প্রথম দিনে ইংল্যান্ড ২৫৮/৭

মইন আলি ও জনি বেয়ারস্টোর অর্ধশতকে প্রথম দিন শেষে চট্টগ্রাম টেস্টে ৭ উইকেটে ২৫৮ রান করেছে ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম দিনটি রাঙিয়ে রাখা মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ৫ উইকেট। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নেন দুই উইকেট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 03:36 AM
Updated : 20 Oct 2016, 02:30 PM

২১ রানে তিন উইকেট হারানো ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে অর্ধশতক করা মইন আলি ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে। ক্রিস ওকস ৩৬ ও আদিল রশিদ ৫ রানে অপরাজিত।

৮২তম ওভারে  মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন জনি বেয়ারস্টো (১২৬ বলে ৫২)। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ২৩৭/৭। এর আগে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পর দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে এক বছরে এক হাজার রান করার কৃতিত্ব দেখান তিনি। অভিষেকে বাংলাদেশের সপ্তম বোলার হিসেবে টেস্টে ৫ উইকেট পেলেন মিরাজ।

মইন আলিকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ ভাঙেন মিরাজ। ৬৮তম ওভারে এই অফ স্পিনারের বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন ১৭০ বলে ৬৮ রান করা মইন। অভিষিক্ত মিরাজের এটি চতুর্থ উইকেট। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ১৯৪/৬।

দ্বিতীয় সেশনে জো রুট ও বেন স্টোকসের উইকেট হারিয়ে আরও ৯০ রান যোগ করে ইংল্যান্ড। মইন আলি ও জনি বেয়ারস্টোর দৃঢ়তায় চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১৭৩/৫। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে দুজন ৬৭ রানের জুটি গড়েন।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে মইন আলির ব্যাটে। ১২৭ বলে অর্ধশতক করেন তিন বার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের রিভিউ নেওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যায় ৪৯তম ওভারে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মইন আলির এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না নিলে রিভিউ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। ৮০ ওভার পর্যন্ত আর কোনো রিভিউয়ের সুযোগ নেই স্বাগতিকদের।

৪১তম ওভারে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরেন বেন স্টোকস। একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বল সামলাতে সামনে এগিয়ে খেলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। কিন্তু বল তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত হানে। দলকে চাপে ফেলে ১০৬ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন স্টোকস।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই বিপজ্জনক জো রুটকে বিদায় করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৯ বলে ৫ চারে ৪০ রান করা রুটের ব্যাট ছুঁয়ে আসা ক্যাচটি ছিল উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের। অধিনায়ক পারেননি, বল তার হাঁটুতে লেগে খানিকটা উঠে যায়। স্লিপে থাকা সাব্বির ঝাঁপিয়ে তা তালুবন্দি করেন। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে রুট ফেরার পর ইংল্যান্ডের স্কোর ৮৩/৪।

এর আগে সাকিব আল হাসানের দুই ওভারের মধ্যে তিন বার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মইন আলি। লাঞ্চের আগে প্যাডে লাগার আগে বল হালকাভাবে ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়ায় বেঁচে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে সাকিবের পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে দুইবার আম্পায়ার আউট দেন মইনকে। দ্রুত রিভিউ নেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথমবার বেঁচে যান বল লেগ স্টাম্প মিস করায়। পরেরবার ইমপ্যাক্ট অফ স্টাম্পের বাইরে হওয়ায়।

জো রুট ও মইন আলির ব্যাটে শুরুর বিপর্যয়টা কাটিয়ে উঠে ইংল্যান্ড। লাঞ্চের সময় রান ৩ উইকেটে ৮১।

অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় শিকার গ্যারি ব্যালান্স। অফ স্পিনারের রাউন্ড আর্ম ডেলিভারি স্কিড করে ভেতরে ঢুকে চুমু খায় তার প্যাডে (৭ বলে ১)। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হন মুশফিকুর রহিম।দ্বাদশ ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।
একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের বলে বোল্ড হন অ্যালেস্টার কুক (২৬ বলে ৪)। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে চেয়ে পারেননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। বল তার গ্লাভসে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। নড়বড়ে ইনিংস খেলে কুক ফেরার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১৮/২।
রেকর্ড গড়া অ্যালেস্টার কুকের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেতে নেমেছিলেন অভিষিক্ত বেন ডাকেট। ব্যাটিংয়ের নেমেই মিরাজের ঘূর্ণির মুখোমুখি হয় ইংলিশরা। দ্বিতীয় ওভারেই এই অফ স্পিনারকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। শুরু থেকেই উইকেটে গ্রিপ পান মিরাজ; টার্ন, বাউন্সে প্রথম ওভার থেকেই ভোগাতে থাকেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের। দশম ওভারে বোলিং ক্রিজের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল থেকে করা মিরাজের ডেলিভারি লেগ স্টাম্পে পিচ করে টার্ন করে বেন ডাকেটের (১৪) ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পে। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ১ উইকেটে ১৮ রান।

টস করতে নেমেই ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড শুধু নিজের করে নেন অধিনায়ক কুক (১৩৪)। সাবেক অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্টকে পেছনে ফেলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির। এই ম্যাচ দিয়ে সাড়ে ১৪ মাস পর বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ফিরল বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম টেস্টে একসঙ্গে অভিষেক হয় বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারের। সাব্বিরের মাথায় টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন সাকিব আল হাসান। মিরাজকে পরিয়ে দেন মুশফিকুর রহিম। কামরুলকে টেস্ট ক্যাপ দেন সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ।

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেন শফিউল ইসলাম। দলের আরেক পেসার রাব্বি। অলরাউন্ডারসহ আট ব্যাটসম্যান থাকায় মুশফিকুর রহিমের দলের ব্যাটিং গভীরতা যথেষ্ট।

স্পিন আক্রমণে সাকিবের সঙ্গে আছেন তাইজুল ইসলাম। অফ স্পিনে মিরাজের সঙ্গে আছেন মাহমুদউল্লাহ। লেগ স্পিন-অফ স্পিন দুটোই করতে পারেন সাব্বির। মুমিনুল হকও করতে পারেন বাঁহাতি স্পিন।

তিন টেস্ট পর আবার গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়ান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

ইংল্যান্ড দলে স্পিনার ৩ জন। অভিষেক হয় বাংলাদেশ সফরে এ পর্যন্ত চারটি অর্ধশতক করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেন ডাকেটের। অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের অবসরের পর এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উদ্বোধনী জুটিতে অধিনায়ক কুকের নবম সঙ্গী।

১১ বছর পর আবার টেস্টে ফিরলেন অফ স্পিনার গ্যারেথ ব্যাটি।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং নেন কুক। 

বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শফিউল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯২ ওভারে ২৫৮/৭ (কুক ৪, ডাকেট ১৪, রুট ৪০, ব্যালান্স ১, মইন ৬৮, স্টোকস ১৮, বেয়ারস্টো ৫২, ওকস ৩৬*, রশিদ ৫*; শফিউল ০/৩৩, মিরাজ ৫/৬৪, কামরুল ০/৪১, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ০/২৮, সাব্বির ০/১১, মাহমুদউল্লাহ ০/১৭, মুমিনুল ০/০)।