এক বার উদ্বোধন করে চার দিন পর আবার নতুন করে শুরু হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চতুর্থ আসর। বিকেল থেকে কালো মেঘে আকাশ ঢাকা থাকলেও কোনো ঝামেলা ছাড়াই হলো পুরো ম্যাচ। মাশরাফি বিন মুর্তজার কুমিল্লাকে ২৯ রানে হারাল তামিম ইকবালের চিটাগং।
টস হেরে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬১ রান তুলেছিল চিটাগং। কুমিল্লা থমকে যায় ৮ উইকেটে ১৩২ রানে।
চিটাগং বড় পুঁজি পেয়েছিল তামিম ও শোয়েব মালিকের দারুণ দুটি ইনিংসে। এবারের বিপিএলের প্রথম অর্ধশতক উপহার দেন তামিম। কার্যকর এক ইনিংস খেলেছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মালিক। পরে বল হাতে কুমিল্লাকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি মোহাম্মদ নবি। অফ স্পিনে নিয়েছেন ২২ রানে ৪ উইকেট।
মন্থর উইকেটে ১৬২ রান তাড়া ছিল এমনিতেই কঠিন। নিজেদের কাজটা আরও কঠিন করে তুলেছিল কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। শুরু থেকেই ধুঁকেছে তারা।
থমকে যাওয়া রানের গতিতে খানিকটা প্রাণ এনেছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পেরে ওঠেননি তিনিও (১৮ বলে ২৩)। ব্যর্থ লিটন দাস, আসহার জাইদিরাও।
গত আসরে এই চিটাগংয়ের বিপক্ষেই পাঁচে নেমে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন মাশরাফি। এবার নেমেছিলেন ছয়ে। কিন্তু করতে পারেননি পুনরাবৃত্তি। পাকিস্তানী ইমাদ ওয়াসিমও পারেননি ব্যাট হাতে দারুণ কিছু করতে।
দুই প্রতিশ্রুতিশীল দুই তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত ও আল আমিন জুটি গড়তে পেরেছেন; তবে পরিস্থির দাবি মেটাতে পারেননি। শান্ত শেষটা অবশ্য করেছেন দারুণ। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিন আহমেদকে মেরেছেন চারটি চার। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ৪৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৪ রানে। তবে কুমিল্লার হার নিশ্চিত হয়ে গেছে বেশ আগেই।
এর আগে কুমিল্লার বোলারদের উড়িয়েছেন তামিম। নিজের মনোভাবটা তিনি বুঝিয়ে দেন ম্যাচের শুরুতেই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বেরিয়ে এসে মাশরাফিকে কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারেন চার। মিতব্যয়ী বোলিংয়ের জন্য পরিচিত সোহেল তানভিরকে দুটি চার মারার পর ছক্কা মারেন মাথার ওপর দিয়ে।
আরেক পাশে আক্রমণাত্মক ডোয়াইন স্মিথকে উইকেটে বেধে রাখেন ইমাদ ওয়াসিম ও তানভির। শেষ পর্যন্ত বড় শট খেলতে গিয়েই ফিরেছেন স্মিথ। ইমাদকে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন লং অনে।
স্মিথ আউট হওয়ার আগে ইমাদের ওই ওভারেই জীবন পান তামিম। ২৩ রানে কাভারে তার ক্যাচ ছাড়েন নাহিদুল ইসলাম। যেটির খেসারত সরাসরিই দিতে হয় টি-টোয়েন্টি অভিষিক্ত এই অলরাউন্ডারকে। নাহিদুলের অফ স্পিনে বেরিয়ে এসে কাভারের ওপর দিয়ে বল ওড়ান তামিম। ওই ওভারেই মারেন আরেকটি চার। ৩২ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করেন চিটাগং অধিনায়ক।
ফেরার সময় এনামুলের ওপর খুব একটা খুশি মনে হয়নি তামিমকে। খানিক পর রান আউট নিয়তি মেনে নিতে হয় এনামুলকেও। ফেরেন স্যামুয়েলসের সরাসরি থ্রোতে (১৮ বলে ২২)।
সেখান থেকেই চিটাগংয়ের হাল ধরেন মালিক, দারুণ সঙ্গ দেন জহুরুল। দুজনের জুটিই দলকে টেনে নিয়ে যায় বাকি পুরো সময়।
১ রানে মাশরাফির বলে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে জীবন পান জহুরুল। সেটি তিনি কাজে লাগিয়েছেন যথাসাধ্য। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২১ বলে ২৯ করে। ২৮ বলে অপরাজিত ৪২ মালিক।
দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪১ বলে ৬০। চিটাগং ছাড়িয়েছে ১৬০। শেষ পর্যন্ত যেটির ধারে কাছে যেতে পারেনি কুমিল্লা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৬১/৩ (তামিম ৫৪, স্মিথ ৯, এনামুল ২২, মালিক ৪২*, জহুরুল ২৯*, মাশরাফি ০/৩৪, ইমাদ ১/২২, তানভির ০/২৮, নাহিদুল ০/২৩, জাইদি ০/১৮, শরিফ ০/৩৩)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৩২/৮ (লিটন ১৩, ইমরুল ৬, স্যামুয়েলস ২৩, শান্ত ৫৪*, জাইদি ২, মাশরাফি ১, ইমাদ ৪, আল আমিন ১৪, তানভির ০, শরিফ ২*, স্মিথ ১/২২, রাজ্জাক ১/২৩, মিলস ১/২৮, নবি ৪/২২, মালিক ০/৩, তাসকিন ১/৩১)।
ফল: চিটাগং ভাইকিংস ২৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নবি