ব্রাভো ও বোলাররা ছিটকে দিলেন ডি ভিলিয়ার্সদের

ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক শতক উপহার দিলেন ড্যারেন ব্রাভো। উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ান বোলাররা দাঁড়াতেই দিল না প্রোটিয়া ব্যাটিংকে। বোনাস পয়েন্টসহ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 04:35 AM
Updated : 25 June 2016, 04:35 AM

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০০ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ানদের ২৮৫ রান তাড়ায় প্রোটিয়ারা গুটিয়ে যায় ১৮৫ রানেই।

টুর্নামেন্ট শুরুর সময় স্বাগতিকদের ফাইনালে দেখেছিলেন খুব কম জনই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক ও তিন নম্বর দলের সঙ্গে লড়াইয়ে ফাইনালে উঠে গেল আট নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৩। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে আগেই তাদের অপেক্ষায় অস্ট্রেলিয়া। ১২ পয়েন্ট নিয়ে ছিটকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

অথচ সেমি-ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। গতি আর আগ্রাসনে ক্যারিবিয়ানদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা।

আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন ওয়েইন পারনেল। এরপরই রাবাদার বাড়তি বাউন্সে স্লিপে ক্যাচ দেন জনসন চার্লস। পরের বলেই রাবাদার ৯১ মাইলের ইয়র্কারে উপড়ে যায় মারলন স্যামুয়েলসের অফ স্টাম্প।

অভিষেক ম্যাচের মতো এদিন আর হ্যাটট্রিক করতে পারেননি রাবাদা। তবে খানিক পর আবারও স্টাম্প উপড়ানোর স্বাদ পান তরুণ ফাস্ট বোলার। দিনেশ রামদিনকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাউন্সারে হেলমেটে লাগিয়ে। পরের বলে ৯২ মাইলের গোলায় ভুল শটে বোল্ড রামদিন।

৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ৪ উইকেটে ২১! কেনসিংটন ওভালের গ্যালারিতে গ্রেট এভারটন উইকসের বিরক্ত চেহারাতেই ফুটে উঠছিল উত্তরসূরিদের পারফরম্যান্সের প্রতিফলন।

উইকস এরপর দেখলেন দলের অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানো। শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন ব্রাভোও। বেশ কয়েকবার বেঁচে যান আউট হতে হতে। ১১ রানে মর্নে মর্কেলের বাউন্সারে জীবন পান লং লেগে, আপাত সহজ ক্যাচটিকে ছক্কা বানিয়ে দেন পারনেল।

জীবন পেয়ে যেন সাহসী হয়ে ওঠেন ব্রাভো। আরেকপাশে কাইরন পোলার্ডও জমে যান। খানিক বৃষ্টি বিরতির পর বদলে যায় খেলার চেহারা। দুজনই খেলতে থাকে দারুণ সব শট। ছন্দে থাকা ব্রাভোর ব্যাটিং দৃষ্টিনন্দন সবসময়ই; এদিনও থিতু হওয়ার পর খেলেছেন চোখ জুড়ানো সব শট।

ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া ১৫৬ রানের জুটি ভেঙেছে দুর্দান্ত এক ক্যাচে। মর্কেলের বলে পোলার্ডের (৭১ বলে ৬২) রকেট গতির শট লং অনে দারুণ ক্ষিপ্রতায় হাতে জমান ফাফ দু প্লেসি। 

শতক করে তবেই থেমেছেন ব্রাভো। ক্রিস মরিসকে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন ঠিক ১০০ বলে।

এই ইনিংসও শেষ হয়েছে দু প্লেসির অসাধারণ আরেকটি ক্যাচে। মিড অন থেকে পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে ফুল লেংথ ডাইভে হাতে জমান বল। ব্রাভোর ১০২ রানের ইনিংসে চার ১২টি, ছক্কা ৪টি।

এরপর সপ্তম উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েছেন জেসন হোল্ডার ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েইট। প্রথম রান করতে ১৭ বল লেগেছে হোল্ডারের, পরে করেছেন ৪৬ বলে ৪০।

২১ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ২৮৫ রানে।

তিন দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডজের ২৮৩ রান অনায়াসেই তাড়া করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এদিন ক্যারিবিয়ান বোলাররা ছিলেন সেরা চেহারায়। নতুন বলে জ্বলে ওঠেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। সুনিল নারাইন ছিলেন বরাবরের মতোই নির্ভরতা। ৬৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা।

এবি ডি ভিলিয়ার্স এদিনও ছিলেন বিবর্ণ। টুর্নামেন্টে একটি অর্ধশতকও করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক।

পরাজয়ের ব্যবধান বড় হতে পারত আরও। ১৩৪ রানে ৯ উইকেট হারানো প্রোটিয়াদের শেষ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন মর্কেল (৩২*) ও তাহির (২৯)। দুজনই খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তাতে ম্যাচটা একটু দীর্ঘায়িত হয়েছে, মান খুব একটা বাঁচেনি।

রোববার ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৯.৫ ওভারে ২৮৫ ( চার্লস ৪, ফ্লেচার ৮, ব্রাভো ১০২, স্যামুয়েলস ০, রামদিন ৪, পোলার্ড ৬২, হোল্ডার ৪০, ব্র্যাথওয়েট ৩৩, নারাইন ১, বেন ৫, গ্যাব্রিয়েল ২; রাবাদা ৩/৩১, পারনেল ১/৬৩, মর্বেল ১/৬৮, মরিস ৩/৬৮, তাহির ০/৪০, দুমিনি ০/১৫)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৬ ওভারে ১৮৫ (আশরা ১৬, ডি কক ৬, ডু প্লেসি ৩, ডি ভিলিয়ার্স ২, বেহারডিন ৩৫, দুমিনি ৫, মরিস ৭, পারনেল ২৮, রাবাদা ৯, মর্কেল ৩২*, তাহির ২৯; হোল্ডার ১/৩১, গ্যাব্রিয়েল ৩/১৭, নারাইন ৩/২৮, ব্র্যাথওয়েট ২/৩৯, বেন ০/৫১, ফ্লেচার ০/৯)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ড্যারেন ব্রাভো।