রুট মহাকাব্যের পর ধুঁকছে পাকিস্তান

প্রথম দিন শেষেই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের গ্যালারি। পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল প্রতিপক্ষ। দ্বিতীয় দিন চা-বিরতির পরও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। করতালিতে মুখর ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ছুটে এসে অভিননন্দন জানালেন পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা। ড্রেসিং রুমে ফিরছেন তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত জো রুট, তবে মুখে তৃপ্তির ছাপ!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 06:18 PM
Updated : 23 July 2016, 07:08 PM

গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই বারবার অর্ধশতক করেও আউট হচ্ছিলেন তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এই ইনিংসে যেন পণ করেছিলেন সেই আক্ষেপ পেছনে ফেলার। ম্যারাথন এক ইনিংস খেলে দলকে তুললেন রান পাহাড়ে। সেই পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে দ্বিতীয় দিনেই হাঁসফাঁস পাকিস্তানী ব্যাটিংয়ের।

রুটের ক্যারিয়ার সেরা ২৫৪ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৮৯ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। পাকিস্তান দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে। ফলো অন এড়াতেই চাই আরও ৩৩৩ রান!

ম্যাচের প্রথম সকালে প্রথম আধঘণ্টাতেই মাঠে নেমেছিলেন রুট। আউট হলেন দ্বিতীয় দিন চা-বিরতির খানিক পর। ১০ ঘন্টা ১৪ মিনিটে ৪০৬ বলে ২৫৪। স্ট্রাইক রেট প্রায় ৬৩, কিন্তু ছিল না চার-ছক্কার ফুলঝুরি। দারুণ নিয়ন্ত্রিত ইনিংসটায় ১০৮ রান নিয়েছেন বাউন্ডারি থেকে (২৭টি চার), সমান ১০৮ রান নিয়েছেন সিঙ্গেলে!

১৪১ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন রুট। ক্রিস ওকসের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটি এদিন সকালেও ভোগায় পাকিস্তানকে। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করে ওকস ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন ইয়াসির শাহকে। লাঞ্চের আগে পাকিস্তানের সাফল্য ১০৩ রানের ওই জুটি ভাঙাই।

লাঞ্চের পর রুট ছুঁয়ে ফেলেন দ্বিশতক। ইয়াসিরকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারিতে মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৫৫ বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারে যেটি তার দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আগেরটি ছিল দু বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডসে ঠিক অপরাজিত ২০০। রুটের ডাবল সেঞ্চুরি শটেই রান দেওয়ার দ্বিশতক পূর্ণ হয় ইয়াসিরের!

চোট কাটিয়ে ফেরা বেন স্টোকস শুরু করেছিলেন ভালো। কিন্তু ওয়াহাব রিয়াজকে উইকেট উপহার দেন ডাউন দ্য লেগ ক্যাচ দিয়ে। তবে পাকিস্তানের স্বস্তি মেলেনি। জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে রানের গতিতে জোয়ার আনেন রুট।

শেষ পর্যন্ত ওয়াহাব রিয়াজকে আকাশে তুলে রুট থামলেন চা-বিরতির পরপর। রুটের ২৫৪ রানের আগে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ডাবল সেঞ্চুরি ছিল একটিই। ১৯৫৮ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ডেনিস কম্পটনের ২৭৮।

রুট বিদায় নিলেও খেলা চালিয়ে যায় ইংল্যান্ড। বেয়ারস্টো ৫৮ রানে আউট হলে ইনিংস ঘোষণা করেন অ্যালেস্টার কুক। ততক্ষণে ইংল্যানড পেয়ে গেছে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড পুঁজি।

আগের টেস্টে দলকে জেতানোর নায়ক ইয়াসির দেখলেন মুদ্রার উল্টোপিঠ। ৫৪ ওভার বল করে মাত্র ৬টি মেডেন, ২১৩ রানে জুটেছে মোটে একটি উইকেট। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ইতিহাসে এই প্রথম দুশ’ রান গুণল কোনো বোলার।

আগের সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিন গ্রেট বিল ও’রিলি। ১৯৩৪ অ্যাশেজে দিয়েছিলেন ১৮৯ রান। পাকিস্তানের বোলারেদের মধ্যে ইংল্যান্ডের মাটিতে সবচেয়ে খরুচে আগে ছিলেন ফজল মাহমুদ। ১৯৬২ সালে ওভালে ৪৯ ওভারে গুণেছিলেন ১৯২ রান।

বোলারদের ব্যর্থতার ধাক্কা সামলাতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও। উদ্বোধনী জুটিতে ঘণ্টাখানেক টিকে ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও শান মাসুদ। এরপর মাসুদ টিকে গেছেন, কিন্তু আরেক পাশে ছিল ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া।

নাইটওয়াচম্যান রাহাত আলির আউটের আগে দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান আজহার আলি ও ইউনুস খান আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটু শটে।

পাকিস্তান তাই শঙ্কায় ফলো অনের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: (প্রথম দিন শেষে ৩১৪/৪) ১৫২.২ ওভারে ৫৮৯/৮ (ডিক্লে.) (রুট ২৫৪, ওকস ৫৮, স্টোকস ৩৪, বেয়ারস্টো ৫৮, মঈন ২*; আমির ২/৮৯, রাহাত ২/১০১, ওয়াহাব ৩/১০৬, ইয়াসির ১/২১৩, আজহার ০/৫২, মাসুদ ০/১৯)।

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৪ ওভারে ৫৭/৪ (হাফিজ ১৮, মাসুদ ৩০*, আজহার ১, ইউনুস ১, রাহাত ৪, মিসবাহ ১*; অ্যান্ডারসন ০/৭, ব্রড ০/৯, মঈন ০/১১, ওকস ৩/১৮, স্টোকস ১/১১)।