মুস্তাফিজের দুই শব্দ ‘প্রোবলেম’, ‘নো প্রোবলেম’!

মুস্তাফিজুর রহমানের কণ্ঠে যখন উচ্চারিত হবে, ‘প্রোবলেম’; বুঝে নিতে হবে, তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। আর ‘নো প্রোবলেম’ মানে বুঝে নিয়েছেন ঠিকঠাক!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2016, 03:57 PM
Updated : 24 May 2016, 04:08 PM

ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় আইপিএলে মাঠের বাইরের মুস্তাফিজকে তুলে ধরেছেন রিকি ভুই। এই মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি তরুণ এই ব্যাটসম্যান। তবে করে যাচ্ছেন আরেকটি মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ। টিম ম্যানেজমেন্ট ও দলের অন্যদের সঙ্গে মুস্তাফিজের যোগসূত্র তিনিই!

হায়দরাবাদ দলে বাংলা বলতে পারেন একমাত্র ভুই। দলে তাই ১৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি সখ্য মুস্তাফিজের। এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে গেছেন ভুই। খেলেছেন মুস্তাফিজের বিপক্ষে ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও।

ভুই বাংলা জানেন জানার পর হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্টও মুস্তাফিজের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বানিয়েছে ভুইকে। এই ব্যাটসম্যান জানালেন, মুস্তাফিজের সঙ্গে তার জমেছে ভালো।

“ইংলিশ বলতে পারে না বলে দলের অন্যদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে পারেনি সে। আমার সঙ্গেই কথা বলে, আমাদের মধ্যে তাই বেশ ভালো ঘনিষ্ঠতা।”

ভুই জানালেন, মাঠে প্রয়োজনের সময় প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করেন মুস্তাফিজ। আর মাঠের ভেতরে-বাইরে কাজ চালান দুটি শব্দ দিয়েই।

“স্লোয়ার বল করতে চাইলে সে কবজি ঘোরাবে। বাউন্সার করতে চাইলে মাথার দিকে ইশারা করবে।”

“স্রেফ দুটি শব্দ বলে সে- ‘প্রোবলেম’ ও ‘নো প্রোবলেম’। শুধু মাঠে নয়, সব জায়গায়-সংবাদ সম্মেলনে, স্পন্সরের অনুষ্ঠানে, ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার সময়। যদি বলে ‘প্রোবলেম’, বুঝতে হবে সে অথৈ সাগরে আছে। আর ‘নো প্রোবলেম’ বললে মানে সে জানে, কী করতে হবে।”

ম্যাচ চলার সময়ও কোচ-অধিনায়কের পরামর্শ মুস্তাফিজকে বুঝিয়ে বলেন ভুই।

“প্রথম ১০ ওভারে তার যে ভূমিকা বা পরের ভাগে, কোন ব্যাটসম্যানকে কোন ধরনের মাঠ সাজিয়ে বল করতে হবে, এসব বুঝিয়ে দিতে হয়। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটের সময় আমি মাঠে গিয়ে ওয়ার্নারের (অধিনায়ক) নির্দেশনা আমি তাকে অনুবাদ করে দেই।”

ভাষার ব্যবধান অবশ্য মুস্তাফিজের মাঠের বাইরের চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলায় বাধা হতে পারেনি। কোচ টম মুডি যেমন ঠিকই বুঝতে পেরেছেন তরুণ পেসার খুবই মজাপ্রিয়।

“ব্যক্তি হিসেবে দলে খুব ভালো একটি চরিত্র সে। খুবই মজার ছেলে সে, দেখেই বোঝা যায় খুব উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। শুধু মাঠের ভেতরে নয়, বাইরেও এই দলে যে অনেক কিছু যোগ করেছে।”

কোচ জানালেন, শুরুর সময়ের চেয়ে মুস্তাফিজের সঙ্গে ভাষার দূরত্বটা সময়ের সঙ্গে কমে এসেছে।

“এমন নয় যে আমাদের বাংলা কিছুটা ভালো হয়েছে, তবে তার ইংরেজি কিছুটা ভালো হয়েছে। আর এমনিতে ক্রিকেটের একটা চিরন্তন ভাষা তো আছেই।”

অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার, সাবেক অস্ট্রেলিয়া ওপেনার ম্যাথু হেইডেনসহ আরও অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ আইপিএল চলার সময় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন মুস্তাফিজের ক্রিকেট মস্তিষ্কের। এবার হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যান ও ভারত জাতীয় দলের ওপেনার শিখর ধাওয়ানও যোগ দিলেন গুণমুগ্ধদের তালিকায়।

“বেশিরভাগ সময়ই সে বুঝে নেয় আমরা ওকে কি বলেছি। মুস্তাফিজ অসাধারণ বোলার এবং তার ক্রিকেট বোধও দারুণ।”

রিকি ভুই জানান, ভাষার সমস্যার কারণে মুস্তাফিজ বাইরেও খুব একটা যান না।

“সে সব সময় নিজের কক্ষেই থাকে। ইংরেজি বলার ভয়ে সে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও যাওয়া বাদ দিয়েছে।”

মাঠের বাইরে বেশিরভাগ সময় নিজের পরিবার নিয়েই কথা বলেন মুস্তাফিজ, জানালেন ভুই।

“বোলিং নিয়েও সে টুকটাক কথা বলে। তবে দলের কৌশলের কারণে সে সব খোলাসা করতে পারছি না। তবে সে সবসময় তার ব্যাকগ্রাউন্ড ও তার পরিবার নিয়ে কথা বলে। ভাইয়ের সঙ্গে স্কাইপিতে অনেক কথা বলে।”

আইপিএল চলার সময়ই ওয়ার্নার একবার যা বলেছিলেন, সেটা রিকি ভুইও হাসতে হাসতে জানালেন, দুটি ব্যাপারেই মুস্তফিজের আপত্তি, “সে সবসময়ই বলে, আমি ব্যাটিং করতে আর ইংরেজি বলতে চাই না!”