বিপিএলে কোনোভাবেই পরাজয়ের বলয় ছিড়ে বের হতে পারছে না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চট্টগ্রামে গিয়েই বদলায়নি ভাগ্য। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এবার ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে রংপুর রাইডার্স। ১২৩ রান তাড়ায় জিতে যায় তারা ১৮ বল বাকি থাকতেই!
এই নিয়ে পাঁচ ম্যাচের সব কটি হারল কুমিল্লা। মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের জায়গা তাই পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। রংপুর জিতল পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই।
ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের প্রথম ভাগেই। আহমেদ শেহজাদ ও মারলন স্যামুয়েল করেছেন ৫২ রান করে। কিন্তু দুজনের কারও ব্যাটে ছিল না টি-টোয়েন্টির গতি। উইকেট হাতে থাকলেও দেখা যায়নি রান বাড়ানোর তাড়া। শেষ দিকে একটু গতি বাড়িয়ে তবু কোনো রকমে ছাড়ায় ১২০।
অনুমিতভাবেই সেই পুঁজি নিয়ে করা যায়নি লড়াইও। দ্বিতীয় উইকেট মোহাম্মদ শাহজাদ ও মোহাম্মদ মিঠুনের ৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি রংপুরকে নিয়ে যায় জয়ের ঠিকানায়।
রংপুরের রান তাড়ার শুরুটাই ছিল ঝড়ো। ইনিংসর প্রথম ওভারেই নাবিল সামাদকে চার ও ছক্কা মারেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারে আল আমিনকে দুটি চার দুই ওপেনারের। ২ ওভারে রান ২৪।
সৌম্য অবশ্য আরও একবার আউট হয়েছেন ভালো শুরুর পরও। নিজের প্রথম ওভারেই তাকে ফিরিয়েছেন মাশরাফি। কুমিল্লার সাফল্যের সেখানেই শেষ। শাহজাদ ও মিঠুনের ব্যাটের অনয়াসেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে রংপুর।
দুজনের কারও ব্যাটই ছিল না খুব উন্মত্ত। তবে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে রানের গতি ধরে রেখে এগিয়েছেন দুজনই। শেষ পর্যন্ত সাইফুদ্দিনকে দুটি ছক্কায় দলকে জিতিয়ে শাহজাদ স্পর্শ করেছেন অর্ধশতক। ৩ ছক্কায় ৪৯ বলে অপরাজিত ৫১।
আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, মিঠুন শুরু করেছিলেন যেন সেখান থেকেই। ৩ ছক্কায় ৩৯ বলে অপরাজিত ৪৫।
অথচ কুমিল্লার ইনিংসের সময় মনে হচ্ছিলো, ব্যাটিং কত কঠিন! তাদের শুরুটা ছিল ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। এরপরও এগিয়েছে ধুঁকতে ধুঁকতে। শেষ দিকে একটু প্রাণের সঞ্চার হলো বটে, তবে সব মিলিয়ে রুগ্ন এক ইনিংস!
দলের বড় ভরসার জায়গা ইমরুল কায়েস আরও একবার বিমুখ করেছেন দলকে। সতর্ক ভাবে শুরু করেও এলবিডব্লিউ হয়ে গেছেন সোহাগ গাজীর বলে। একাদশে ফিরলেও ফর্মে ফেরা হয়নি লিটন দাসের। উইকেটে আধ ঘণ্টার অস্বস্তিকর উপস্থিতির পর রান আউট হয়ে গেছেন ১২ বলে ৪ রান করে।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে কুমিল্লার রান তখন ২ উইকেটে ২১। এবারের বিপিএলে পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে কম রান এটিই। বাউন্ডারি ছিল মাত্র দুটি!
শেহজাদের সঙ্গে এরপর জুটি বাধেন স্যামুয়েলস। দুজন জুটি গড়েন ঠিকই, কিন্তু হয়ত ভুলে যান টি-টোয়েন্টির দাবি! রান আসতে থাকে তাই এক-দুই করে। চার-ছয় যায় হারিয়ে।
এক পর্যায়ে ৩০ বলে ২৮ রান ছিল শেহজাদের। জিয়াউর রহমানকে পেয়ে টানা দুটি চারে গতি বাড়ান একটু। ১৫তম ওভারে রুবেল হোসেনের লেংথ বল ছক্কা মেরে অর্ধশতক স্পর্শ করেন ৪১ বলে। কিন্তু শেষ করে আসতে পারেননি কাজ। রান বাড়ানোর তাড়াতেই আনোয়ার আলিকে আকাশে তুলে ধরা পড়েছেন আফ্রিদির হাতে।
জুটিতে ৬৪ রান এলেও লেগে যায় ৬২ বল! স্যামুয়েলস প্রথম বাউন্ডারি দেখা পান ২৭তম বলে। আগের ২৬ বলে রান ছিল ১৫!
শেষ দিকে রুবেল ও আনোয়ারকে দুটি ছক্কায় গতি খানিকটা বাড়ান স্যামুয়েলস। তবে পুরোপুরি পুষিয়ে দিতে পারেননি আগের ঘাটতি। শেষ ওভারে আউট হন ৪৬ বলে ৫২ করে।
শেষ দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে কুমিল্লার ইনিংসের ইতি টানেন রুবেল। শেষটা যেন কুমিল্লার গোটা ইনিংসেরই প্রতীকী!
ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে শাহজাদের হাতে। তবে রংপুরের জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন আসলে বোলাররাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১২২/৫ ( লিটন ৪, ইমরুল ৫, শেহজাদ ৫২, স্যামুয়েলস ৫২, শান্ত ৫*, তানভির ০; সোহাগ ১/৭, আনোয়ার ১/২৮, সানি ০/১৯, রুবেল ২/২৭, আফ্রিদি ০/১৮, ডসন ০/১১, জিয়াউর ০/১১)।
রংপুর রাইডার্স: ১৭ ওভারে ১২৬/১ ( শাহজাদ ৫১*, সৌম্য ১৫, মিঠুন ৪৫*; নাবিল ০/২৯, আল আমিন ০/১১, তানভিল ০/৭, মাশরাফি ১/২০, রশিদ ০/৩২, সাইফুদ্দিন ০/২৩)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ শাহজাদ