বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ফিরেছেন, এবারের বাড়ি ফেরা নিশ্চয়ই দারুণ আনন্দময় ছিল!
রুবেল হোসেন: অবশ্যই, খুব ভালো লেগেছে চুক্তি ফিরে পাওয়ায়। বাংলাদেশ দলে আসার পর থেকে একবারও চুক্তি থেকে বাদ পড়িনি। এবার বুঝলাম কত খারাপ লাগে। আমরা পেশাদার ক্রিকেটার, চুক্তি মানে একটা নিশ্চয়তাও। খুব খারাপ লাগছিল। বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমাকে দ্রুতই আবার ফিরিয়েছে। ৬ মাসের মত ছিলাম না চুক্তিতে। আমাকে বলেছে ৬ মাসের টাকাও কাটবে না, আরও কম কাটবে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে।
চুক্তিতে না রাখা তো ছিল আপনাকে একটা সতর্কবার্তা দেওয়া। শোনা যায়, চোটে পড়ার পর পুনর্বাসনের গাইডলাইন আপনি ঠিকভাবে মানেননি।
রুবেল: শান্তি না সতর্ক করা, বা অন্য কিছু; সে সব আমি ঠিক জানি না। একজন পেশাদার খেলোয়াড় তো কখনোই চায় না ইনজুরিতে পড়ে থাকতে। আমি গাফিলতি করিনি। নিজের অজান্তে কোনো ভুল হয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও আপনারা জানেন, আমার চিকিৎসাতেও খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে সে সব পেছনে ফেলে এসেছি। এখন পুরো ফিট।
রুবেল: প্রথমে খুব হতাশ হয়েছিলাম। পরে জেদ লেগেছে। তখন প্রিমিয়ার লিগটাই সুযোগ ছিল কিছু করে দেখানোর। আমি চেয়েছি প্রিমিয়ার লিগে যেন আগের ছন্দটা ফিরে পাই।
প্রিমিয়ার লিগে নিজের পারফরম্যান্সে কতটা সন্তুষ্ট?
রুবেল: চুক্তি ফিরে পাওয়াটাই বলে দিচ্ছে বেশ ভালোই করেছি। ১৫ ম্যাচে ১৯ উইকেট পেয়েছি। হয়ত উইকেট আর কিছু বেশি নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের এখানে জানেন যে পিচ ফাস্ট বোলারদের জন্য কিছু থাকে না। তবে আমাদের কোচ বা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন যে আমি প্রতি ম্যাচেই নিজেকে উজার করে বোলিং করেছি।
উইকেট সংখ্যার চেয়ে আপনার জন্য গতি ও ছন্দই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লিগের মাঝামাঝি থেকেই মনে হয়েছে আপনি পুরো গতিতে এবং ছন্দে বোলিং করছেন…
রুবেল: সেটাই বলছিলাম যে কখনও কখনও উইকেটের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ। আপনারা যেমন দেখেছেন, আমার নিজেরও মনে হয়েছে যে খুব ভালো অবস্থায় আছি। নিজের ভেতরে অনুভব করেছি যে সেরা অবস্থাটা ফিরে পেয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪৮-১৪৯ কিমি গতিতে বোলিং করার সময়, বলটা রিলিজ করার সময় বা ফলো থ্রুতে যেমন অনুভব করি, লিগেও তেমন করেছি। এজন্যই মনে হয়েছে, যে পুরো ছন্দ ফিরে পেয়েছি।
রুবেল: নাহ, ওটা আসলে হয়ে গেছে। হুট করেই শুরু করেছিলাম, দেখি বেশ ভালো লাগছে। দৌড় শুরুর আগে ওভাবে নিচু হলে শরীরটা একটু ছেড়ে দেয়, এটা কাজে লাগে। আর ওভাবে দৌড় শুরু করলে এক ধরনের জোশ চলে আসে ভেতরে; মনে হয় সামনে সব ভেঙেচুরে এগিয়ে যাই। সব মিলিয়ে একটা উদ্যম আসে। এজন্য প্রতি বলে সচেতনভাবেই এখন এটা করি।
গত বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সবশেষ খেলেছেন জাতীয় দলে। লম্বা সময় বাইরে থাকা নিশ্চয়ই অনেক কষ্টের!
রুবেল: অনেক মিস করি জাতীয় দল। দলে আসার পর সত্যি বলতে সেভাবে বাদ পড়িনি। ইনজুরিতে টুকটাক ম্যাচ মিস করেছি, এত লম্বা সময় বাইরে থাকিনি। এই সময়টায় বুঝেছি বাইরে থাকা কতটা হতাশার। অনেক খারাপ লেগেছে, বলে বোঝানোর নয়। এখন জাতীয় দলে ফেরাই আমার লক্ষ্য।
ঈদের পর ক্যাম্প শুরু হবে, আশা করি ডাক পাব। ক্যাম্পে নিজের ফিটনেস-ফর্ম দেখিয়ে আশা করি, আবার ফিরব জাতীয় দলে।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখন পেসার তো বেশ কজন আছেন। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে আল আমিন, মুস্তাফিজ। তাসকিন অ্যাকশন শুধরে হয়ত ফিরবেন শিগগির। আবু হায়দার রনি আছে, লিগে দারুণ করেছে কামরুল রাব্বি। প্রতিযোগিতার উত্তাপটা টের পাচ্ছেন?
রুবেল: এটা তো আমাদের দলের জন্য খুব ভালো। প্রতিযোগিতা বেশি মানেই পেস বোলিংয়ের মান বাড়ছে। সবাই ভালো করে জায়গা ধরে রাখতে চাইবে। তাতে দলেরই লাভ। দেশের ক্রিকেটেরও লাভ, আমাদের দেখে আরও অনেক পেসার উঠে আসতে চাইবে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি চ্যালেঞ্জ খুব পছন্দ করি। এই চ্যালেঞ্জটাও নিচ্ছি। নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেই দলে ফিরব এবং আবার জায়গা পাকা করব।
রুবেল: হ্যাঁ, আমি জানি টেস্টে ভালো করতে পারিনি। গড় অনেক বেশি। আমি আসলে ওয়ানডে ক্রিকেট বেশি উপভোগ করি। তবে এটা অজুহাত নয়; টেস্ট ক্রিকেটই তো আসল ক্রিকেট। নানা কারণে আগে হয়নি। আবার সুযোগ পেলে চেষ্টা করব যতটা সম্ভব ভালো করতে।
মাঠের বাইরের জীবন কেমন কাটছে? বিয়ে করেছেন, জীবন কতটা থিতু হলো?
রুবেল: সবকিছুই এখন খুব ভালো। বিয়ে একদিন করতে হতোই। করেছি এবং খুব ভালো আছি। জীবন আসলেই অনেক থিতু এখন। সবকিছুই বেশ গোছানো। অতীতের ভুলগুলো পেছনেই ফেলে এসেছি। ক্রিকেট বলুন বা জীবন, দুই ক্ষেত্রেই এখন সামনে তাকিয়ে আছি।