হেরাথের ঘূর্ণিতে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ

দিনের প্রথম ওভারটি করতে মিচেল স্টার্ক সময় নিলেন ৬ মিনিটের বেশি। পরের ওভারে জশ হেইজেলউডের শরীরও যেন চলে না। বুট বদলানোর প্রয়োজন হলো। নানা ছুতোয় চলল সময় ক্ষেপণ। রঙ্গনা হেরাথ বুঝি তখন মুচকি হাসছিলেন। এই ভঙ্গুর অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দিতে কতটা সময়ই আর লাগে!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2016, 11:10 AM
Updated : 17 August 2016, 12:22 PM

কয়েক ঘণ্টা পর হেরাথের মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। দর্শকের অভিনন্দনের জবাব দিলেন বল উঁচিয়ে। ল্যাপ অব অনার দিল গোটা দল। অস্ট্রেলিয়া ততক্ষণে বিধ্বস্ত ও সিংহাসনচ্যুত। সময় ঢের বাকি! দিনের খেলা বাকি প্রায় ৩৯ ওভার!

শেষ দিনটা যেন গোটা সিরিজেরই প্রতিচ্ছবি। লঙ্কান স্পিনে ছন্নছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। শেষ টেস্টে ১৬৩ রানের জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০তে হারাল শ্রীলঙ্কা। টেস্টের কুলীন দল অস্ট্রেলিয়াকে এই প্রথমবার দিল হোয়াইটওয়াশের স্বাদ!

অথচ এবারের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেবল একটি মাত্র টেস্ট জিততে পেরেছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও ঘরের দলই ছিল ‘আন্ডারডগ।’ র‌্যাঙ্কিংয়ে ছিল সাত নম্বরে, দলে তরুণ আর অনভিজ্ঞের ছড়াছড়ি। সেই দলটিই উড়িয়ে দিল টেস্টের এক নম্বর দলকে! হোয়াইটওয়াশ হয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও হারিয়েছে স্টিভেন স্মিথের দল।

শেষ দিনটা গোটা সিরিজের প্রতীকী আরেকটি দিক থেকেও। শেষ দিনের নায়ক, সিরিজেরও নায়ক। রঙ্গনা হেরাথ! আরও একবার চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে শেষ দিনে নিয়েছেন ৭ উইকেট। ম্যাচে উইকেট ১৩টি! ৩৮ বছরের তরুণ এই বাঁহাতি স্পিনারের কাছেই আবার ধরাশায়ী অস্ট্রেলিয়া।

সকালে ৪.৩ ওভারে ৩৫ রান যোগ করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে সাতে নেমে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে আটে নেমে অপরাজিত ৬৫ ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। এই প্রথম ছয়ের নিচে নেমে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করলেন শ্রীলঙ্কার কোনো ব্যাটসম্যান।

অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ৩২৪ রান। যদিও সেটা কেবল অঙ্কের হিসাব। আসল সমীকরণ ছিল তাদের ৮৩ ওভার টিকে থাকা। পারেনি তারা ধারেকাছে যেতে।

শুরুটা যদিও ছিল আশা জাগানিয়া। দুই দল মিলিয়েই সিরিজের সেরা উদ্বোধনী জুটি গড়েন শন মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। স্পিনে দারুণ খেলেছেন দুজন। ওয়ার্নার খেলেছেন স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক শট।

জুটির ছন্দপতন কুসল মেন্ডিসের অসাধারণ এক ক্যাচে। দিলরুয়ান পেরেরার বলে শর্ট লেগে শন মার্শের দুর্দান্ত এক রিফ্লেক্স ক্যাচ নিলেন মেন্ডিস। ভাঙল ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।

পতনের সেই শুরু। পরের সব জুটি মিলিয়ে করতে পারল মাত্র ৮৩ রান। হেরাথের ঘুর্ণি ছোবলে অসহায় একের পর এক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। ১ উইকেটে ১০০ থেকে শেষ ৯ উইকেট হারাল তারা ৬০ রানে।

অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ, শ্রীলঙ্কার তরুণ দলটির অসাধারণ অর্জন। আর এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দুর্দশা প্রকটভাবে ফুটে উঠল আরও একবার। এশিয়ায় সবশেষ তিন সফরেই হোয়াইটওয়াশড হলো তারা। ভারতের বিপক্ষে ৪-০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০, এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৫৫

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৭৯

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩৪৭/৮ (ইনিংস ঘোষণা)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২৪) ৪৪.১ ওভারে ১৬০ (শন মার্শ ২৩, ওয়ার্নার ৬৮, স্মিথ ৮, ভোজেস ১, হেনরিকেস ৪, মিচেল মার্শ ৯, নেভিল ২, স্টার্ক ২৩, লায়ন ১২, হেইজেলউড ০, হল্যান্ড ০*; হেরাথ ৭/৬৪, দিলরুয়ান ২/৭১, ধনাঞ্জয়া ০/১৫)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ১৬৩ রানে জয়ী

সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ৩-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ ও সিরিজ: রঙ্গনা হেরাথ