মিরাজের দিনে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

দিনের শুরুতে তিনি, মাঝে তিনি, শেষেও তিনি। দিনটাই মেহেদী হাসান মিরাজের! অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনটি বল হাতে রাঙালেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। মহা গুরুত্বপূর্ণ টসটি হারলেও দিনশেষে হাসিমুখেই মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 06:27 AM
Updated : 20 Oct 2016, 06:27 AM

বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন মিরাজ। মইন আলি ও জনি বেয়ারস্টো লড়াই করেছেন, তবে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি কেউ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ২৫৮।

ম্যাচের আগে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ২২ গজ হাজির হলো তেমন চেহারাতেই। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের শুরু থেকেই মিলল টার্ন!

প্রথম ইনিংসটি গুরুত্বপূর্ণ বলেই টস জয়টা খুব করে চাইছিলেন মুশফিক। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচেই হারার পর টস ভাগ্য এবারও সহায় হয়নি বাংলাদেশের। দেশের সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়ার ম্যাচে টস জেতেন অ্যালেস্টার কুক।

তিন জন অভিষিক্তকে নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। তাদের একজনকে দৃশ্যপটে দেখা যায় দ্রুতই।

ব্যাটিংয়ের নেমেই মিরাজের ঘূর্ণির মুখোমুখি হয় ইংলিশরা। দ্বিতীয় ওভারেই এই অফ স্পিনারকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। শুরু থেকেই উইকেটে গ্রিপ পান মিরাজ; টার্ন, বাউন্সে প্রথম ওভার থেকেই ভোগাতে থাকেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের।

বাংলাদেশে আসার পর থেকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই রান পেয়েছেন বেন ডাকেট। কিন্তু অভিষিক্ত এই ওপেনারকে এ দিন যেন অথই জলে ফেলে দেন মিরাজ। কয়েকবার আউট হতে হতে বেঁচে যান ডাকেট।

শেষ পর্যন্ত ডাকেটকে মিরাজ ফেরান অফ স্পিনারদের জন্য স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে। বোলিং ক্রিজের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল থেকে করা ডেলিভারি লেগ স্টাম্পে পিচ করে টার্ন করে ডাকেটের (১৪) ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পে।

নিজের পরের ওভারেই মিরাজের দ্বিতীয় সাফল্য। রাউন্ড আর্ম ডেলিভারি স্কিড করে ভেতরে ঢুকে চুমু খায় গ্যারি ব্যালান্সের প্যাডে (১)। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হন মুশফিক।

এই দুই আউটের মাঝে নিজের প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসান ফিরিয়ে দেন কুককে (৪)। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে চেয়ে পারেননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। বল তার গ্লাভসে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে।

টানা তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের রান তখন ৩ উইকেটে ২১!

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মইনকে নিয়ে সেই বিপর্যয় সামাল দেন জো রুট। লাঞ্চের আগে রুট খেলেছেন দারুণ। দেখিয়ে দেন, মন্থর-টার্নিং উইকেটে কিভাবে কিভাবে সামলাতে হয় স্পিন। তৃতীয় উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়েন দুজন।  

লাঞ্চের পরও আবারও উজ্জ্বল সেই মিরাজ। স্লিপে সাব্বিরের হতে ধরা পড়েন রুট (৩৮)। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ভেতরে ঢোকা অসাধারণ ডেলিভারিতে সাকিব ফেরান বেন স্টোকসকে (১৮)।

আরেক পাশে ধুঁকতে ধুঁকতেও টিকে যান মইন। তিনবার আম্পায়ার আউট দেন তাকে, তিন বারই বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। এড়িয়েছেন তিনি বাংলাদেশ অধিনায়কের দুটি রিভিউও।

ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো আর মইন এগিয়ে নেন ইংল্যান্ডকে। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটি ৮৮ রানের।

চা-বিরতির পর আবার বাংলাদেশের সহায় সেই মিরাজ। টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া দারুণ এক ডেলিভারিতে সরিয়ে দেন মইন-বাধা (৬৮)।

মিরাজের ভূমিকা শেষ নয় ওখানেই। দারুণ খেলতে থাকা বেয়ারস্টোর (৫২) বেলস উড়িয়ে ভাসেন ৫ উইকেটের আনন্দে। আদিল রশিদকে নিয়ে বাকি সময়টুকু পার করে দেন ক্রিস ওকস।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই যাকে মনে করা হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত, দ্রুতই তিনি নিজেকে উপস্থাপন করলেন যেন বর্তমানে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনেই ৬৪ রানে ৫ উইকেট। সারা দিনে একাই বোলিং করেছেন ৩৩ ওভার!

অনুকূল উইকেটে দারুণ বোলিং করেছেন সাকিব। আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলামও চেষ্টা করেছেন চাপ ধরে রাখতে। পেসারদের করার ছিল সামান্যই।

প্রথম দিনেই উইকেটে যেভাবে ধরেছে স্পিন, মিলেছে গ্রিপ ও টার্ন, তাতে প্রথম ইনিংসের রান ও ব্যবধান বড় ভুমিকা রাখতে পারে ম্যাচের ভাগ্যে। তবে আপাতত প্রথম দিনে এগিয়ে বাংলাদেশই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯২ ওভারে ২৫৮/৭ (কুক ৪, ডাকেট ১৪, রুট ৪০, ব্যালান্স ১, মইন ৬৮, স্টোকস ১৮, বেয়ারস্টো ৫২, ওকস ৩৬*, রশিদ ৫*; শফিউল ০/৩৩, মিরাজ ৫/৬৪, কামরুল ০/৪১, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ০/২৮, সাব্বির ০/১১, মাহমুদউল্লাহ ০/১৭, মুমিনুল ০/০)।