চট্টগ্রামে তামিমদের হারাল সাকিবের ঢাকা

মেহেদী মারুফ, মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া ঢাকা ডায়নামাইটস পেয়েছে সহজ জয়। ঘরের মাঠেও ভাগ্য বদল হয়নি চিটাগং ভাইকিংসের। ব্যাটিং ব্যর্থতায় টানা চতুর্থ পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে তামিম ইকবালের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 09:06 AM
Updated : 17 Nov 2016, 12:35 PM

পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ জয় পেতে চিটাগংকে ১৯ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা। ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে তারকাখচিত দলটিই।  

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবারের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৪৮ রান করে ঢাকা। জবাবে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে চিটাগং। পাঁচ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তারা কেবল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপরে রয়েছে। 

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই রান আউট হন জহুরুল ইসলাম। তামিম ইকবালের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির পর নিজের উইকেট বিসর্জন দেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

জহুরুলের আত্মত্যাগ খুব একটা কাজে আসেনি। স্বভাববিরুদ্ধ এক ইনিংস খেলে ফিরেন চিটাগংয়ের অধিনায়ক। ডোয়াইন ব্রাভোর বল তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তামিম (৩৫ বলে ২৬)। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফেরার সময় দলের প্রয়োজন ছিল ৪৭ বলে ৮৩ রান। সেই সমীকরণ আর মেলাতে পারেননি চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানরা।

এর আগেই ফিরেন এনামুল হক। নাসির হোসেনকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে একই চেষ্টা করতে গিয়ে সীমানায় সিকুগে প্রসন্নর হাতে ধরা পড়েন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রথমবারের মতো খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।

জোড়া আঘাতে মোহাম্মদ নবি ও গ্রান্ট এলিয়টকে বিদায় করেন মোহাম্মদ শহীদ। এই পেসারের তৃতীয় শিকার ‘ছক্কা মিলন’ নামে পরিচিত নাজমুল হোসেন। এর পর আর বেশিদূর যেতে পারেনি চিটাগং।

২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শহীদই ঢাকার সেরা বোলার। ১১ উইকেট নিয়ে তিনিই এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। ১০ উইকেট নিয়ে তার পেছনেই আছেন চিটাগংয়ের নবি।

মারুফের উড়ন্ত সূচনার পর খানিক ছন্দ পতন। তরুণ মোসাদ্দেকের ব্যাটে আবার ঘুরে দাঁড়ানো। তাতে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে লড়াইয়ের পুঁজি পায় ঢাকা।

যথারীতি ইনিংসের সুরটা ঠিক করে দেন এবারের আসর দিয়ে নিজেকে মেলে ধরা মারুফ। দলে ফেরা টাইমাল মিলসের প্রথম তিন বলের দুটিকেই চারে পরিণত করেন এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। ইংলিশ পেসারের পরের ওভারে আবার দুটি চার তুলে নেন তিনি।

শুভাশীষ রায়ের এক ওভারে দুই চার-এক ছক্কায় মারুফ করেন ১৪ রান। দারুণ সূচনা এনে দেওয়া এই ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন নবি। ৪.৫ ওভারের জুটিতে ততক্ষণে উঠেছে ৪১ রান। ২০ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় মারুফের রান ৩৩।

মারুফ যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করেছিলেন নাসির হোসেন। চার হাঁকান মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে। চার বলে তুলে নেন ১৫ রান। ছন্দপতন ঘটে এরপরেই। আব্দুর রাজ্জাকের বদলে দলে আসা সাকলাইন সজীবের বলে ক্যাচ দিয়েও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে যান তিনি।

৯ ওভারে ১ উইকেটে ৭২ রানের দৃঢ় অবস্থানে থাকা ঢাকাকে বড় একটা ধাক্কা দেন মিলস। চার বলের মধ্যে নাসির ও কুমার সাঙ্গাকারাকে বিদায় করেন তিনি। বোল্ড হন ১৪ বলে ২০ রান করা নাসির। সাঙ্গাকারা হন এলবিডব্লিউ।

ঝড়ো শুরু করা সাকিব নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিন বিদেশি ডোয়াইন ব্রাভো, প্রসন্ন, প্রথমবারের মতো খেলতে নামা ম্যাট কোলস পারেননি নিজেকে মেলে ধরতে।

ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার মধ্যেও রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন তরুণ মোসাদ্দেক। ঢাকাকে চেপে ধরা সাকলাইনের এক ওভারে তিনি হাঁকান দুটি চার ও একটি ছক্কা। মিলসকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করার চেষ্টায় তিনি ফিরেন ৩৫ রান করে। তার ২৬ বলের ইনিংসটি দুটি করে ছক্কা-চার সমৃদ্ধ। এবারের আসরে এই প্রথম আউট হলেন তিনি।

নিজের তিন ওভারে একটি করে উইকেট নেন আফগান অফ স্পিনার নবি। প্রথম দুই ওভারে ১৮ রান দেওয়া মিলস পরের দুই ওভারে ৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। চিটাগংয়ের সবচেয়ে হিসেবী বোলার ছিলেন ইমরান খান। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন তিনি। 

বোলাররা লক্ষ্যটা ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখেন। কিন্তু পরাজয়ের বৃত্ত তবুও ভাঙতে পারেনি চিটাগং। লক্ষ্য তাড়ায় কখনও জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি দলটি। তিনটি পরিবর্তন এনেও তামিমদের সঙ্গী সেই হারই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৪৮/৯ (মারুফ ৩৩, সাঙ্গাকারা ১৭, নাসির ২০, মোসাদ্দেক ৩৫, সাকিব ১৩, ব্রাভো ৩, প্রসন্ন ৮, কোলস ৪, আলাউদ্দিন ৫, সানজামুল ৭*;মিলস ৩/২৫, শুভাশীষ ০/৪২, নবি ৩/১৮, মাহমুদুল ০/১২, সাকলাইন ০/২৬, ইমরান ১/২৩)
 
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (তামিম ২৬, জহুরুল ৬, এনামুল ১৭, মাহমুদুল ২০, নবি ১৫, এলিয়ট ৮, নাজমুল ১৩, সাকলাইন ৯*, মিলস ৪, ইমরান ৫*;নাসির ১/২৬, সাকিব ০/৯, কোলস ১/২৩, ব্রাভো ১/২৫, প্রসন্ন ০/১৭, শহীদ ৩/২৩)
 
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ১৯ রানে জয়ী।
 
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ শহীদ।