বৃহস্পতিবার করাচির আগা খান হাসপাতালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান হানিফ। ফুসফুসের ক্যান্সার পরবর্তী জটিলতা নিয়ে এখানেই কিছু দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সাবেক এই ওপেনার। ২০১৩ সালে তার ক্যানসারের চিকিৎসা হয়েছিল লন্ডনে।
তাকে পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেট মহাতারকা মনে করা হয়। সুনিল গাভাস্কার ও শচিন টেন্ডুলকারের নামের পাশে ‘লিটল মাস্টার’ তকমা জুড়ে গেলেও ক্রিকেটের প্রথম বা আসল লিটল মাস্টার বলা হয় হানিফকেই। তবে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই ওপেনার ব্যাটিং সামর্থ্যে ও কীর্তিতে ছিলেন বিশাল।
গিলক্রিস্ট-অ্যাটকিনসনদের বিপক্ষে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় সেই ইনিংসে ৯৭০ মিনিট ব্যাট করেছিলেন হানিফ। সময়ের দিক থেকে টেস্টের দীর্ঘতম ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড হয়ে যেটি টিকে আছে এখনও।
২০১৪ সালে বেন্ডন ম্যাককালামের ট্রিপল সেঞ্চুরির আগে হানিফের ইনিংসটিই ছিল দলের দ্বিতীয় ইনিংসে একমাত্র ত্রিশতক।
ওই ইনিংসের পরের বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হানিফ খেলেছিলেন ৪৯৯ রানের অনন্য সাধারণ একটি ইনিংস। দিনের শেষ বলে ৫০০ রান পূর্ণ করতে গিয়ে সেবার রান আউট হয়ে যান হানিফ। প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড হয়ে যেটি টিকে ছিল ৩৫ বছর। ১৯৯৪ সালে ৫০১ রানের ইনিংসে সেই রেকর্ড ভাঙেন ব্রায়ান লারা।
পাকিস্তানের অভিষেক টেস্টসহ ৫৫ টেস্ট খেলেছেন হানিফ। ৪৩.৯৮ গড়ে ১২ সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৩ হাজার ৯১৫।
তখনকার ঢাকা স্টেডিয়াম, এখনকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলেছেন ৫টি টেস্ট। পাকিস্তান দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলেছিল ঢাকাতেই।
পরিসংখ্যান অবশ্য তাকে পুরোটা বোঝাকে পারবে না। নিখুঁত টেকনিক, দুর্দান্ত ডিফেন্স আর অসাধারণ টেম্পারমেন্ট ছিল তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। আকাশে ভাসিয়ে শট খেলতে ছিল চরম অনীহা। তবে প্রয়োজনে আক্রমণাত্মকও হতে পারতেন। ধারণা করা হয়, রিভার্স সুইপ শট ক্রিকেটে প্রথম খেলেছিলেন তিনিই। প্রয়োজনে করতে পারতেন উইকেটকিপিংও।
হানিফের তিন ভাই ওয়াজির, সাদিক ও মুশতাক মোহাম্মদ খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেট। আরেক ভাই রাইস মোহাম্মদ খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, ছিলেন টেস্টের দ্বাদশ ব্যক্তি। হানিফের ছেলে শোয়েব মোহাম্মদ খেলেছেন ৪৫ টেস্ট। শোয়েবের ছেলে শেহজার মোহাম্মদ খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট।
খেলা ছাড়ার পর একটি জনপ্রিয় ক্রিকেট ম্যাগাজিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হানিফ। দুই যুগ ধরে সম্পাদনা করেছেন তিনি। অবসান হলো মাঠের ভেতরে-বাইরে ক্রিকেট নিয়ে সেই বর্ণাঢ্য জীবনের।