বরিশালকে দারুণ জয় এনে দিলেন পেরেরা-মুশফিক

যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, দলের চাই ওভারপ্রতি আট রানের বেশি। মন্থর উইকেটে কাজটি বেশ কঠিন। সেটিই সহজ হয়ে গেল মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। অধিনায়কের ব্যাটিং অনুপ্রেরণা জোগাল যেন থিসারা পেরেরাকেও। লঙ্কান অলরাউন্ডার ফিরলেন দলের জয়কে সঙ্গী করেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2016, 10:37 AM
Updated : 11 Nov 2016, 02:22 PM

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে এবারের বিপিএলে প্রথম জয় পেয়েছে বরিশাল বুলস। গত আসরের দুই ফাইনালিস্টের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়নদের ১২৯ রান তাড়া করে রানার্সআপরা জিতেছে ৯ বল বাকি থাকতে।

বরিশালের জয়ের ভিত্তি গড়া হয়েছিল ম্যাচের প্রথম ভাগেই। দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছিল কুমিল্লার বাজে ব্যাটিং ও রানিং। মারলন স্যামুয়েলস ও সোহেল তানভিরের ব্যাটে তবু লড়ার মত রান পেয়েছিল কুমিল্লা। তাতে লড়াই হয়েছে, জয় নয়। মুশফিক ও পেরেরার দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত বরিশাল জিতেছে সহজেই।

গত বিপিএলে তিন বার কুমিল্লার মুখোমুখি হয়ে সব ম্যাচই হেরেছিল বরিশাল।

বরিশালে রান তাড়ার শুরুটা ছিল সতর্ক। উইকেট নিতে না পারলেও রানটা বেধে রেখেছিল কুমিল্লা। ওপেনার দিলশান মুনাবিরার বিদায়ের পর সাবধানী ছিলেন শামসুর রহমান।

প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে ৪৮। মন্থর শুরুটা যখন দাবি করছে গতি বাড়ানোর, শামসুর (২৬ বলে ১৬)  ফিরলেন তখনই। ক্যাচ দিলেন লং অনে। দারুণ খেলতে থাকা ডেভিড মালান খানিক পর শরীফের বলে কাভারে ধরা পড়লেন মাশরাফির হাতে।

মুশফিক নেমেই পাল্টে দেন চিত্র। উইকেটে যাওয়ার খানিক পরই নাহিদুলের অফ স্পিনে ছক্কা মারেন প্রিয় স্লগ সুইপে। থমকে যাওয়া বরিশালের স্কোরবোর্ড সচল হয় অধিনায়কের ব্যাটে।

থিসারা পেরেরাকে নিয়ে মুশফিক এগিয়ে নেন দলকে। ৪ ওভারে যখন প্রয়োজন ৩১ রান, এক ওভারেই সমীকরণ পক্ষে আনেন দুজন। প্রতিপক্ষের অন্যতম সেরা বোলার ইমাদ ওয়াসিমের এক ওভারেই দুটি ছক্কা মারেন দুজন। ওই ওভারের ১৭ রানে ম্যাচ হেলে পড়ে বরিশালের দিকে।

পরের ওভারে মুশফিককে (২৩ বলে ৩৩) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তানভির। তবে বরিশালের সমস্যা হয়নি। পরের ওভারেই শরীফকে দুটি চার মেরে খেলা শেষ করেন পেরেরা (২০ বলে ৩৪*)।

এর আগে বল হাতেও পেরেরা ছিলেন সফল। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। বরিশালের অন্য বোলাররাও ছিলেন দারুণ। তবে তার চেয়েও বাজে ছিল কুমিল্লার ব্যাটিং।

বড় ভরসা ইমরুল কায়েস আগের ম্যাচের মতো ব্যর্থ এ দিনও। আউটের ধরনও ছিল দৃষ্টিকটু। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তাইজুল ইসলামের নিরীহ এক বলে ক্রস ব্যাটে আলসে শটে বোল্ড।

তাইজুলের পরের ওভারে টানা দুটি দারুণ চার মারেন খালিদ লতিফ। তবে আবু হায়দার রনি আক্রমণে এসেই নাড়িয়ে দেন পাকিস্তানি এই ওপেনারকে। আগের ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া রনি এ দিন উইকেট নেন নিজের প্রথম ওভারে। এই বাঁহাতি পেসারের তিন বল অস্বস্তিতে খেলার পর আরেকটি লেংথ বলে পুল করে লতিফ বল তোলেন আকাশে। ছুটে এসে ক্যাচ নেন মুশফিক (১২)।

এর পর এক পাশে স্যামুয়েসলের লড়াই; আরেকপাশে ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়া। স্যামুয়েলসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে বাজেভাবে রান আউট নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইমাদ ওয়াসিম। মাঝে লিটন দাস একটু থমকে যাওয়া বলে ফিরতি ক্যাচ দেন আল আমিন হোসেনকে। বাজে শটে ফিরে যান নাহিদুল ইসলামও।

কুমিল্লার তখন একশ’ হওয়া নিয়েই শঙ্কা। ১৪তম ওভারে ৭৩ রানে নেই ৬ উইকেট। সেখান থেকেই তানভিকে নিয়ে দলকে টেনেছেন স্যামুয়েলস। সপ্তম উইকেটে ২৮ বলে দুজনের জুটি ৩৮ রানের।

স্যামুয়েলস অবশ্য শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। কাছে গিয়ে পাননি অর্ধশতকও। শেষের আগের ওভারে রায়াদ এমরিটকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন স্কয়ার লেগে (৪৮ বলে ৪৮)।

১৩ রানে মিড উইকেটে তানভিরের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মেহেদি হাসান। সেটির খেসারত দিতে হয়েছে বরিশালকে। আবু হায়দারের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম ও শেষ বলে ছক্কা মারেন তানভির। অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ৩০ রানে।

শেষ ওভারটি ছাড়া আবু হায়দারের বোলিং ছিল দারুণ। তাইজুল-আল আমিনরাও নিজেদের কাজ করেছেন ঠিকঠাক। পরে মুশফিক আর পেরেরা দলকে এনে দিয়েছেন জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (ইমরুল ০, লতিফ ১২, শান্ত ১৬, স্যামুয়েলস ৪৮, লিটন ৪, ইমাদ ১, নাহিদুল ৪, তানভির ৩০*, মাশরাফি ২, শরিফ ১*; তাইজুল ১/২৫, আল আমিন ১/২৪, আবু হায়দার ২/৩৪, এমরিট ১/২০, পেরেরা ১/২০)।

বরিশাল বুলস: ১৮.৩ ওভারে ১৩০/৪ (মুনাবিরা ১৫, শামসুর ১৬, মালান ২৬, মুশফিক ৩৩, পেরেরা ৩৪*, শাহরিয়ার ১*; ইমাদ ১/৩৮, তানভির ১/১৭, মাশরাফি ০/২১, নাবিল ১/১২, নাহিদুল ০/১০, শরিফ ১/৩০)।

ফল: বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: থিসারা পেরেরা