ফিরেই পাকিস্তানের নায়ক ইয়াসির

ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন ৩ মাস। অ্যাবোটাবাদে দলের বুট ক্যাম্পে বাধালেন চোট। হাঁটুর সেই চোটে ইংল্যান্ড সফরই ছিল শঙ্কায়। সব কিছু পেছনে ফেলে ঠিকই মাঠে ফিরলেন ইয়াসির শাহ। এশিয়ার বাইরে নিজের প্রথম টেস্টেই ছড়ালেন আলো।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2016, 06:04 PM
Updated : 15 July 2016, 06:04 PM

৫ উইকেট নিয়ে ইয়াসির নাম লেখালেন লর্ডসের বিখ্যাত অনার্স বোর্ডে। দিনের শুরুতে ব্যাটিংয়ের হতাশা ছাপিয়ে পাকিস্তান দিনটা নিজেদের করে নিল বোলিংয়ে। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৩৩৯ রানের জবাবে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ২৫৩ রানে।

একটা সময় ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডের জবাবটা হচ্ছিল দারুণ। রাহাত আলির দারুণ এক ডেলিভারিতে অ্যালেক্স হেলস ফিরেছিলেন শুরুতেই। দ্বিতীয় উইকেটে ১১০ রানের জুটি গড়েন অ্যালেস্টার কুক ও জো রুট।

দুজনই খেলছিলেন দারুণ স্বচ্ছন্দে। ১০ চারে মাত্র ৬০ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করেন কুক। এই ইনিংসের পথেই সুনিল গাভাস্কারকে (৯ হাজার ৬০৭) ছাড়িয়ে হয়ে যান টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ওপেনার।

তিন নম্বরে প্রমোশন পাওয়া রুটও এগিয়ে যাচ্ছিলেন অর্ধশতকের দিকে। হঠাৎই বিপত্তি। ইয়াসিরকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন ইংল্যান্ডের অন্যতম ভরসা (৪৮)।

এরপর আর গড়ে ওঠেনি বড় কোনো জুটি। এক পাশে কুক টিকে ছিলেন, আরেক পাশে ছিল ভিন্স-ব্যালান্সদের আসা যাওয়া। ভালো শুরু করেও টিকতে পারেননি বেয়ারস্টো-মইন।

কুকের প্রতিরোধ ভেঙেছেন মোহাম্মদ আমির। ৬ বছর পর লাল বল হাতে নেওয়া আমির শুরুর দিকে ছিলেন বিবর্ণ। তৃতীয় স্পেলে পান উইকেটের দেখা। বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন কুক (৮১)।

পাকিস্তানের তিন বাঁহাতি পেসারকে ভালোই সামলেছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। তবে তাদের জানা ছিল না ইয়াসিরের লেগ স্পিনের জবাব। ত্রয়োদশ টেস্টেই পেলেন পঞ্চম ৫ উইকেটের স্বাদ। চারটি উইকেটই এলবিডব্লিউ। এর দুটিতে রিভিউ নিয়ে রক্ষা হয়নি ব্যাটসম্যানের।

লর্ডসে সবশেষ কোনো লেগ স্পিনার ৫ উইকেট পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ইয়াসিরের পূর্বসূরি মুশতাক আহমেদ। প্রথম ইনিংসে লেগ স্পিনারে সবশেষ ৫ উইকেট ছিল সেই ১৯৭৬ সালে! পেয়েছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি ভগবৎ চন্দ্রশেখর।

ইয়ানসির-আমিরদের সামলে শেষ বিকেলে আধ ঘণ্টার মতো সময় চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় কাটিয়ে দেন ক্রিস ওকস ও স্টুয়ার্ট ব্রড।

সকালের চিত্রটা ছিল উল্টো। ইংলিশ পেসারদের তোপে সুবিধে করতে পারেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। চার উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা পাকিস্তান টিকতে পারেনি প্রথম ঘণ্টাও। যোগ করতে পেরেছে ৫৭ রান।

ক্রিস ওকস ও স্টুয়ার্ট ব্রড টানা বোলিং করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন শেষ ৪ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে ওকস থেমেছেন ৬ উইকেটে। শেষ দুটি উইকেট নিয়েছেন ব্রড।

আগের দিন রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি করা মিসবাহ-উল-হক এদিন আর করতে পেরেছেন মাত্র ৪ রান (১১৪)। অধিনায়কের আগেই বিদায় নিয়েছেন সরফরাজ আহমেদ। সকালে দারুণ শুরু করা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলে ক্যাচ দিয়েছেন পয়েন্টে।

পাকিস্তান গুটিয়ে যেতে পারত আরও কম রানে। শেষ জুটিতে মোহাম্মদ আমির ও ইয়াসির শাহ যোগ করেন ২৩ রান।

ইয়াসির পরে জ্বলে উঠলেন নিজের আসল কাজে। টানা দ্বিতীয় দিন হাসিমুখে মাঠ ছাড়ল পাকিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৮২/৬) ৯৯.২ ওভারে ৩৩৯ (মিসবাহ ১১৪, সরফরাজ ২৫, ওয়াহাব ০, আমির ১২, ইয়াসির ১১*; ব্রড ৩/৭১, বল ১/৫১, ওকস ৬/৭০, ফিন ০/৮৬, মঈন ০/৪৬. ভিন্স ০/১)।

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭১ ওভারে ২৫৩/৭(কুক ৮১, হেলস ৬, রুট ৪৮, ভিন্স ১৬, ব্যালান্স ৬, বেয়ারস্টো ২৯, মঈন ২৩, ওকস ৩১*, ব্রড ১১*; আমির ১/৬৫, রাহাত ১/৬৮, ওয়াহাব ০/৫৬, ইয়াসির ৫/৬৪)।