রোমাঞ্চকর ম্যাচে জুবায়েরের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং

বোলিংয়ে জুবায়ের হোসেনের পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতই ছিল। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে আবাহনীর দুই উইকেটের জয়ে এই তরুণ লেগ স্পিনার ব্যাট হাতেও রেখেছেন দারুণ অবদান। তার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে এক বল বাকি থাকতে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়েছে তামিম ইকবালের আবাহনী।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2016, 12:37 PM
Updated : 30 April 2016, 01:59 PM

শনিবার বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৪ রান করে ব্রাদার্স। জবাবে ৪৯ ওভার পাঁচ বলে ৮ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আবাহনী।

বল হাতে চার উইকেট পাওয়া জুবায়ের যখন ক্রিজে আসেন তখন ম্যাচ অনেকটাই ব্রাদার্সের দিকে হেলে পড়েছে। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে জুবায়ের ব্যাটিংয়ে আসার সময় ১৭ বলে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল ২৮ রান।

ক্রিজে আসার পর প্রথম দুই বলে রান নিতে পারেননি জুবায়ের, চাপ তখন আরও বাড়ে। পরের তিন বলে দুটি চার হাঁকিয়ে চমকে দেন এই তরুণ। চমকটা চারের জন্য নয়, যে দুই শটে চার এসেছে তাতে। নূর আলমের বলে দারুণ এক স্কুপ শটে আসে তার প্রথম চার, পরেরটি আরও দর্শনীয়, চমৎকার এক কাভার ড্রাইভে।

শেষ দুই ওভারে ২০ রানের সমীকরণ সহজ করতে পুল করে মোহাম্মদ শহীদকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান ম্যাচ সেরা জুবায়ের। দিন শেষে জানালেন, এটাই ছিল তার সেরা শট।

“স্কুপ শট আমি অনেক অনুশীলন করেছি। এই শটটা ভালোই খেলি। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ছক্কা হাঁকিয়ে। এটা আজকের দিনে আমার সেরা শট ছিল। এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস।”

শেষ ওভারে প্রয়োজনটা ৮ রানে নামিয়ে আনে আবাহনী। আসিফ হাসানের করা সেই ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে অন্য প্রান্তে যান জুবায়ের। পরের দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি সাকলাইন সজীব।

সেই চাপ কাটাতে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান সাকলাইন। স্কোরে আসে সমতা, পরের বলে ড্রাইভ করে চমৎকার এক চারে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন তিনি। জুবায়ের ১০ বলে অপরাজিত ১৯ এবং সাকলাইন ১৪ বলে অপরাজিত ২০ রান করেন।  

এর আগে মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আবাহনীর। ৪২ রানের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি।

অফ স্পিনার সঞ্জিত সাহাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুরুতেই ফিরেন অধিনায়ক তামিম। অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অভিষেক মিত্রও পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে প্রচুর রান করা লিটন দাসকে এবার রানের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।

নাজমুল হোসেনে শান্তর সঙ্গে ৪৭ ও মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে ৫৭ রানের দুটি ভালো জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন উদয় কাউল। এই ভারতীয় ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে ৩৩তম তুষার ইমরানের একটি ফিরতি ক্যাচের আবেদন নিয়ে ম্যাচের এক পর্যায়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে মাঠ।

দুই আম্পায়ার নাদির শাহ ও আখতারুজ্জামান ব্রাদার্স অধিনায়ক তুষারের আবেদন নাকচ করে দেন। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি তিনি। নাদিরের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন তুষার। এক পর্যায়ে তুষার ও উদয় একে অপরের দিকে তেড়ে যান, তবে আম্পায়ার ও দুই দলের খেলোয়াড়রা তাদের থামিয়ে দেন।

তুষারের পরের ওভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উদয় (৫৯) ফিরে গেলে আবার চাপে পড়ে আবাহনী। তবে মোসাদ্দেক ও আবুল হাসানের দৃঢ়তায় জয়ের পথে এগিয়ে যায় দলটি।

৫২ রানের জুটি ভেঙে এক ওভারের মধ্যে মোসাদ্দেক-হাসান ফিরে গেলে ম্যাচ হেলে পড়ে ব্রাদার্সের দিকে। কিন্তু জুবায়ের-সাকলাইনের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে শেষরক্ষা হয়নি দলটির।

এর আগে ব্রাদার্সের ইনিংসের শুরুতে ছিল বড় রানের হাতছানি। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে শাহরিয়ার নাফীসের ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি দারুণ সূচনা এনে দেয় দলটিকে।

তবে জুবায়েরের দারুণ বোলিংয়ে খেলার ফিরতে বেশি সময় নেয়নি আবাহনী। তরুণ লেগ স্পিনার শিকারে মেতে উঠলে বিনা উইকেটে ৭৬ থেকে ব্রাদার্সের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪৯ রানে।

তুষারকে ফিরিয়ে উইকেট শিকার শুরু করেন জুবায়ের। এরপর একে একে ফিরিয়ে দেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইমরুল, রুমান আহমেদ ও শন উইলিয়ামসকে। এর মধ্যে যে গুগলিতে রুমানকে বোল্ড করেন জুবায়ের সেটি ছিল ম্যাচের সেরা বল। 

সেখান থেকে দলের সংগ্রহ আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব নূর আলম ও সাদিকুর রহমানের।

৪৪ রানে চার উইকেট নিয়ে আবাহনীর সেরা বোলার জুবায়ের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৪৪/৯ (শাহরিয়ার ৩৫, ইমরুল ৬৯, তুষার ২০, রুমান ৩, উইলিয়ামস ১৭, জাকির ১, নূর আলম ৩৯, সাদিকুর ৩৮*, আসিফ ৩, শহিদ ০, সঞ্জিত ১২*; জুবায়ের ৪/৪৪, তাসকিন ২/৪৫, মোসাদ্দেক ১/২২, নাজমুল ১/৩০)

আবাহনী: ৪৯.৫ ওভারে ২৪৮/৮ (তামিম ৫, অভিষেক ১৮, লিটন ১৫, উদয় ৫৯, নাজমুল ২৩, মোসাদ্দেক ৪৭, হাসান ২৩, সাকলাইন ২০*, তাসকিন ৮, জুবায়ের ১৯*; তুষার ২/৩৯, নুর আলম  ২/২৯, উইলিয়ামস ১/২২, সঞ্জিত ১/৩৭, সাদিকুর ১/৫০)

ফল: আবাহনী দুই উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জুবায়ের হোসেন।