ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবকে ৮ রানে হারিয়েছে কলাবাগান। এই জয়ে অবনমনের শঙ্কা কিছুটা হলেও কাটাতে পারল দলটি।
জয় থেকে ৩৬ রান দূরে নবম উইকেট হারিয়েছিল ভিক্টোরিয়া। কিন্তু শেষ উইকেটে জুবায়ের আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির জুটি ভাঙতেই পারছিল না কলাবাগান। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। আগে অন্তত দুটি ম্যাচে জয়ের সুবাস পেয়েও হারিয়ে ফেলা দলটিকে পেয়ে বসেছিল শঙ্কা।
৪৯তম ওভারটিতে অসাধারণ বোলিং করে ম্যাচ কলাবাগানের দিকে নিয়ে আসেন মাশরাফি। কলাবাগান অধিনায়কের ওই ওভারে আসে মাত্র ২ রান।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ১২। দেওয়ান সাব্বিরের প্রথম ৩ বলে আসে ৩ রান। চতুর্থ বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড কামরুল।
শুধু শেষের আগের ওভারে নয়, গোটা ইনিংসেই দারুণ বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। মেহরাব হোসেন জুনিয়রের অপরাজিত ৮৬ রানের পরও কলাবাগান তুলতে পেরেছিল ২১৩ রান। এই পুঁজি নিয়েও ফর্মে থাকা ব্যাটিং লাইন আপের ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে কলাবাগান জিতেছে বোলারদের নৈপূণ্যে।
শরীফুল্লাহকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করিয়েছিলেন মাশরাফি। এই অফ স্পিনার নিজের প্রথম ৩ ওভারেই তুলে নেন ভিক্টোরিয়ার দুই ওপেনার আব্দুল মজিদ ও সোহরাওয়ার্দী শুভকে।
কলাবাগানের স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করছিলেন মুমিনল হক। শেষ পর্যন্ত ছটফট করেই স্টাম্পড হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের বলে। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনারের বলেই উইকেটকিপার জসিমউদ্দিনের ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড হয়েছেন নাদিফ চৌধুরি। ভিক্টোরিয়ার রান তখন ৪ উইকেট ৫২।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আল আমিন আবারও খেলছিলেন দারুণ। উইকেট গ্রিপ করছিল বেশ, বল আসছিল থেমে। তার পরও স্পিনারদের আশ্চর্য স্বচ্ছন্দে খেলেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
পঞ্চম উইকেটে শ্রীলঙ্কান চতুরঙ্গা ডি সিলভার সঙ্গে আল আমিনের জুটি জমে উঠছিল। বাধ সাধে মাশরাফির অতি মানবীয় দক্ষতা। ২১তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েছেন মাশরাফি। চতুর্থ বলেই চোখধাঁধানো এক ফিরতি ক্যাচে ফিরিয়েছেন ডি সিলভাকে। নিজের বলে চোখের পলকে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে নিয়েছেন অসাধারণ রিফ্লেক্স ক্যাচ।
আল আমিন অবশ্য ছিলেন ভিক্টোরিয়ার আশা হয়ে। আরেক পাশে উইকেট পতনের মিছিল বা কঠিন উইকেট, কিছুর প্রভাবই ছিল না তার ব্যাটিংয়ে। ৫৫ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। এবারের লিগে ৮ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরির পাশে তার অর্ধশতক ৫টি!
ভিক্টোরিয়ার আশাটুকু শেষ হলো আত্মঘাতী রান আউটে। জুবায়েরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, দুই ব্যাটসম্যনই ছুটলেন একই প্রান্তে। আল আমিনের জন্য উইকেট আত্মত্যাগ করার কথাও হয়ত মাথায় ঢুকল না জুবায়েরের; আল আমিন রান আউট ৭৭ বলে ৬৭ রানে।
জুবায়ের এরপর এক পাশ আগলে ছিলেন। চেষ্টা করেছেন শেষ পর্যন্ত, কিন্তু পেরে উঠলেন না।
৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন শরীফুল্লাহ। ১০ ওভারে ২ মেডেন, ২৪ রানে মাশরাফির উইকেট ২টি।
এর আগে কলাবাগানের শেষ উইকেট জুটিও দারুণ ভুগিয়েছে ভিক্টোরিয়াকে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েছিল কলাবাগান। এরপর উইকেট পড়েছে নিয়মিত গতিতে।
একমাত্র ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ফিরে গেছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে। কলাবাগানের ব্যাটিং তাই আরও হতশ্রী। মাসাকাদজার বদলি হিসেবে আসা ভারতীয় রোহান প্রেম আউট ১ রানেই। একপ্রান্ত আগলে দলকে একা টেনেছেন মেহরাব।
এক সময় মনে হচ্ছিল ১৮০ রানও করতে পারবে না কলাবাগান। কিন্তু শেষ জুটিতে দেওয়ান সাব্বিরকে নিয়ে দলকে টেনে নেন মেহরাব। মাত্র ৫ করেছেন সাব্বির, তবে শেষ উইকেটে জুটি ৩৯ রানের। ১১২ বলে মেহরাব অপরাজিত ৮৬ রানে।
গত অক্টোবরে জাতীয় লিগের ম্যাচের পর প্রথমবার মাঠে নেমে পেসার মাহবুবুল আলম নেন ৩ উইকেট। ব্যাট হাতে দারুণ ইনিংসের আগে আল আমিন অফ স্পিনে নিয়েছেন ২ উইকেট।
তবে মেহরাবদের ওই শেষ জুটিই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। আর শেষের আগের ওভারে মাশরাফির বোলিং গড়ে দিয়েছে চূড়ান্ত ভাগ্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কলাবাগান: ৪৯ ওভারে ২১৩ (সাদমান ১২, জসিমউদ্দিন ২৪, প্রেম ১, তাসামুল ২০, মেহরাব ৮৬*, শরিফুল্লাহ ৯, তানভির ২১, মাশরাফি ৮, রাজ্জাক ১২, শাহবাজ ০, সাব্বির ৫; কামরুল ২/৪০, মাহবুবুল ৩/৫৪, চতুরঙ্গা ২/৩৫, এনামুল ০/৩১, শুভ ১/৩২, আল আমিন ২/১৯)।
ভিক্টোরিয়া: ৪৯.৪ ওভারে ২০৫ (মজিদ ১০, শুভ ১, মুমিনুল ১৩, আল আমিন ৬৭, সাদিফ ৫, চতুরঙ্গা ১৬, ধিমান ৬, জুবায়ের ৩৫*, এনামুল ৫, মাহবুবুল ১৩, কামরুল ১২; শরিফুল্লাহ ৩/৩২, সাব্বির ১/৪৫, প্রেম ০/১, রাজ্জাক ২/৪৫, শাহবাজ ১/৪৩, মাশরাফি ২/২৪, তানভির ০/৫)
ফল: কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহরাব হোসেন জুনিয়র।