ব্রাভো বীরত্বের পরও জিতল পাকিস্তান

ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ড্রাইভ শট, টাইমিংয়ের গড়বড়ে বল ভাসল বাতাসে। ফুটবলের গোলকিপারের মত বাঁদিকে ঝাপিয়ে দারুণ ক্ষীপ্রতায় বল মুঠোবন্দী করলেন বোলার। রাজ্যের হতাশায় মাথা নুইয়ে ফেললেন ব্যাটসম্যান। হাঁটুগেড়ে বসে রইলেন ব্যাটে ভর দিয়ে! খানিকপর ধীর পদক্ষেপে ২২ গজ থেকে ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটা, যেন শরীরটা টেনে নিচ্ছিলেন কোনোরকমে। ম্যাচের ভাগ্যটাও লেখা হয়ে গেল তখনই!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2016, 07:20 PM
Updated : 18 Oct 2016, 05:28 AM

অসাধারণ ধৈর্য, মনোযোগ, স্কিল আর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অভাবনীয় এক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন ড্যারেন ব্র্যাভো। মেলে ধরেছিলেন টেস্ট ব্যাটসম্যানশীপের অনুপম প্রদর্শনী। ক্ষনিকের ভুল আর ইয়াসির শাহর দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে সমাপ্তি পৌনে সাত ঘন্টার লড়াই। অনুমিত ভাবেই এরপর আর পেরে ওঠেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দুবাই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৬ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। তবে ম্যাচের তিনদিন পর যতটা সহজ জয় ছিল অনুমেয়, জিততে হলো তাদের ততটাই কঠিন পথে। প্রথম ইনিংসে একজনের ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়া পাকিস্তান, প্রথম ইনিংসে ২২২ রানের লিড পাওয়া দলটিই ছিল হারের শঙ্কায়। শেষ পর্যন্ত পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ইতিহাসের দ্বিতীয় দিবা-রাত্রি টেস্ট হয়ে থাকল টেস্ট ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন।

৩৪৬ রান তাড়ায় শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ২৫১ রান। পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৮ উইকেট। দিনের প্রথম বলেই মারলন স্যাময়েলসকে ফেরান মোহাম্মদ আমির। বেশিক্ষণ টেকেননি জার্মেইন ব্ল্যাকউডও।

ব্রাভো ঠিকই আগলে ছিলেন একপাশ। প্রতিরোধে সঙ্গী পান রোস্টন চেইসকে। প্রায় দুই ঘন্টা টিকে যায় এই জুটি। পাকিস্তানী বোলাররা উপায় খুঁজে পাচ্ছিলো না জুটি ভাঙার। হঠাৎই চেইসের ধৈর্য্যচ্যুতি। ইয়াসিরকে স্পিনের বিপরীতে একটি চার মারার পরের বলে আবার পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় বোল্ড। ভাঙল ২৮ ওভারে ৭৭ রানের জুটি। পরের ওভারেই অসাধারণ এক ইয়র্কারে শেন ডাওরিচকে ফেরান ওয়াহাব রিয়াজ।

ব্রাভো ছিলেন বলেই তবু ছিল ক্যারিবিয়ানদের আশা। দারুণ সঙ্গ দেন অধিনায়ক হোল্ডার। ২১১ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ব্রাভো। ৪৭ টেস্টে তার অষ্টম সেঞ্চুরি, ৫টিই করলেন এশিয়ায়!

ব্রাভো আর হোল্ডারের ব্যাটে একটু একটু জয়ের পথে এগিয়ে যেতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে পাকিস্তানের। কিন্তু ইয়াসিরের সেই বল আর ফিরতি ক্যাচে শেষ হয় ব্রাভোর ম্যারাথন ইনিংস। ৪০৬ মিনিটে ২৪৯ বলে ১১৬!

পাকিস্তানীদের উল্লাস আর ক্যারিবিয়ানদের হতাশাই বলে দিচ্ছিল, ম্যাচ শেষ আসলে তখনই। পরের কিছুক্ষণে সারা হলো আনুষ্ঠানিকতা। হোল্ডার টিকে ছিলেন, কিন্তু ছিল না সঙ্গী। হেরে যাওয়ার আতঙ্কেই হয়ত শেষ দুই ব্যাটসম্যান রান আউট।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রানে ৮ উইকেট নিয়েও তাই হেরে যাওয়া দলে বিশু। দুই ইনিংসে প্রায় ১৪ ঘন্টা ব্যাট করে পাঁচশর বেশি বল খেলার বীরত্ব দেখিয়েও হেরে যাওয়া দলে ব্রাভো। আর প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে হারের স্বাদ পাওয়ার শঙ্কা থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হাতে হাসলেন আজহার আলি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৭৯/৩ (ডি.)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৫৭

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১২৩

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য: ৩৪৬; আগের দিন ৯৫/২) ১০৯ ওভারে ২৮৯ (ব্র্যাথওয়েট ৬, জনসন ৪৭, ব্রাভো ১১৬, স্যামুয়েলস ৪, ব্ল্যাকউড ১৫, চেইস ৩৫, ডাওরিচ ০, হোল্ডার ৪০*, বিশু ৩, কামিন্স ১, গ্যাব্রিয়েল ১; আমির ৩/৬৩, সোহেল ০/২২, ইয়াসির ২/১১৩, নওয়াজ ২/৩২, ওয়াহাব ১/৪৭)

ফল: পাকিস্তান ৫৬ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আজহার আলি।