শেষ বলে মুক্তারের ছক্কায় শেখ জামালের রোমাঞ্চকর জয়

বল উড়ে চলেছে লং অনের ওপর দিয়ে, মুক্তার আলি ছুটছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। সতীর্থরাও ততক্ষণে ছুটে এসেছেন মাঠে, তাদের সঙ্গে মুক্তার আলী মেতে উঠলেন বাধনহারা উল্লাসে। লং অন সীমানা ছাড়িয়ে আরও অনেকটা দূরে আছড়ে পড়া বলের দিকে এক পলক তাকিয়েই মাথা নিচু করে ফেললেন তাসকিন আহমেদ। হতাশায় নুইয়ে আবাহনীর ক্রিকেটাররা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2016, 02:15 PM
Updated : 26 April 2016, 02:21 PM

জয়ের জন্য শেষ বলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। দারুণ সব ইয়র্কারের প্রদর্শনী মেলে ধরা তাসকিন একই প্রচেষ্টায় শেষ বলটি করে ফেললেন লেগ-মিডলে হাফ ভলি। মুক্তারের জন্য একদম মোক্ষম সুযোগ। প্রিয় জায়গায় বল পেয়ে লং অন দিয়ে উড়িয়ে খ্যাপাটে উদযাপনে মাতলেন তিনি।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে তামিম ইকবালের আবাহনীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহর শেখ জামাল। ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলেছিল আবাহনী। ওপেনার মাহবুবুল করিমের ১১০ বলে ১৩০ রানের অসাধারণ ইনিংস আর মুক্তারের শেষ বলের ছক্কায় জিতেছে আবাহনী।

ম্যাচ শেষের অনেকক্ষণ পরও দলকে জেতানোর রোমাঞ্চে কাঁপছিলেন মুক্তার। জয়ের উল্লাসে চিৎকার করে গলা ভেঙে ফেলেছেন, কথাই বলতে পারছিলেন না। কোনো রকমে গলা দিয়ে বের হলো আওয়াজ, “বিশ্বাস ছিল, দুটি বল পেলেও একটি ছক্কা মেরে দেব। শেষ বলটা ফুল লেংথই আশা করছিলাম। ভেবেছিলাম ফুলটস বানিয়ে খেলব। কিন্তু হাফ ভলি পেয়ে গেলাম!”

অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন তাসকিন। ম্যাচটা শেষ বল পর্যন্ত জিইয়ে রাখার মূল কৃতিত্বই তো ছিল তারই! শেষ ৩ ওভারে শেখ জামালের প্রয়োজন ছিল ২৫ রান, হাতে ৬ উইকেট। অনেকটাই সহজ সমীকরণ। ৪৮ তম ওভারে ছযটি বলই তাসকিন করলেন ইয়র্কার, রান এলো মাত্র ৪।

পরের ওভারে ১৫ রান দিয়ে আবার লাগাম আলগা করে দিলেন আবুল হাসান। শেষ ওভারে ৬ উইকেট হাতে নিয়েই প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ রান। প্রথম বলই ইয়র্কার, কেনোরকমে ঠেকিয়ে রান নিতে গিয়ে রান আউট শ্রীলঙ্কান অ্যাঞ্জেলো পেরেরা। পরের বলে বিদ্যুৎগতির ইয়র্কারে বোল্ড দারুণ খেলতে থাকা নাজমুস সাদাত (৩৩)। পরের তিন বলেও তাসকিন দিলেন মাত্র ২ রান। কিন্তু গড়বড় করে ফেললেন শেষ বলটিতেই!

মুক্তার শেষ বলে ছক্কা মারতে পারলেন বলেই মাহবুবুল করিমের ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত হতে পারল ম্যাচ জয়ী সেঞ্চুরি। ২৮৮ রান তাড়ায় অসাধারণ ব্যাট করেছেন ডানহাতি ওপেনার। আগেই ম্যাচেই ৭২ বলে ৭৮ করে শেখ জামালকে জিতিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ-সেরা। এবার আরও বিধ্বংসী ঝড়, আরও বড় ইনিংস!

উদ্বোধনী জুটিতে জয়রাখ শেখকে নিয়ে মাহবুবুল তুলেছিলেন ৬৭ রান। মার্শাল আইয়ুবের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটি ১২৫ রানের। সাকলাইন সজীবের বলে লেগ স্টাম্প হারিয়ে ফিফটি হয়নি মার্শালের (৪৭)।

মাহবুবুল অর্ধশতক স্পর্শ করেছিলেন ৩০ বলে, ৮১ বলে সেঞ্চুরি। ৭১ রানে নাজমুল হোসেন শান্তর বলে তুলে দিয়েছিলেন মিড উইকেটে, ছুটে গিয়ে হাতে জমাতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ পর্যন্ত সেই শান্তর বলে মিড উইকেটেই মোসাদ্দেকের হাতে যখন ধরা পড়লেন; তবে নামের পাশে তখন ১১০ বলে ১৩০! ১৫টি চারের পাশাপাশি ছিল ৫টি ছক্কা।

সমীকরণ যখন সহজ, অনিয়মিত অফ স্পিনার শান্তকেই অযথা উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দারুণ কিছু শট খেলে পরে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন বাঁহাতি নাজমুস সাদাত। আর শেষ বলে মুক্তারের ছক্কায় জয়।

আবাহনী ভুগেছে দলের একজন বোলারকে হারিয়ে। বল ফেরাতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়ে মাত্র ১.১ ওভার বল করেই মাঠ ছাড়েন আবাহনীর অভিজ্ঞ পেসার তাপস বৈশ্য। লিটন দাস চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় দীর্ঘক্ষণ কিপিং করেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান উদয় কাউল।

ম্যাচ শেষে আবাহনী অধিনায়ক তামিম জানালেন, যেভাবে বল করে ম্যাচটা জমিয়ে তুলেছিলেন তাসকিন, সেই ইয়র্কারই ছিল শেষ বলের পরিকল্পনা। কিন্তু হয়নি ঠিকঠাক।

আবাহনীকে বড় ইনিংসের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন তামিমই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রায় নিখুঁত ব্যাট করেছেন দেশ সেরা ব্যাটসম্যান। প্রাপ্য সেঞ্চুরিটা মাঠে ফেলে এসেছেন নিজের ভুলেই। হুট করেই মাহমুদউল্লাহকে তুলে মারতে গিয়ে ৯০ রানে (৯১ বলে) ক্যাচ দিয়েছেন লং অনে।

চারে নেমে উদয় কাউল করেছেন ৬৩। ৫০ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন শান্ত। ২৯ বলে অপরাজিত ৪৬ মোসাদ্দেক হোসেন। তার ২ ছক্কার একটি ছিল মুক্তার আলির বলে দুর্দান্ত এই সুইচ হিটে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এই শট এত ভালো ভাবে খেলা একদমই বিরল!

শেষ পর্যন্ত অবশ্য আবাহনীর চার ব্যাটসম্যানের দারুণ ব্যাটিং বা মাহবুবুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, সব পড়ে গিয়েছিল আড়ালে। ২ ওভারের ইয়র্কার বোলিংয়ে ম্যাচের ভাগ্য প্রায় গড়েই দিয়েছিলেন তাসকিন। কিন্তু শেষ বলে নায়ক হয়ে গেলেন মুক্তার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৮৭/৪ (তামিম ৯০, অভিষেক ২১, লিটন ৫, উদয় ৬৩, শান্ত ৫২*, মোসাদ্দেক ৪৬*; শফিইল ০/৫৪, মনিরুজ্জামান ১/২৬, মুক্তার ১/৬৫, সোহাগ ১/৪৫, মাহমুদউল্লাহ ১/৬৩, সাদাত ০/১৪, পেরেরা ০/১৯)।

শেখ জামাল: ৫০ ওভারে ২৮৯/৬ (জয়রাজ ২৬, মাহবুবুল ১৩০, মার্শাল ৪৭, মাহমুদউল্লাহ ২৭, সাদাত ৩৩, পেরেরা ৬, সোহাগ ১*, মুক্তার ৭*; তাসকিন ১/৬৪, আবুল হাসান ০/৫১, সাকলাইন ২/৫১, জুবায়ের ০/৩৭, তাপস ০/৭, মোসাদ্দেক ০/৩৬, শান্ত ২/৩৯)।

ফল: শেখ জামাল ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহবুবুল করিম।