ভিক্টোরিয়া ক্লাবকে ঘিরে নতুন বিতর্ক

ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে তিন ক্রিকেটার ও দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দুই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে বিসিবির কাছে অভিযোগ করেছে ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি নেসারউদ্দিন আহমেদ কাজল। সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভিক্টোরিয়া অধিনায়ক ও অভিযুক্তদের অন্যতম নাদিফ চৌধুরি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 05:00 PM
Updated : 26 June 2016, 05:00 PM

নাদিফের পাল্টা অভিযোগ, বকেয়া পাওনার আলোচনা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতে এটা ক্লাব সভাপতির চাল।

প্রাপ্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার নাদিফের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়ার ক্রিকেটাররা বিসিবির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ভিক্টোরিয়ার সভাপতির অভিযোগ, লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে লিগের প্রথম পর্ব ও সুপার লিগের ম্যাচে ইচ্ছে করেই হারতে চেয়েছেন অধিনায়ক নাদিফ, সহ-অধিনায়ক সোহরাওয়ার্দী শুভ ও পেসার ডলার মাহমুদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ভিক্টোরিয়ার সভাপতি নিশ্চিত করলেন অভিযোগ জানানোর খবর।

“আমাদের বিশ্বাস, রূপগঞ্জের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই নাদিফ, শুভ ও ডলার ম্যাচ পাতানোয় জড়িত ছিল। সুপার লিগে রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচটি শেষেই আমরা নাদিফ ও শুভকে শোকজ করেছি। কিন্তু ওরা কোনো জবাব দেয়নি। এজন্যই আমরা চিঠি দিয়ে বোর্ডকে জানিয়েছি ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে। ডলারকে তখন শোকজ না করলেও পরে সন্দেহ হয়েছে বলে ওর কথাও জানিয়েছি।”

“আরও দুজন ক্রিকেটার, হুমায়ুন কবির শাহিন ও মাহমুদুল সেতুর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ দলের শৃঙ্খলা নষ্ট করা। ওরা দুজনই কোচকে গালাগাল করাসহ নানা সময়ে নানারকম গণ্ডগোল করেছে।”

ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকা সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা কঠিন হলেও নেসারউদ্দিনের দাবি, ম্যাচের গতিবিধি ও এই ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা দেখে সন্দেহ হয়েছে তাদের।

“রূপগঞ্জের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আমরা ৩১৪ করেছিলাম, ওদের ১২৭ রানে ৬ উইকেট নেই। সেখান থেকে ওরা শেষ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ টাই করে ফেলল। পরের ম্যাচে ওদের টার্গেট দিলাম ২৫৯, ওদের ৬ উইকেট নেই ৮৩ রানে। সেখান থেকে আবার ওরা ম্যাচ জিতে ফেলল।”

“দুটি ম্যাচেই নাদিফ সহজ ক্যাচ ছেড়েছে। ডলার ক্যাচ ছেড়েছে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়েছে হারতেই চায়। ডলার ফিট ছিল না, তবু অধিনায়ক নাদিফ ও সহ-অধিনায়ক শুভ কোচকে চাপ নিয়ে ওকে খেলিয়েছে। ম্যাচে ডলার ডুবিয়ে দিয়েছে আমাদের। মজিদ জীবনে বল করে না, সুপার লিগে সেই মজিদকে বোলিং করিয়েছে।”

ক্লাবের শীর্ষ কর্তার এই অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে পড়লেন নাদিফ।

“এসব অভিযোগ একদমই ভিত্তিহীন। টাকা না পেয়েও ম্যাচের পর ম্যাচ আমরা ক্লাবকে টানলাম, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিরোপার লড়াইয়ে রেখেছিলাম, তারপরও এমন কথা খুবই দু:খজনক। আপনারা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন উনি এসব অভিযোগ কেন করছেন। যেহেতু ক্লাব আমাদের টাকা দেয়নি বলে চারপাশে অনেক সমালোচনা হচ্ছে, সেটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতেই এই মিথ্যা অভিযোগ।”

যে কারণে ম্যাচ দুটি নিয়ে ক্লাব কর্তার সন্দেহ, সেগুলোকে ক্রিকেটীয় কারণই দাবি করলেন ভিক্টোরিয়া অধিনায়ক।

“বিপর্যয় থেকে কোনো দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে না? প্রতিপক্ষ ভালো খেলতে পারে না! আর ক্যাচ মিস তো বিশ্বের সেরা ফিল্ডারও করে ফেলে। খেলারই অংশ। ডলারকে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আগের ম্যাচেই আমাদের জয়ের পেছনে ডলারের অবদান ছিল। তখন কিভাবে ফিট ছিল? তাছাড়া স্লগ ওভারে একজন পেসার লাগে।”

“মজিদকে বল দেওয়ার কথা বলছেন। পাওয়ান নেগি তখন ব্যাট করছে, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আমার অফ স্পিনার লাগবে। আল আমিনের ১০ ওভার শেষ হওয়ার পর আমার হাতে আর অফ স্পিনার নেই। তাই মজিদকে এনেছি, পার্ট টাইমার হলেও যদি কিছু করতে পারে অফ স্পিনে। ক্রিকেট খেলায় কি এসব প্রথম হলো? হরহামেশা হয়ে আসছে।”

ভিক্টোরিয়ার সভাপতির দাবি, বকেয়া পারিশ্রমিকের সঙ্গে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগের সম্পর্ক নেই।

“টাকা তো সব ক্রিকেটারই পায়। আমি কি সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি? ওদের তিন জনকে সন্দেহজনক মনে হয়েছে বলেই করেছি।”

নাদিফ আবারও দাবি করলেন, পাওনা চাওয়ার কারণেই এই অভিযোগ।

“আমরা কয়েকজন যেহেতু পাওনা চেয়ে বিসিবির হস্তক্ষেপ কামনা করেছি, আমরা সামনে ছিলাম, মিডিয়ায় কথা বলেছি, তাই আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বোর্ডকে শুধু অভিযোগ করলেই তো হবে না। প্রমাণ দিক! আমরাও বোর্ডে গিয়ে নিজেদের কথা জানাব।”

সুপার লিগ শুরুর সময়ের মধ্যেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের ৬০ শতাংশ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ভিক্টোরিয়া দিয়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।