রেকর্ডময় ম্যাচ জিতে সিরিজ ইংল্যান্ডের

গত বছর বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর থেকেই ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য পালাবদলের শুরু। আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট দিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসেই ধারাই পাল্টে দিয়েছে তারা। তবে মঙ্গলবার ইংলিশরা ছাপিয়ে গেল যেন নিজেদেরও!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 05:09 AM
Updated : 31 August 2016, 05:09 AM

দলীয় রান আর বাউন্ডারিতে বিশ্বরেকর্ড, এক গাদা ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়ে ট্রেন্ট ব্রিজে রান উৎসব করল ইংল্যান্ড। সেই রান বন্যায় ভেসে গেল পাকিস্তান। তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল ওয়েন মর্গ্যানের দল। ৫ ম্যাচ সিরিজে জিতল প্রথম ৩ ম্যাচই।

রেকর্ডের শুরুটা ছিল অ্যালেক্স হেলসকে দিয়ে। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন হেলস। এরপর জস ব্যাটলারের ব্যাটে এল ইংল্যান্ডের দ্রততম অর্ধশতক। ওয়েন মর্গ্যানের ব্যাটেও ঝড়। কথা বলেছে জো রুটের ব্যাটও। সব কিছুর যোগফল, ওয়ানেডে ইতিহাসে রানের চূড়ায় ইংল্যান্ড। ৫০ ওভারে রেকর্ড ৩ উইকেটে ৪৪৪ রান!

ওয়ানডে ক্রিকেটই এটিই দলীয় সর্বোচ্চে রান। পেছনে পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কার ৪৪৩। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আমস্টেলভিনে ৯ উইকেটে ৪৪৩ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা।

রেকর্ড গড়তে শেষ ওভারে ৬ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। পাকিস্তানের নবীন পেসার হাসান আলির প্রথম পাঁচ বল থেকে আসে মাত্র একটি সিঙ্গেল আর একটি বাই। শেষ বলে বাটলারের বাউন্ডারিতে ইংল্যান্ড উঠে যায় নতুন উচ্চতায়।

দিন ৪৩টি চার মেরেছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা, ১৬টি ছক্কা, মোট ৫৯ বাউন্ডারিতে ছুঁয়েছে তারা শ্রীলঙ্কার রেকর্ড।

এমন রেকর্ড ভাঙা রান উৎসবের ইঙ্গিত ছিল না ইনিংসের প্রায় অর্ধেক জুড়েই। ২০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ১২৩। রান রেট ছয়ের একটু বেশি।

প্রথম অর্ধশতক করতে হেলস খেলেন ৫৫ বল। এরপরই ঝড় ওঠে হেলসের ব্যাটে। জোয়ার আসে ইংল্যান্ডের রানের গতিতেও। ৮৩ বলে সেঞ্চুরি করেন হেলস।

সেখানেই না থেমে ছাড়িয়ে যান ইংল্যান্ডের হয়ে আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রবিন স্মিথের ১৬৭ রানকে। ১২২ বলে ১৭১ করে আউট হন হেলস। ৪টি ছক্কার পাশে মেরেছেন ২২টি বাউন্ডারি। যেটিও ইংল্যান্ডের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল স্ট্রাউসের ১৯ বাউন্ডারি।

ওপেনার জেসন রয় ১৫ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে হেলসের জুটি ২৪৮ রানের। ৮৬ বলে ৮৫ করে আউট হন রুট।

এই দুজন বিদায় নিলেও থামেনি ঝড়। জস বাটলার ও ওয়েন মর্গ্যান বরং ব্যাট হাতে তোলেন টর্নেডো। উইকেটে যাওয়ার পরপরই বাটলার জোড়া ছক্কা মারেন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে। একটু পর শোয়েব মালিকের এক ওভারে চারটি ছক্কায় বাটলার স্পর্শ করেন অর্ধশতক। মাত্র ২২ বলে, ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে যা দ্রুততম।

আরেক পাশে মর্গ্যানও চালিয়েছেন তাণ্ডব। অর্ধশতক করেছেন ২৪ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ২৭ বলে ৫৭ করে অপরাজিত মর্গ্যান। আর ৭টি করে চার ও ছক্কায় ৫১ বলে অপরাজিত ৯০ বাটলার।

চতুর্থ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে রান এসেছে মাত্র ৭২ বলে ১৬১! শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তুলেছে ১৩৫ রান।

পাকিস্তানের বোলারদের বোলিং বিশ্লেষণের চেহারা করুণ। ‘সেঞ্চুরি’ করেছে তাদের এক বোলারও। রান দেওয়ার সেঞ্চুরি! ১০ ওভারে ১১০ রান গুণেছেন ওয়াহাব রিয়াজ।

ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম ইনিংস শেষেই। দেখার ছিল শুধু ব্যবধান। ওপেনিংয়ে শারজিল খান ৩০ বলে ৫৮ করেছেন, তবে পাকিস্তান উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত। মিডল অর্ডারে দাঁড়াতে পারেরনি কেউ। এক পর্যায়ে তো ছিল নিজেদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের শঙ্কা। সেখান থেকে স্কোরটা ভদ্রস্থ করেছেন মোহাম্মদ আমির।

ইয়াসির শাহকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৭৬ রানে জুটি গড়েছেন আমির। এগারো নম্বরে নেমে নিজে করেছেন ২৮ বলে ৫৮! ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম অর্ধশত করল শেষ ব্যাটসম্যান।

তবে রেকর্ড রান হজম করে সিরিজ হারের দিনে ছোটখাটো ব্যক্তিগত অর্জন কী আর সান্ত্বনা হতে পারে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৪৪৪/৩ (রয় ১৫, হেলস ১৭১, রুট ৮৫, বাটলার ৯০*, মর্গ্যান ৫৭*; আমির ০/৭২, হাসান ২/৭৪, ওয়াহাব ০/১১০, নওয়াজ ১/৬২, ইয়াসির ০/৪৮, আজহার ০/২০, মালিক ০/৪৪)।

পাকিস্তান: ৪২.৪ ওভারে ২৭৫ (আসলাম ৮, শারজিল ৫৮, আজহার ১৩, বাবর ৯, সরফরাজ ৩৮, মালিক ১, নওয়াজ ৩৪, হাসান ৪, ওয়াহাব ১৪, ইয়াসির ২৬*, আমির ৫৮;উড ১/৭৫, ওকস ৪/৪১, প্লাঙ্কেট ১/৩০, স্টোকস ১/১৪, মঈন ১/৩৬, রশিদ ২/৭৩)।