কেমন হলো ক্যাম্পের দল? বেশ কজন তরুণ ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন
মাশরাফি বিন মুর্তজা: তরুণরা পারফর্ম করেছে এবার ঢাকা লিগে। ওদের জন্য এখন ভালো সুযোগ এই ক্যাম্প। এখানে ফিটনেস নিয়ে কাজ হবে। লম্বা ক্যাম্প। ওরা এখনকার দলের পরিবেশ, কালচার, আবহ, এসব সম্পর্কে ধারণা পাবে।
৩০ জন সবাই তো আর মূল দলে থাকবে না। তবে শিখবে সবাই। নতুনদের যারা টেস্ট বা ওয়ানডে দলে সুযোগ পাবে, ক্যাম্পে থাকায় তারা মোটামুটি একটা ধারণা নিয়েই আসবে। যারা থাকবে না, তারাও বুঝবে কী দরকার, কিভাবে হয়। এই ধরণের ক্যাম্প তাই মাঝে মধ্যে খুব উপকারে দেয়।
আমার বিশ্বাস যারা ভালো করেছে, তাদের সামর্থ্য আছে বলেই ভালো করেছে। এখন ঘষেমেজে আরও ভালো করার পালা।
তরুণদের নামগুলো অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বরং শাহরিয়ার নাফিস, রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দী শুভর নাম একটু চমক জাগানিয়া…
মাশরাফি: আমি এটিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছি। যারা ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করবে, তারা পুরস্কার পাবেই। রকিবুল এবার লিগে সর্বোচ্চ রান করেছে, শাহরিয়ার গত কয়েক বছর থেকেই ভালো করছে। শুভর বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও অনেক ভালো হয়েছে।
তরুণদের জন্য যা বললাম, ওসব ওদের জন্যও সত্যি। ক্যাম্পে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারবে, নিজেদের স্কিল দেখানোর পর্যাপ্ত সুযোগও পাবে। ভালো করলে অবশ্যই দলে সুযোগ পাবে। আধুনিক ক্রিকেটে মাইক হাসির উদাহরণটা তো আছেই। বয়স কোনো ব্যাপার নয়। যদি আর ২-৩ বছরও ওরা দলকে সার্ভিস দিতে পারে, সেটাও কম নয়। ওদের জন্য খুব ভালো ব্যাপার তো বটেই, দেশের ক্রিকেটের জন্যও ভালো। দল থেকে বাদ পড়া আরও অনেকের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে ওরা।
মোসাদ্দেককে কেমন দেখলেন? লিগে যেভাবে ম্যাচ উইনার হিসেবে এসেছে, অনেকেই মনে করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত!
মাশরাফি: এখনও অতদূর বলার কিছু নেই। মুস্তাফিজের কথাই ধরুণ, সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, এখনও কিন্তু ওর শুরুর সময়টাই চলছে! শুরুর সবকিছু অনেক সময় সহজ হয়। যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, মোসাদ্দেক এল, ভালো করলো মানেই সে পুরো প্রস্তুত, ব্যাপারটা এমন নয়।
আমি দেখি উন্নতির রেখা। গ্রাফটা কোন দিকে। মোসাদ্দেকের গ্রাফটা সঠিক অ্যাঙ্গেলে আছে, ঊর্ধ্বমুখী। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে দ্রুত শিখছে। তবে ভালো করা বা শেখার শেষ নেই। এবার কিছু ইনিংস সে খেলেছে, এমন সব পরিস্থিতিতে যে আমি নিজেও কিছুটা অবাক হয়েছি। তার মানে সে বেড়ে উঠছে। এটা ধরে রাখতে পারলে, শেখার ইচ্ছেটা ধরে রাখতে পারলেই হয়।
ক্যাম্পে ডাক পায়নি, কিন্তু লিগে খুব মনে ধরেছে এমন কেউ আছে?
মাশরাফি: একটা ছেলে ছিল আমার দলে (কলাবাগান ক্রীড়া চক্র), হাসানুজ্জামান। আমি ওকে আগে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে পারিনি। আগেও বলেছি নিজের অপরাধবোধের কথা। এখনও বলছি, আরও বেশি সুযোগ দিলে নিশ্চিত আরও ভালো করত। ন্যাচারাল হিটার। খুব ভালো ভবিষ্যত আছে। আমি যতটুকু শুনলাম, এইচপিতে ওকে ব্যাটসম্যান কোটায় রাখতে পারে। আব্দুল মজিদ ভালো করেছে। এইচপিতে সুযোগও পেয়েছে।
মিরপুরে আপনার কলাবাগানের বিপক্ষেই খুব দুরূহ উইকেটে ভালো একটা ইনিংস খেলেছিল আল আমিন…
মাশরাফি: খুব স্লো উইকেট ছিল। বল টার্ন করছিল অনেক। সেখানে আরামে টাইমিং করেছে। দারুণ সব শট খেলেছে, সিঙ্গেল বের করেছে। আরও ২-৩টি ইনিংস ওর দেখেছি। ওকে আমার মনে হয়েছে, সত্যিকার অর্থেই ভালো। অনেক পরিণত হয়েছে, আমার মনে হয়।
ওর জন্য খুব ভালো হয়েছে যে এইচপিতে ডাক পেয়েছে। এইচপিতে থাকা মানে খুব দ্রুত শেখার সুযোগ। ফিটনেস নিয়ে কাজ হবে। ভুল শোধরানো হবে, নতুন অনেক কিছু শেখা হবে।
ভবিষ্যতের কথা ভাবলে, লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে পারেন কে?
মাশরাফি: এই মোসাদ্দেক, আল আমিনরাই ভবিষ্যতের জন্য বাজি। দুজনই দেখুন, ভালো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। খুব ভালো অফ স্পিন করে। দারুণ ফিল্ডার। মানে পরিপূর্ণ প্যাকেজ। সব আছে। এখন ওদেরকে যতটা পলিশড করা যায়। খালি চোখে দেখেই ওদেরটা বলা যায়। শান্ত (নাজমুল হোসেন) আছে। খুব সম্ভাবনাময়।
বোলিংয়ে কামরুল ইসলাম রাব্বি। খুব ভালো বল করেছে এবার। অনেক সম্ভাবনা আছে ওর। ওকে ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য খুব ভালো বোলার হতে পারে। আমি দেখব তাকেই, যার প্যাশন আছে। জোর করার পক্ষপাতি নই আমি। জোর করে আনলে হয় না। লম্বা সময় টানা যায় না। রাব্বির সেই প্যাশনটা আছে।