সাসেক্সের শেষ আটের স্বপ্নে মুস্তাফিজই ভরসা

মুস্তাফিজুর রহমানের সুবাদে বিলেতের বাঙালিরা এখন মনেপ্রাণে সাসেক্স শার্কসের সমর্থক। সারে ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড ওভালে তাই দলে দলে বাঙালিরা সমবেত হয়েছিলেন এই তরুণ সেনসেশনের জাদু দেখতে। কিন্তু আগের দিনের মতো সাউথ ইস্ট লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জ্বলে উঠতে পারেননি ‘দ্য ফিজ’, পারেনি তার দলও।

লন্ডন থেকে আবু মুসা হাসানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 04:05 PM
Updated : 23 July 2016, 04:05 PM

ওভালের গ্যালারিতে শত শত বাঙালি মুস্তাফিজ জাদু দেখতে জড়ো হলেও এ পর্বে সমর্থকদের প্রত্যাশা পুরণে ব্যর্থ এই পেসার। জাদু দেখাবেনই বা কিভাবে? নিজেকে মেলে ধরতে অন্তত কিছু আয়োজন তো প্রয়োজন। স্কোরবোর্ডে লড়াই করার মতো যথেষ্ট রানই যে ছিল না।

গত বৃহস্পতিবার মুস্তাফিজের অভিষেক ম্যাচে এসেক্স ঈগলস্ এর বিরুদ্ধে সাসেক্স ক্লাব ২০১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিতে পেরেছিল। তাই তো দীর্ঘ বিমান ভ্রমণে ক্লান্ত মুস্তাফিজ ম্যাচের আগের রাতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েও আলো ছড়াতে সক্ষম হন; মাত্র ২৩ রান দিয়ে চারটি উইকেট নিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটার ও সমর্থকদের চমকে দেন। তার নৈপুণ্যে পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে থাকা সাসেক্স ক্লাব চার নম্বরে উঠে আসে।

কিন্ত শুক্রবার দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুস্তাফিজের জাদু দেখার সুযোগ হলো না বাংলাদেশ ও বিলেতসহ বিশ্বব্যাপী সমর্থকদের। ওভালে সাসেক্সের খেলা দেখতে এসে মনে হয়েছে যেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলা দেখতেই এসেছি। ওভাল স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময়ই লন্ডনের কিংস ক্রসের একটি বাঙালি পরিবারের সাথে দেখা হয়ে গেল।  বাংলাদেশের জার্সি পড়া ভদ্রলোক জানালেন, মুস্তাফিজের জন্যই তারা এসেছেন। আমাদের স্ট্যান্ডেও আশে পাশে বেশ কয়েকজন বাঙালি দর্শক ছিলেন। সামনের সাড়িতে বসা ছিলেন একদল ক্যারিবিয়ান। আমাদের উৎসাহ দেখে ওরাও সাসেক্স ক্লাবকে সমর্থন জানাতে লাগলো। তবে খেলা শেষ হওয়ার পর চারদিকে বাঙালিদের ছড়াছড়ি দেখে মনে হলো, সাড়ে ২৪ হাজার দর্শক সম্বলিত স্টেডিয়ামে হাজার খানেক বাঙালি দর্শক ছিলেন।

সাসেক্স ক্লাবের এই হারের ফলে কেবল বাঙালি সমর্থকরাই হতাশ হননি, এই ফলে মুস্তাফিজের দলের কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলা আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। এসেক্সকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সাত থেকে এসেক্সকে টপকিয়ে সাসেক্স চার এ উঠলেও সারের কাছে হেরে ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে নেমে গেছে দলটি। অন্যদিকে, শুক্রবার অপর ম্যাচে কেন্ট স্পিটফায়ার্সকে হারিয়ে এসেক্স ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চার-এ অবস্থান করছে।

ইসিবি পারিচালিত ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্যায়ে প্রতিটি দল মোট ১৪ টি করে ম্যাচ খেলছে। সাউথ গ্রুপে নয়টি দলের মধ্যে এ পর্যন্ত হওয়া ম্যাচের ভিত্তিতে ১৩ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্লস্টারশায়ার। ১২ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গ্ল্যামরগ্যান। আর ১২ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে মিডলসেক্স আছে তৃতীয় স্থানে।

এসেক্স, সারে, সাসেক্স এবং কেন্ট- চারটি দলই এখন ১২ পয়েন্টের মালিক। তবে এই দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এসেক্স; কারন এসেক্সের এখনও দুটি ম্যাচ বাকি। আর সারে, সাসেক্স ও কেন্টের রয়েছে মাত্র একটি করে ম্যাচ। তাই আগামী ২৮ জুলাই মিডলসেক্স ও ২৯ জুলাই গ্ল্যামরগ্যানের বিপক্ষে জিতলে আর কোন হিসেব ছাড়াই কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে যাবে এসেক্স। তবে দুটি ম্যাচই এসেক্স হারলে সাসেক্সের শেষ আটে ওঠার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে। সেক্ষেত্রে মুস্তাফিজের সাসেক্সকে অবশ্যই ২৮ জুলাই গ্ল্যামরগ্যানের বিপক্ষে জিততে হবে। আর সেক্ষেত্রে এসেক্স যদি একটি ম্যাচ হারে তাহলে উভয় দলের সমান ১৪ পয়েন্ট থাকবে। তখন রান রেটের ভিত্তিতে চতুর্থ স্থান নির্ধারিত হবে।

আবু মুসা হাসান

তাই আগামী ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার গ্ল্যামরগ্যানের বিপক্ষে মুস্তাফিজের সাসেক্স ক্লাবের ম্যাচটি হবে বাঁচা-মরার লড়াই। কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার জন্য সাসেক্সকে তাদের শেষ ম্যাচটিতে অবশ্যই জিততে হবে এবং খুব ভালোভাবে জিততে হবে যেন এসেক্স ক্লাবের সঙ্গে সমান পয়েন্ট হলেও রান রেটে এগিয়ে যেতে পারে। সাসেক্স ক্লাবের প্রাণভোমরা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ কি আবার দলের ত্রাতা হতে পারবেন যেমনটি হয়েছিলেন অভিষেক ম্যাচে?

শুরুতেই লিখেছি যে, শুক্রবার শত শত বাঙালি দর্শককে হতাশ করে সাসেক্স হেরে গেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওভালে উপস্থিত বাঙালিরা কিন্তু মুস্তাফিজের ওপর থেকে আস্থা হারাননি। সকালে কথা হচ্ছিল লন্ডনের গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী অজান্তা দেব রায়ের সঙ্গে, “মুস্তাফিজ উইকেট পায়নি বলে মন খারাপ হয়েছে। তবে আমরা নিশ্চিত যে আগামী ম্যাচেই মুস্তাফিজ স্বরুপে ফিরে আসবেন।”

অজান্তারা ১৫ জন একসাথে হৈ-হল্লুড় করে খেলা দেখেছে। এরা সবাই বয়সে তরুণ এবং ছাত্র। “আমরা তো ওভালে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র মুস্তাফিজকে সমর্থন করতে। তাই আমরা মুস্তাফিজ-মুস্তাফিজ করে আর বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে শ্লোগান দিয়েছি। আমাদের আনন্দ উল্লাস দেখে সারে ক্লাবের সমর্থকরাও আমাদের সাথে শ্লোগান দিয়েছেন।”

অজান্তা মাঠে মোবাইল ফোন দিয়ে ফেইসবুকে লাইভ ভিডিও করে কমেন্ট্রি দিয়েছেন।

অজান্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে সাসেক্স এর হোম গ্রাউন্ডে মুস্তাফিজের জাদু দেখার জন্য। আমরাও হোভে গিয়ে খেলা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম সাউথ ওয়েস্ট স্ট্যান্ডে এখনও টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। তবে অতি দ্রুত টিকেট না কিনলে পরে টিকেট না পওয়ার আশংকা থাকবে।

লন্ডন, ২৩ জুলাই, ২০১৬

(লেখক সাবেক কূটনীতিক ও সাংবাদিক)