আগের ম্যাচে শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে গড়ানো দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তা আর হয়নি। স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ে স্বাগতিকদের কম রানে বেঁধে রাখার পর আসগর স্তানিকজাই ও মোহাম্মদ নবির দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঠিকই জিতেছে আফগানিস্তান।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এসেছে ১-১ সমতা। আগামী শনিবারের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে হয়ে গেছে ফাইনাল।
বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চার বল আগে অলআউট হওয়ার আগে ২০৮ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে দুই বল বাকি থাকতে ৮ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। শুরুতেই আক্রমণে আসা সাকিব আল হাসান তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন নওরোজ মঙ্গল ও রহমত শাহকে। শর্ট এক্সট্রা কাভারে তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দেন মঙ্গল। আগের ম্যাচে প্রতিরোধ গড়া রহমত এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন শূন্য রানে।
ফিরে বিপজ্জনক মোহাম্মদ শাহজাদকে বিদায় করেন সাকিব। তার বলে স্লগ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন আফগানিস্তানের বিস্ফোরক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
ষোড়শ ওভারে ৬৩ রানে আফগানদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ তখন খানিকটা বাংলাদেশের দিকে ঝুকে ছিল। তবে পরের বোলিং ব্যর্থতায় চাপটা ধরে রাখতে পারেনি অতিথিরা। শেষের দিকে উইকেটও কিছুটা সহজ হয়ে এসেছিল। সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজ লাগান আসগর স্তানিকজাই ও মোহাম্মদ নবি।
এক প্রান্তে মোসাদ্দেক আঁটসাঁট বল করলেও অন্য প্রান্তে সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি তাইজুল ইসলাম। তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেনও ছিলেন অনুজ্জ্বল।
নবিকে ফিরিয়ে ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৬১ বলে ৪৯ রান করা নবি তার বলে এলবিডব্লিউ হন। এই উইকেটে আশা জেগে উঠে স্বাগতিকদের।
নিজের শেষ ওভারে ফিরে রশিদ খানকে ফেরান সাকিব। মিরপুরে এটি তার শততম ওয়ানডে উইকেট। সেই ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট পেতে পারতেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তবে অনেকটা ছুটেও বল তালুবন্দি করতে পারেননি সৌম্য সরকার।
মোসাদ্দেকের বলে নাজিবুল্লাহকে স্টাম্পড করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক। শেষ ওভারে তাসকিন ফেরান নাজিবুল্লাহকে। তবে চার হাঁকিয়ে দলকে দারুণ জয় এনে দেন দৌলত জাদরান।
৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব বাংলাদেশের সেরা বোলার।
এর আগে অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবিকে দিয়ে এদিন বোলিং আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তান। নতুন বলে পেসার দৌলত জাদরানও আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রাখেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে।
শর্ট বলে চড়াও হতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন তামিম। রানে ফেরার লড়াইয়ে থাকা সৌম্য অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন।
৫ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। ইমরুল কায়েস বাদ পড়ায় তিনে উঠে আসেন মাহমুদউল্লাহ, চারে খেলেন মুশফিক।
মুশফিক ক্রিজে আসতেই দুই প্রান্তে লেগ স্পিনার নিয়ে আসেন আফগান অধিনায়ক। তবে তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক।
দুই জনের দৃঢ়তায় এক সময়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেট ১১১ রান। সেখান থেকে এক ধসে ৪০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।
ধসের শুরু ৬১ রানের জুটি ভেঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। পেসার নাভিন উল হকের স্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হন তিনি।
বাংলাদেশের দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান ফিরেন আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।
জীবন পাওয়ার পর নবির সেই ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কানায় লেগেছিল বল।
রশিদের লেগ স্পিনে আবার বিদায় হন সাব্বির। প্রথম ম্যাচের মতো এবার গুগলিতে বিতর্কিত এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তিনি। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে বল তার ব্যাটের কানায় লেগেছিল।
ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে দলকে ভীষণ বিপদে দেখেন মোসাদ্দেক। এই তরুণের ওপর চাপ কমাতে গিয়ে আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সফল হননি, নবির বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
তাইজুল ইসলামের কাছ থেকে কিছুটা সঙ্গ পান মোসাদ্দেক। ঠাণ্ডা মাথায় দলের সংগ্রহ যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়ার দিকে ছিল তার মনোযোগ। জুটিটা সবে জমে উঠছে এমন সময়ে রশিদের ফ্লিপারে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তাইজুল।
পরের বলে আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রশিদ। তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া রুবেল হোসেন খেলেন ছোট্ট কিন্তু কার্যকর এক ইনিংস।
সাত নম্বরে নামা মোসাদ্দেক ছোট্ট ইনিংসেই দেখিয়েছেন নিজের টেম্পারমেন্ট-সামর্থ্যের প্রমাণ। নিজে খেলেছেন, খেলিয়েছেন ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান রুবেলকে।
শেষ ওভারে রুবেল রান আউট হওয়ার আগে দশম উইকেটে তার সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন মোসাদ্দেক। ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন এই তরুণ। তার ৪৫ বলের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।
উইকেটে বল একটু থেমে আসছিল। বল খানিকটা ঘুরছিল। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে দুর্বোধ্য হয়ে উঠছিলেন আফগান স্পিনাররাও। বিশেষ করে গুগলি বুঝতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন নবি। শেষ ৫ ওভারে তিনটি মেডেনসহ মাত্র ৪ রান দেন তিনি। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ১৬ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন এই অফ স্পিনার।
৩৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের সেরা বোলার রশিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২০৮ (তামিম ২০, সৌম্য ২০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মুশফিক ৩৮, সাকিব ১৭, সাব্বির ৪, মোসাদ্দেক ৪৫*, মাশরাফি ২, তাইজুল ১০, তাসকিন ০, রুবেল ১০; রশিদ ৩/৩৫, নবি ২/১৬, আশরাফ ২/২৩, রহমত ১/৩০, নাভিন ১/৪৯)
আফগানিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২১২/৮ (শাহজাদ ৩৫, মঙ্গল ১০, রহমত ০, শাহিদি ১৪, স্তানিকজাই ৫৭, নবি ৪৯, নাজিবুল্লাহ, রশিদ ৫, আশরাফ ৯*; দৌলত ৪*; সাকিব ৩/৪৭, মোসাদ্দেক ২/৩০, মাশরাফি ১/৩১, তাসকিন ১/৩২)
ফল: আফগানিস্তান ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ নবি