শেষের নাটকীয়তায় খুলনাকে জেতালেন মাহমুদউল্লাহ

বেরিয়ে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না নাজমুল অপু। বেলস ওড়ালেন উইকেটকিপার নিকোলাস পুরান। উড়লেন মাহমুদউল্লাহও, ডানা মেলে ভেসে গেলেন যেন দূর দিগন্তে। খুলনা টাইটানস অধিনায়ককে পায় কে! অসাধারণ এক শেষ ওভারে দলকে নাটকীয় জয় এনে দিলেন এই অলরাউন্ডার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2016, 10:09 AM
Updated : 9 Nov 2016, 03:35 PM

বিপিএলের দ্বিতীয় দিনে নবীন দুই দলের লড়াইয়ে রাজশাহী কিংসকে ৩ রানে হারাল খুলনা টাইটানস। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান তুলেছিল খুলনা। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রাজশাহী শেষ বলে গুটিয়ে যায় ১৩০ রানে।

শেষ ১২ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, হাতে ৬ উইকেট। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ফরহাদ রেজার বাউন্ডারিতে সমীকরণ নেমে আসে ১১ বলে ৯। কিন্তু পরে ৫ বলে মাত্র ২ রান দেন জুনাইদ খান, ফিরিয়ে দেন ফরহাদকেও।

এরপর সেই নাটকীয়তার শেষ ওভার। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে রাজশাহীর চাই ৭ রান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেই হাতে নিলেন বল। প্রথম দুই বলে দুটি সিঙ্গেল, পরে বলটি ওয়াইড। চার বলে তখন চার রানের সহজ হিসাব।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়লেন আবুল হাসান। পরের বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড মোহাম্মদ সামি। উইকেটকিপার পুরান বেলস ওড়াতে দেরি করায় পরের বলে হ্যাটট্রিক পেতে পেতেও হয়নি মাহমুদউল্লাহর। তবে শেষ বলে ঠিকই ধরা দিয়েছে উইকেট আর দলের দারুণ জয়!

অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন আবুল হাসান। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে খুলনাকে আটকে রেখেছিলেন মাঝারি রানে। পরে নায়ক হতে পারতেন মুমিনুল হক বা ড্যারেন স্যামি। দুজনের জুটিতেই শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে জয়ের দিকে এগিয়েছিল রাজশাহী।

কিন্তু তারা কেউই পারেননি কাজটা শেষ করতে। যেটা পেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর শেষের বোলিংয়ে ম্যাচেরও সেরা খুলনা অধিনায়ক।

তবে শেষ ওভার পর্যন্ত খুলনাকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার নায়ক পাকিস্তানি পেসার জুনাইদ খান। খানিকটা মন্থর উইকেটেও অসাধারণ বোলিং করে তিনি কঠিন করে তোলেন রাজশাহীর রান তাড়া।

রাজশাহীর রান তাড়ার শুরু ছিল প্রথম ওভারে দুই চার দিয়ে। এরপর জুনাইদ নাড়িয়ে দেন রাজশাহীকে। ভেতরে ঢোকা দারুণ এক বলে নুরুল হাসানকে এলবিডব্লিউ করে শুরু। পরের ওভারে পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দেন রাজশাহীর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় দুই ভরসা সাব্বির রহমান ও উমর আকমলকে।

সাব্বির বোল্ড হয়েছেন জুনাইদকে দৃষ্টিকটুভাবে তাড়া করতে গিয়ে। আকমল ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। রাজশাহীর রান তখন ৩ উইকেটে ২৪।

সামিত প্যাটেলকে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন মুমিনুল। তবে রানের চাপ বাড়ছিল। ১০ ওভারে রাজশাহীর রান ছিল ৩ উইকেটে ৫৯। চাপ আরও বাড়িয়ে বাঁহাতি স্পিনার আসগরের বাজে বলে আউট হয়ে ফেরেন প্যাটেল (১০)।

স্যামি উইকেটে আসার পর গতি পায় দলের ইনিংস। তিনটি ছক্কায় রান-বলের সমীকরণ নাগালে আনেন স্যামি। আরেকপাশে মুমিনুল ধরে রাখেন রানের ধারা। দুজনের জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের কাছে।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ অর্ধশতক তুলে নেন মুমিনুল। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দ্বিতীয়।

১৮ বলে যখন প্রয়োজন ২৩ রান, হঠাৎই একটু নাটকীয়তা। শফিউলের বলে বোল্ড স্যামি (২৩ বলে ৩১), ভাঙল ৪০ বলে ৫২ রানের জুটি।

অধিনায়ক ফিরলেও টানা দুটি বাউন্ডারিতে দলকে ভরসা দেন মুমিনুল। কিন্তু পরের বলেই স্কুপ করতে গিয়ে উপহার দিয়ে আসেন উইকেট (৫৭ বলে ৬৪)। ম্যাচ আবার দোদুল্যমান।

শেষ দিকে আবুল হাসান, ফরহাদ বা সামিরা পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। মুঠোয় থাকা ম্যাচ ফসকে যায় রাজশাহীর।

অথচ প্রথম ইনিংস শেষে বেশি খুশি ছিল হয়ত রাজশাহীই। আবুল হাসানের দারুণ বোলিংয়ে খুলনাকে ১৩৩ রানে আটকে রাখে তারা।

টি-টোয়েন্টিতে আগে কখনোই ম্যাচে ৩ উইকেটের বেশি পাননি যিনি, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন দশের কাছাকাছি, সেই আবুল হাসান সাত নম্বরে বোলিংয়ে এসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৮ রানে!

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফরহাদ রেজাকে দুটি চার মেরে শুরু করেন নিকোলাস পুরান। তবে এই ক্যারিবিয়ানকে ডানা মেলতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।

ইংল্যান্ড সিরিজে আলোকিত টেস্ট অভিষেকের পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকেই আলোয় মিরাজ। উইকেট নিয়েছেন নিজের তৃতীয় বলেই। সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড পুরান (১৪)।

আরেক ওপেনার আব্দুল মজিদ টাইমিং পেতে ধুঁকছিলেন শুরু থেকেই। তিনে নেমে রানের গতি একটু বাড়ান রিকি ওয়েসেলস। উইকেটে যাওয়ার পরপরই স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন নাজমুল অপুর বাঁহাতি স্পিনে। খেলেন বেশ কটি রিভার্স সুইপ।

আউটও হন রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়েই। আবুল হাসানের স্লোয়ারে ক্যাচ তুলে দেন উমর আকমলের হাতে (২২ বলে ৩২)।

উইকেটে ১০ ওভার কাটিয়েও ছন্দ পাননি মজিদ। কিছু দিন আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেঞ্চুরি করা ওপেনার টি-টেয়েন্টিতে করলেন ২৫ বলে ১৫!

এরপর খুলনাকে টেনেছেন কেবল মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে যখন রানের গতি বাড়ানোর পালা, বাগড়া দিয়েছেন আবুল হাসান। একের পর এক স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করেছেন খুলনার ব্যাটসম্যানদের।

ছক্কা মারার চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়েছেন মাহমুদউল্লাহ (২১ বলে ৩২)। পরের বলেই আবুল হাসান ফিরিয়েছেন অলক কাপালিকে।

হ্যাটট্রিক পাননি, তবে শেষ ওভারে আরও দুই উইকেট নিয়ে আবুল হাসান পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। বিপিএলে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৫ উইকেট আছে আর কেবল আল আমিন হোসেনের।

শেষ দিকে খুলনার রান কিছুটা বাড়িয়েছেন আরিফুল হক। শেষ ওভারের প্রথম বলে আবুল হাসানকে ছক্কা মারেন এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। শেষ দুই বলে টানা দুই চারে শেষ করেন পাকিস্তানি মোহাম্মদ আসগর।

তখন কে জানত, সেই দুটি চারই হয়ে শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠবে মহামূল্য! দু দলের ব্যবধান হয়ে থাকবে একটি চারের চেয়েও কম!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৩৩/৮ (মজিদ ১৫, পুরান ১৪, ওয়েসেলস ৩২, মাহমুদউল্লাহ ৩২, শুভাগত ৩, অলক ১১, আরিফুল ১৪, শফিউল ০, জুনাইদ ০*, আসগর ৮*; সামি ০/২৩, ফরহাদ ০/৮, মিরাজ ১/১৫, নাজমুল ০/২২, স্যামি ০/১৮, প্যাটেল ১/১৮, আবুল হাসান ৫/২৮)G

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৩৩ (মুমিনুল ৬৪, নুরুল ৪, সাব্বির ৪, আকমল ০, প্যাটেল ১০, স্যামি ৩১, আবুল হাসান ৩, ফরহাদ ৪, সামি ১, মিরাজ ০*, নাজমুল ০*; শফিউল ২/২৯, জুনাইদ ৪/২৩, আসগর ১/২১, মোশাররফ ০/২৪, শুভাগত ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ৩/৬, অলক ০/১২)।

ফল: খুলনা টাইটানস ৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ