শামি, যাদবের দাপটে ফলো অনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মোহাম্মদ শামি ও উমেশ যাদবের দাপটে প্রথম টেস্টে ফলো অনে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।  ক্রেইগ ব্রেথওয়েইট ও শেন ডরিচের দুই মেজাজের দুই অর্ধশতক স্বাগতিকদের আবার ব্যাটিংয়ে নামা ঠেকাতে পারেনি।  

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 09:58 PM
Updated : 23 July 2016, 10:04 PM

ফলো অনে ব্যাট করতে নেমেও শুরুটা ভালো হয়নি ক্যারিবীয়দের। তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় প্রথম ইনিংসে প্রতিরোধ গড়া ক্রেইগ ব্রেথওয়েইটকে ফিরিয়ে দিয়েছে ভারত।

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শনিবারের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১ উইকেটে ২১ রান।  রাজেন্দ্র চন্দ্রিকা ৯ ও ড্যারেন ব্রাভো ১০ রানে ব্যাট করছেন।  ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ৩০২ রান চাই স্বাগতিকদের।

শট খেলছেন না এমন ব্যাটসম্যানকে মন্থর উইকেটে আউট করা খুবই কঠিন কাজ।  এন্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিন সেই কাজটা দারুণভাবে করেছেন শামি ও যাদব।  ফিরেই দারুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এক বছরের বেশি সময় ধরে মাঠের বাইরে থাকা শামি।

১ উইকেটে ৩১ রান নিয়ে খেলা শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারত।  নিরাপদে প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন ব্রেথওয়েইট ও নাইটওয়াচম্যান দেবেন্দ্র বিশু।

উইকেটের জন্য কত কিছুই না করেছে অতিথিরা।  উইকেট পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিরাট কোহলি এক প্রান্তে দুই ওভার পরপর বোলার পরিবর্তন করেছেন।  পেসাররা বাইরের কানা নেওয়ার জন্য শর্ট বল করেছেন।  বোলাররা ক্রিজে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে চেষ্টা করেছেন।  কিন্তু কাজ হচ্ছিল না, মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানের দিকে মনোযোগী ছিল না।  সুযোগটা নেয় ভারত।  ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগ নিয়ে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজায় তারা।   তবে শুরুর দিকে ভাগ্যেরও কিছুটা সহায়তা পেয়েছে স্বাগতিকরা।  তিন বার ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ বল পড়ায় বেঁচে যান ক্রেইগ ব্রেথওয়েইট।  অন্তত সাতবার অল্পের জন্য বিশুর বাইরের কানা নেয়নি বল।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আগে এদিন অমিত মিশ্রকে বোলিংয়ে আনেন কোহলি।  লেগ স্পিনারই দিনের প্রথম সাফল্য এনে দেন দলকে।  তার বলে স্টাম্পড হন বিশু।  শেষ ব্যাটসম্যান শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকেও আউট করেন মিশ্র।  মাঝের সময়ে রাজত্ব করেন দুই পেসার- শামি ও যাদব।

কদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ড্যারেন ব্রাভো আউট হন লাঞ্চের মিনিট পাঁচেক আগে।  শামির অফ স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

দ্বিতীয় সেশনের পঞ্চম ওভারে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমানের গ্লাভসবন্দি হন টেস্টে বাজে সময় কাটানো মারলন স্যামুয়েলস।   সেই ওভারের শেষ বলে জার্মেইন ব্ল্যাকউডকেও ফেরান শামি।  তার দাপটে ২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

শামির ঝাপটা সামলে অভিষিক্ত রোস্টন চেইজকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ক্রেইগ ব্রেথওয়েইট।  পরপর দুই ওভারে ৫ রানের মধ্যে তাদের দুই জনকেই বিদায় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফলো অনকে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেন যাদব।

শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে কোহলির তালুবন্দি হন চেইজ।   চা-বিরতির মিনিক বিশেক আগে যাদবের লাফিয়ে উঠা বলে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরেন ক্রেইগ ব্রেথওয়েইট।  এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ২৯১ মিনিট ব্যাট করে ২১৮ বলে করেন ৭৪ রান।

উইকেটরক্ষক শেন ডরিচের সঙ্গে অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ৬৯ রানের জুটিতে আবার প্রতিরোধ গড়ে স্বাগতিকরা।  দ্বিতীয় নতুন হোল্ডার ও কার্লোস ব্রেথওয়েইটকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন যাদব।  তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন ডরিচ। 

শেষের দিকে ভারতের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দলের সংগ্রহ ২৪৩ পর্যন্ত নিয়ে যান ডরিচ। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থকেন ৫৭ রানে।

প্রথম ইনিংসে ভারতের যাদব ও শামি চারটি করে উইকেট নেন।  এই ইনিংসে ঋদ্ধিমানের ডিসমিসাল ছয়টি।  ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ভারতীয় কোনো উইকেটরক্ষকের আগের সেরা ডিসমিসাল ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চারটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:                                   

ভারত প্রথম ইনিংস: ৫৬৬/৮ ডিক্লে.

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৯০.২ ওভারে ২৪৩ (ক্রেইগ ব্রেথওয়েইট ৭৪, চন্দ্রিকা ১৬, বিশু ১২, ব্রাভো ১১, স্যামুয়েলস ১, ব্ল্যাকউড ০, চেইজ ২৩, ডরিচ ৫৭*, হোল্ডার ৩৬, কার্লোস ব্রেথওয়েইট ০, গ্যাব্রিয়েল ২; শর্মা ২০-৭-৪৪-০, যাদব ১৮-৮-৪১-৪, শামি ২০-৪-৬৬-৪, অশ্বিন ১৭-৫-৪৩-০, মিশ্র ১৫.২-৪-৪৩-২)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৩ ওভারে ২১/১ (ব্রেথওয়েইট ২, চন্দ্রিকা ৯*, ব্রাভো ১০*; শর্মা ৪-২-৩-১, শামি ৪-২-২-০, যাদব ৩-১-৮-০, অশ্বিন ২-০-৮-০)