রংপুরকে জেতালেন মিঠুন-সোহাগ

উইকেট, ছক্কা, উইকেট, উইকেট! শেষ ওভারের নাটকীয়তা শেষ হলো এভাবেই। জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। দ্বিতীয় বলের ছক্কায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু পরের দুই বলেই ম্যাচ শেষ। পেরে উঠল না বরিশাল, জিতল রংপুর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 01:51 PM
Updated : 17 Nov 2016, 04:17 PM

বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে বরিশাল বুলসকে ১২ রানে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। রংপুরের ১৭৫ রান তাড়ায় বরিশাল শেষ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৬৩ রানে।

দুর্দান্ত এক অর্ধশতকে রংপুরকে বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ের পর শেষ ওভারেও কার্যকর বোলিংয়ে দলকে জিতিয়েছেন সোহাগ গাজী। ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন লিয়াম ডসন ও শহিদ আফ্রিদি।

অসাধারণ তিনটি স্টাম্পিংসহ পাঁচটি ডিসমিসাল করা উইকেটকিপার মোহাম্মদ শাহজাদের কথাও বলতে হবে আলাদা করে।

১২ রানের ব্যবধান দেখে যতটা মনে হয়, ম্যাচটি ছিল তার চেয়েও রোমাঞ্চকর। কিন্তু সোহাগের শেষ ওভারে চার বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বরিশাল। প্রথম বলের পর আর স্ট্রাইকই পেলেন না থিসারা পেরেরা। লঙ্কান অলরাউন্ডার স্ট্রাইক পেলে হয়ত আরও জমতে পারত ম্যাচ।

চার ম্যাচে এটি রংপুরের তৃতীয় জয়। উঠে এল তারা পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। বরিশালের জয়ও তিনটি, তবে পাঁচ ম্যাচে।

বড় রান তাড়ায় প্রথম বলেই বরিশাল হারায় দিলশান মুনাবিরাকে। সোহাগ এরপর ফিরিয়ে দেন ফর্মে থাকা শাহরিয়ার নাফিসকে (১২)। শাহজাদের ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড হন মুশফিকুর রহিমও। ৭ ওভার শেষে বরিশাল তখন ৩ উইকেটে ৪৮। লক্ষ্য অনেক দূরে।

জীবন মেন্ডিস ও নাদিফ চৌধুরির ব্যাটে সেই লক্ষ্যই আসতে থাকে দৃষ্টিসীমায়। ডেভিড মালানের চোটে প্রথমবার খেলতে নামা মেন্ডিস এক প্রান্ত আগলে বাড়াতে থাকেন রান। ৩ ছক্কায় নাদিফ তোলেন ঝড়।

দুজনকেই ফিরিয়ে দন আফ্রিদি। ২৫ বলে ৪১ করে নাদিফ ধরা পড়েন কাভারে। ৫৩ বলে ৫৭ করে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মেন্ডিস। যদিও সিদ্ধান্তটি ছিল সংশয়পূর্ণ।

এরপর চেষ্টা করেছেন থিসারা পেরেরা (১০ বলে ১৭*)। একটি ছক্কা মেরে বিদায় নিয়েছেন রায়াদ এমরিট। শেষ দিকে আর কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে।

রংপুরকে বড় স্কোরের ভিত্তি গড়ে দিয়ে মাচের সেরা অবশ্য মিঠুন। আগের তিন ম্যাচের দুটিতে ছোট্ট দুটি অপরাজিত ইনিংস, একটিতে ফিরেছিলেন শূন্য রানেই। এবার লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগালেন দারুণ ভাবে।

বরিশালের শুরুটা ছিল ঝড়ো। দ্বিতীয় ওভারেই আল আমিন হোসেনকে টানা তিনটি চার মারেন সৌম্য সরকার। বিধ্বংসী ওপেনার অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি এদিনও। তাইজুল ইসলামের বলে স্টাম্পড হয়েছেন ১৪ রানেই।

আরেক বিস্ফোরক ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদকেও ১৪ রানেই ফেরান তাইজুল। কিন্তু রংপুরের রান স্রোত তীব্রই থেকে যায় মিঠুনের ব্যাটে। দারুণ সব শট খেলে দলকে এগিয়ে নেন জাতীয় দলে জায়গা হারানো এই ব্যাটসম্যান।

মিঠুনকে দারুণ সঙ্গ দেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ডসন। তৃতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৫৬ বলে ৭৮ রানের জুটি। ৩৫ বলে মিঠুন স্পর্শ করেন টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত থিসারা পেরেরার স্লোয়ার বলে মিঠুন বোল্ড হন ৬২ রানে। ৪৪ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার, দুটি ছক্কা।

আফ্রিদি উইকেটে যাওয়ার খানিকপরই প্রিয় স্লগ শটে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ওড়ান পেরেরাকে। পরের ওভারে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা আল আমিনকে। তাকেও ফিরিয়েছেন পেরেরা। স্লোয়ার ফুলটস অন সাইডে ওড়াতে গিয়ে আফ্রিদি ক্যাচ দিয়েছেন কাভার পয়েন্টে। তবে ১০ বলে ২২ করে নিজের কাজটা করে এসেছেন।

ততক্ষণে রানের গতি বাড়িয়েছেন ডসনও। এগিয়ে যাচ্ছিলেন অর্ধশতকের দিকে। তবে কাজ শেষ করে আসতে পারেননি তিনিও (৩৬ বলে ৪৬)।

শেষ দিকে তাই প্রত্যাশিত রান পায়নি রংপুর, শেষ ৩ ওভারে আসে মাত্র ১৬ রান। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্টই হয়েছে সেটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৭৫/৬ (সৌম্য ১৪, শাহজাদ ১৪, মিঠুন ৬২, ডসন ৪৬, আফ্রিদি ২২, জিয়াউর ২*, সেনানায়েকে ৭, সোহাগ ২*; তাইজুল ২/২৭, আল আমিন ০/৩৮, আবু হায়দার ০/৩০, কামরুল রাব্বি ০/১২, এমরিট ১/২৫, মেন্ডিস ০/১১, পেরেরা ২/৩১)।

বরিশাল বুলস: ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ (মুনাবিরা ০, মেন্ডিস ৫৭, শাহরিয়ার ১২, মুশফিক ৮, নাদিফ ৪১, পেরেরা ১৭*, এমরিট ৯, আবু হায়দার ০, কামরুল ০, তাইজুল ৬, আল আমিন ০; সোহাগ ৩/১৯, সেনানায়েকে ০/৪৯, রুবেল ২/৩৬, ডসন ১/১৬, আফ্রিদি ২/৩১, সানি ০/৫)

ফল: রংপুর রাইডার্স ১২ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন