অভিষেকে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিলেন ডি গ্র্যান্ডহোম

হ্যাগলি ওভালের ঘাসে ভরা ২২ গজ দেখে বৃষ্টি ভেজা প্রথম দিনে ক্রেইগ ম্যাকমিলান বলেছিলেন, “উইকেট দেখে ঠোঁট অবলেহন করছে পেসাররা।” নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন বোল্ট-সাউদি বা প্রতিপক্ষের আমির-সোহেলদের মত পেসারদের কথা। কে জানত, উইকেট দেখে বরং জিভে জল এসে গেছে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2016, 09:11 AM
Updated : 18 Nov 2016, 09:24 AM

বিখ্যাত সতীর্থদের ছাপিয়ে নিউ জিল্যান্ডের নায়ক অভিষিক্ত এই পেসারই। অভিষেকে দেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে বিধ্বস্ত করলেন পাকিস্তানকে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান গুটিয়ে গেল ১৩১ রানেই।

বল হাতে শুরুটা দারুণ ছিল পাকিস্তানেরও। নিউ জিল্যান্ড ৩ উইকেট হারিয়েছিল ৪০ রানে। ব্যাটিংয়েও কিউইদের ত্রাণকর্তা আরেক অভিষিক্ত। ওপেনার জিত রাভালের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা ৩ উইকেটেই ১০৪ রান নিয়ে। ৫৫ রানে অপরাজিত অভিষিক্ত বাঁহাতি ওপেনার।

তৃতীয় দিনে দৃষ্টি থাকবে রাভালের ওপর। তবে দ্বিতীয় দিনের নায়ক ডি গ্র্যান্ডহোমই। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে আগের সেরা বোলিং ছিল ১৫৫ রানে ৬ উইকেট। সেই ১৯৫১ সালে ক্রাইস্টচার্চেরই আরেক মাঠ ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন লেগ স্পিনার অ্যালেক্স মোইর। এবার ডি গ্র্যান্ডহোম ৬ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৪১ রানে।

অথচ ডি গ্র্যান্ডহোমের ব্যাটিংয়ের হাতই বেশি ভালো। ৮৩ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সেঞ্চুরি যেখানে ১০টি, সেখানে ৫ উইকেট নিয়েছেন মোটে একবার! ৩০ বছর বয়সে অভিষেকে সেই তিনিই ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে।

ম্যাচের প্রথম দিন টসই হতে পারেনি বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিনেও ছিল বৃষ্টির পূর্বাভাস। তবে এ দিন সকাল থেকেই আকাশ ঝকঝকে। কিন্তু উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রতিপক্ষের ভালো বোলিংয়ের চেয়ে পাকিস্তানকে বেশি ডুবিয়েছে নিজেদের বাজে ব্যাটিং। বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে আউট হয়েছেন বেশ কজন।

শুরুটা খারাপ ছিল না। ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির চ্যালেঞ্জ সামলে ১২ ওভার কাটিয়ে দেন আজহার আলি ও সামি আসলাম। কিন্তু ব্যাটিং মুখ খুবড়ে পড়ল ডি গ্র্যান্ডহোমের মিডিয়াম পেসে।

দারুণ এক ইনসুইংয়ে আজহারকে ফিরিয়ে ভাঙলেন ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি। লাঞ্চের আগেই ডি গ্র্যান্ডহোম তুলে নেন বাবর আজম ও ইউনিস খানকে। অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে বাজে এক শটে আউট হয়েছেন ইউনুস।

আরেক পাশে ওপেনার আসলামকে ফেরান টিম সাউদি। সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারেনি পাকিস্তান। গুটিয়ে যায় তারা চা বিরতির আগেই। খানিকটা লড়েছেন কেবল মিসবাহ-উল-হক। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানকে ৫০ টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার কীর্তির দিনে ১০৮ বলে করেছেন ৩১। আউট হয়েছেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে, বোল্টের বলে।

ডি গ্র্যান্ডহোমের ৬ উইকেটের পাশে জোড়া শিকার ধরেছেন বোল্ট-সাউদি দুজনই। ব্যাট হাতে নামার আগে স্লিপে তিনটি ক্যাচ নিয়েছেন অভিষিক্ত রাভাল।

পরে সফল তিনি নিজের মূল কাজেও। পাকিস্তানের তিন পেসার মিলে ফিরিয়ে দেন কিউই ব্যাটিংয়ের মূল তিনজন টম ল্যাথাম, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরকে। কিন্তু রাভাল খেলেছেন আস্থার  সঙ্গে।

পাকিস্তানি পেসারদের সুইং ও বাউন্স সামলেছেন দারুণভাবে। সুযোগ পেলেই খেলেছেন পুল, কাট ও ড্রাইভ। তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেছেন হেনরি নিকোলস। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৪ রান তুলে দিন শেষ করেছেন দুজন।

তৃতীয় দিনে রাভালের ব্যাটেই তাকিয়ে থাকবে নিউ জিল্যান্ড। রাভাল তাকিয়ে তিন অঙ্কের জাদুকরী সংখ্যায়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৫.৫ ওভারে ১৩৩ (আসলাম ১৯, আজহার ১৫, বাবর ৭, ইউনুস ২, মিসবাহ ৩১, শফিক ১৬, সরফরাজ ৭, আমির ৩, সোহেল ৯, ইয়াসির ৪*, রাহাত ০; সাউদি ২/২০, বোল্ট ২/৩৯, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬/৪১, ওয়াগনার ০/১৩)।

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৬ ওভারে ১০৪/৩ (ল্যাথাম ১, রাভাল ৫৫*, উইলিয়ামসন ৪, টেলর ১১, নিকোলস ২৯*; আমির ১/১৯, সোহেল ১/৩৬, রাহাত ১/৩২, ইয়াসির ০/১৬)।