ভালো দিনটি হতে পারত আরও ভালো

এক বলে চাই চার রান, নাকি ছক্কা? দিনের শেষ বলে মাহমুদউল্লাহর শট দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে তেমন কিছুই। শেষ সময়টুকু, শেষ বলটা নিরাপদে পার করে দেওয়াই যেখানে অবশ্যপালনীয় নিয়ম, মাহমুদউল্লাহ চাইলেন বুঝি বলটিকে স্টেডিয়ামের বাইরে ফেলতে। খেসারত উইকেট হারিয়ে, অস্বস্তিকর শেষ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2016, 09:04 AM
Updated : 29 Oct 2016, 02:38 PM

৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১২৮ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ, শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে ইংল্যান্ডকে। দ্বিতীয় দিন শেষে সন্তুষ্টই থাকার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু অস্বস্তি হয়ে বিঁধছে দুটি কাঁটা। ইংল্যান্ডের নবম উইকেট জুটি আর শেষ বলে মাহমুদউল্লাহর আত্মহত্যা। নইলে ভালো দিনটি বাংলাদেশের হতে পারত দারুণ!

প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে তুলেছে ৩ উইকেটে ১৫২। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২২০ রানের জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৪ রানে।

সকালে বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ছিলেন দুর্দান্ত। রেকর্ড গড়ে আবারও ৬ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এক সময় লিড নেওয়ার আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদের জুটিতে সেটি শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে হতাশায়।

সেই হতাশা নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ২৪ রানের ঘাটতি দ্রুতই পুষিয়ে দেন দুজন।

প্রথম ইনিংসে যেখানে শেষ করেছিলেন, তামিম শুরু করেছিলেন সেখান থেকেই। দারুণ সব শট খেলে চমকে দেন ইংলিশ বোলারদের। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ ইমরুলের শুরুটা ছিল সতর্ক। পরে শট খেলেছেন তিনিও। ১০ ওভারেই দুজন তুলে ফেলেন ৫৬ রান।

দারুণ শুরুর পর হঠাৎ জোড়া ধাক্কা। লেগ স্টাম্পে থাকা বল লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জাফর আনসারিকে প্রথম উইকেট উপহার দেন তামিম (৪০)। প্রথম ইনিংসে বড় জুটিতে তামিমের সঙ্গী মুমিনুল হকও তাকে অনুসরণ করেন দ্রুত। ১ রানেই বেন স্টোকসের বলে বাজে শটে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে।

ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহ সেই ধাক্কা সামাল দিয়েছেন দারুণভাবে। মাহমুদউল্লাহ শুরু করেছিলেন দারুণ দুটি চারে। চাপে কুঁকড়ে না গিয়ে বরং শট খেলে ইংলিশদেরই চাপে ফেলে দেন দুজন।

মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে যথারীতি ছিল সৌন্দর্য্যের ছটা। সুইপ আর রিভার্স সুইপে ইংলিশ স্পিনারদের নাজেহাল করে ছেড়েছেন ইমরুল।

৬৫ বলে অর্ধশতক ছুঁয়েছেন ইমরুল। দিনশেষে অপরাজিত ৫৯ রানে। মাহমুদউল্লাহও ছিলেন অর্ধশতকের কাছাকাছি। হয়ত শেষ বলে চেষ্টা করছিলেন সেটি ছোঁয়ারই। হলো হিতে বিপরীত!

এর আগে বাংলাদেশকে বিদ্ধ করেছে ইংলিশদের নবম উইকেট জুটি। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছিল ৪৯ রানে। এদিন ইংল্যান্ডের নবম উইকেট জুটি তুলেছে ৯৯ রান!

অথচ মিরাজ ও তাইজুলের স্পিনে সকালে ইংল্যান্ড ছিল বিপাকে। দিনের শুরুতেই মইন আলিকে ফেরান মিরাজ। আরেক প্রান্তে দিন শুরু করা তাইজুল ইসলাম ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকসকে। ইংল্যান্ডের আগের টেস্টের নায়ক এবার কাটা পড়েছেন শূন্য রানে।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আবারও প্রতিরোধ গড়েছিল ইংল্যান্ড। এখানেও দৃশপটে আবারও মিরাজ। স্কিড করা সোজা বলে এলবিডব্লিউ জনি বেয়ারস্টো (২৪)। পরে জাফর আনসারিকে ফিরিয়ে মিরাজ নেন পঞ্চম উইকেট। এই প্রথম ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের কেউ।

আরেক প্রান্তে দারুণ এক বলে জো রুটের শেকড় উপড়ে ফেলেন তাইজুল। ইংল্যান্ড তখন ৮ উইকেটে ১৪৪। পঞ্চাশ রানের আশেপাশে লিডের আশায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে গুটিয়ে যাওয়ার বদলে ওকস ও রশিদের জুটি গেল এগিয়ে, গুঁড়িয়ে দিল লিডের আশা। পুরোনো ও নরম বলে ধার হারালেন স্পিনাররা। নবম ও দশম ব্যাটসম্যানের জন্য রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে মুশফিকুর রহিমও আলগা করে দিলেন ফাঁস। এর আগে উইকেটের পেছনে যথারীতি ছেড়েছেন দুটি ক্যাচ।

শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভেঙেছে দ্বিতীয় নতুন বলে। মিরাজেই প্রথম ওভারেই শুভাগত হোমের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ওকস (৪৬)। পরের ওভারে ফিনকে ফিরিয়ে তাইজুল ইতি টানেন ইনিংসের।

সকালের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গিয়েছিল মাঝের হতাশায়। বিকেলের স্বস্তিটা মুছে দিচ্ছে শেষ বলের উইকেট। দিন শেষে হয়ত খানিকটা এগিয়ে বাংলাদেশই। তবে দুটো অস্বস্তির কাটা না থাকলে দিনটি পুরোপুরি হতো বাংলাদেশের। হয়ত ম্যাচটিও!

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২০

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮১.৩ ওভারে ২৪৪ (কুক ১৪, ডাকেট ৭, রুট ৫৬, ব্যালান্স ৯, মইন ১০, স্টোকস ০, বেয়ারস্টো ২৪, আনসারি ১৩, ওকস ৪৬, রশিদ ৪৪*, ফিন ০; মিরাজ ৬/৮২, সাকিব ১/৪১, তাইজুল ৩/৬৫, কামরুল ০/১৬, শুভাগত ০/৮, সাব্বির ০/১২)।

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩১ ওভারে ১৫২/৩ (তামিম ৪০, ইমরুল ৫৯*, মুমিনুল ১, মাহমুদউল্লাহ ৪৭; ফিন ০/১৮, মইন ০/৩৪, আনসারি ২/৩৩, স্টোকস ১/২০, রশিদ ০/৩০, ওকস ০/১৪)।