। 

২১ রানে অপরাজিত থাকেন তাইবুর। ১ রান করেই একবার জীবন পান কেভন কুপার।

খুলনার ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি চড়াও হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী মোহাম্মদ শহীদের ওপর। চার ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। ম্যাট কোলস ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। ব্রাভো ২৭ রানে দুই উইকেট নিয়ে বোলারদের মধ্যে সফলতম।

স্পিনারদের কেউই কোটা পূরণ করেননি। তিন ওভার করে করেন সাকিব ও সানজামুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৫৭/৫ (ফ্লেচার ২০, হাসানুজ্জামান ০, শুভাগত ২৪, মাহমুদউল্লাহ ৬২, পুরান ১৬, তাইবুর ২১*, কুপার ১*; সাকিব ০/১৭, সাজামুল ১/২২, কোলস ০/৩২, প্রসন্ন ০/১১, ব্রাভো ২/২৭, শহীদ ১/৩৮, নাসির ০/৮)

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৯.১ ওভারে ১৪৮ (মারুফ ৬, সাঙ্গাকারা ২, কোলস ১১, নাসির ৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাকিব ৮, ব্রাভো ৪, সানজামুল ১২, প্রসন্ন ৫৩, শুভ ২, শহীদ ১*; জুনায়েদ ১/১৮, কুপার ৩/৩৫, শফিউল ১/২১, আরিফুল ০/২০, শুভাগত ০/১৫, মোশাররফ ৩/৩১, তাইবুর ১/৫)

ফল: খুলনা টাইটানস ৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোশাররফ হোসেন রুবেল