সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বিসিবি প্রধান

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অনিয়ম ও নানা বিতর্ক নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ও দেশের বাইরে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযাগে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দেশের ক্রিকেটে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেই দায় সংবাদমাধ্যমকেও নিতে হবে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2016, 04:54 PM
Updated : 22 June 2016, 04:54 PM

বেশ কিছু দিন ধরেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গন উত্তপ্ত নানা বিতর্ক নিয়ে। নানা অনিয়ম, আবাহনীকে নানা বাড়তি সুবিধা দেওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে নিয়মিত। মাঠের ক্রিকেটের বাইরে, জাতীয় দলের নির্বাচক কমিটির কাঠামো বদল নিয়েও সংবাদমাধ্যমে ও দেশের ক্রিকেট মহলে চলছে প্রবল সমালোচনা।

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিসিবি প্রধান। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী ও প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে গঠিত কমিটির সুপারিশ ছিল দুই দলকে পয়েন্ট ভাগ করে দেওয়া। বোর্ড সভাপতির অভিমত ছিল, আবার নতুন করে ম্যাচ খেলানো।  নিজের অভিমতের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বোর্ড প্রধান টেনে আনলেন সংবাদমাধ্যমকে।

“কমিটির সুপারিশের পর আর খেলার দরকার ছিল না। দরকার হয় না। কিন্তু আপনারা (সংবাদকর্মীরা) অনেকে দেখি একটার পর একটা খুঁত বের করতেই থাকেন। অনেকে বলবে আবাহনী না খেলেই চ্যাম্পিয়ন! এরকম কোনো হেডলাইন দেবেন।”

“কোনো না কোনোভাবে আমাদের জড়ানো হবেই। টক শোগুলোতে যা দেখি, শুনি, আমি তো কিছুই বুঝি না। আমার মাথায় তো কিছুই ঢোকে না।”

বিকেএসপিতে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচটি মাঠ বৃ্ষ্টিতে ভেজা থাকায় দুই দিনেও খেলা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ আছে, ব্রাদার্সকে রেলিগেশন থেকে বাঁচাতে মাঠ ভেজা থাকার প্রহসন সাজানো হয়েছিল। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন বিসিবি প্রধান।

“আশ্চর্য, এর আগে কি ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো দিন মাঠ খেলার অনুপযুক্ত হয়নি? বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়নি? আমি নিজে শুনেছি যে অনেকে বলছে, আরেকটা ক্লাব এসে মাঠে পানি ঢেলে গেছে। আমরা কি প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছি? বিশ্বকে আমরা কি বার্তা দিচ্ছি?

কিন্তু বিকেএসপির মাঠের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো ছিল, বৃষ্টির পরিমাণও বেশি ছিল না। যেদিন ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, সেদিন মাঠের কিউরেটরকে খুঁজে পায়নি সংবাদকর্মীরা। পাশের মাঠে আবার ঠিকই খেলা হয়েছে। সংবাদকর্মীরা এসব যুক্তি তুলে ধরার পর বোর্ড প্রধান সরাসরি জবাব না দিয়ে দিলেন হুঁশিয়ারি।

“আপনারা কি বলবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু এর দায়দায়িত্ব আপনারাও এড়াতে পারবেন না ভবিষ্যতে। এর জন্য যদি কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আপনারা দায় এড়াতে পারবেন না। আপনারা সব দোষ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন, আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে ও স্থানীয়ভাবে চাপে ফেলবেন, এটা হয় না।”

এর আগেও একবার বোর্ড প্রধান অভিযোগ করেছিলেন, দেশের ক্রিকেটের এসব বিতর্কের খবর আইসিসিতে ও বিভিন্ন দেশের বোর্ডে পাঠিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। এদিন আবারও তুললেন সেই একই অভিযোগ।

“যেভাবে ঢালাওভাবে আলোচনা হচ্ছে, এবং দেশের বাইরে পাঠিয়ে ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে, এসব তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোনোভাবেই না। বাংলাদেশের ক্রিকেট সবাই ভালোবাসে। কিন্তু আপনারা বিদেশে কেন পাঠাবেন এসব? এটার জবাবদিহিতা করতেই হবে।”

কিন্তু কে বা কি পাঠাচ্ছে, এসব সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে, বোর্ড প্রধান শুধু বললেন, “সেটা বলতে পারলে কি আর এখানে বসে থাকতাম!”

প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারিংয়ের মান, বড় ম্যাচে অখ্যাত আম্পায়ারদের দিয়ে পরিচালনা ও নানা বিতর্ক নিয়ে সংবাদমাধ্যমের নানা প্রতিবেদনেও ক্ষুব্ধ নাজমুল।

“আচ্ছা, ভারত-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে কিছু হয় নাই? আমাদের এখানে প্রশ্ন কেন? আর আমাদের সময়ই কেন? আশ্চর্য কথা বলেন আপনারা।”

“গত অ্যাশেজ সিরিজের মত বাজে আম্পায়ারিং আগে কখনও হয়নি। এটা নিয়ে তো নিউজ দেখলাম না। আমাদের এখানে একটা ঘরোয়া খেলাতে যে হুলস্থুল হচ্ছে, আর যা কী যে বলব…কোনো ভাষা নেই আমার।”

“আপনারা কি নিয়ে কথা বলছেন রোজ রোজ। আমি বুঝি না। আসলে আমি যেটা বুঝলাম, আপনাদের আমার ওপর কোনো ট্রাস্টই নেই।”