ক্যারিবিয়ান যুবাদের বিশ্বজয়

জয়সূচক রানটি নিয়েই দুহাত উঁচিয়ে ছুটলেন কিমো পল। মাঠের বাইরে থেকে ছুটে এল সব সতীর্থ। ক্যারিবিয়ান যুবাদের তখন বিশ্ব জয়ের উৎসব! ফাইনালে ফেভারিট ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2016, 07:03 AM
Updated : 15 Feb 2016, 11:51 AM

ম্যাচটিকে বলা হচ্ছিল টুর্নামেন্টের সেরা পেস আক্রমণের সঙ্গে সেরা ব্যাটিং লাইন আপের লড়াই। ২২ গজে সেটির প্রতিফলন পড়ল সামান্যই। সবুজাভ উইকেটে আগুন ঝরালেন ক্যারিবিয়ান পেসাররা, তাতে ছারখার ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। ৪৫.১ ওভারে গুটিয়ে যায় তারা ১৪৫ রানে। স্নায়ুচাপ জয় করে সতর্ক রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পেয়েছে শেষ ওভারে, ৩ বল বাকি থাকতে।

দুবার মূল বিশ্বকাপ ও একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো প্রথমবার। তিনবারের যুব চ্যাম্পিয়ন ভারত ফাইনালে হারল দ্বিতীয়বার।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলই। বিশ্বকাপেও চলে গিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যাওয়ার দোরগোড়ায়। গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছিল শেষ ওভারের নাটকীয় রান আউটে। সেই দলই সবাইকে চমকে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল দারুণ টিম স্পিরিট আর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়। নক আউট পর্বে উপমহাদেশের তিন দল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতকে হারিয়ে হাসল শিরোপার হাসি।

প্রাণবন্ত উইকেটে ছোট পুঁজি নিয়েও লড়াই করেছেন ভারতীয় বোলাররা। বিপজ্জনক ওপেনার গিডরন পোপকে (৩) শুরুতেই ফিরিয়ে দেন আবেশ খান। আরেক পেসার খলিল আহমেদের শিকার টেভিন ইমলাখ (১৫)। দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাঁহাতি স্পিনার মায়াঙ্ক ডাগার তুলে নেন ৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৫ উইকেটে ৭৭; ম্যাচ দুলছে সমতায়।

ষষ্ঠ উইকেটে অসাধারণ ধৈর্য্য আর টেম্পারামেন্টের পরিচয় দিয়ে ম্যাচ জেতানো জুটি গড়ে তোলেন কিসি কার্টি ও কিমো পাল। প্রচণ্ড চাপের মাঝে বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্টি করেন যুব ওয়ানডেতে নিজের প্রথম অর্ধশতক। অপরাজিত থাকেন ১২৫ বলে ৫২ রানে। ৬৮ বলে অপরাজিত ৪০ পল। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৬৯ রানের।

ব্যাটিং ব্যর্থতার পর ভারত ভুগেছে বাজে ফিল্ডিংয়েও। ১০ রানে পলের ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি সরফরাজ। ৩৫ রানে কার্টির ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটকিপার রিশাভ পান্ত। শেষ ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ৯ রান, কাভারে আবারও পলের কঠিন ক্যাচ ছেড়েছেন আবেশ খান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। খলিলের প্রথম ৩ বলেই আসে ৩টি সিঙ্গেল।

সকালে আগের কদিনের মত কুয়াশা না থাকলেও তরতাজা ঘাসের উইকেটে টস জিতে বোলিং নিতে একটুও সময় নেননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার। ভারতীয় অধিনায়ক ইশান কিশান টসের সময় জানালেন, তারা জিতলে ব্যাটিংই নিতেন। টস তাই প্রভাব ফেলেনি বড় কোনো।

টুর্নামেন্টে আগের পাঁচ ম্যাচের চারটিই মিরপুরে খেলেছে ভারত। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং উইকেট পেল তারা ফাইনালে। আলোচিত ব্যাটিং লাইনআপ পারল না সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে। নতুন বলে তোপ দাগিয়েছেন টুর্নামেন্টের আলোচিত নাম আলজারি জোসেফ। শুরুতেই বিপর্যস্ত ভারতীয় ব্যাটিংকে আরও দমিয়ে দিয়েছেন রায়ান জন, শেমার হোল্ডাররা। ক্যারিবিয়ানদের খুনে বোলিংয়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছেন কেবল সরফরাজ খান।

ক্যারিবিয়ানরা আঘাত হানে প্রথম ওভারেই। উইকেট আসে অদ্ভুতভাবে। জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের বল না খেলে ছেড়ে দিয়েছিলেন রিশাভ পান্ত। কিন্তু ফরোয়ার্ড খেলার চেষ্টায় ক্রিজ থেকে ক্ষণিকের জন্য বাইরে বেরিয়েছিলেন পান্ত। উইকেটের অনেক পেছনে দাঁড়ানো উইকেটকিপার টেভিন ইমলাখ দারুণ তৎপরতায় বল ধরেই ছুঁড়ে দেন স্টাম্পে। ১৩৮ কিলোমিটার গতির বলে স্টাম্পড পান্ত!

প্রথম স্পেলেই জোসেফ তুলে নেন আরও ২ উইকেট। সুইং ও বাউন্সে নাভিশ্বাস উঠে যায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। জন-হোল্ডার-স্প্রিঙ্গাররাও বোলিং করেছেন দারুণ। ৫০ রানে ভারত হারায় ৫ উইকেট।

সেখান থেকে দলকে বলতে গেলে একাই টেনেছেন সরফরাজ। খানিকটা সঙ্গ দিয়েছেন মাহিপাল লমরোর (১৯)। সরফরাজ (৫১) অর্ধশতকে পৌঁছার পরপরই তাকে ফেরান রায়ান জন। শেষ দিকে ২১ রান করে দলের রান দেড়শর কাছাকাছি নিয়ে যান রাহুল বাথামা। দু অঙ্ক ছুঁয়েছেন এই তিনজনই।

একজন স্পিনারও আক্রমণেই আনেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাজ শেষ করেন পেসাররাই।

৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন জন, ৩৯ রানে ৩টি জোসেফ। হোল্ডার-স্প্রিঙ্গার একটি করে। আর যথারীতি শেষের দিকে কিমো পল ছিলেন দুর্দান্ত, নিয়েছেন শেষ ২ উইকেট।

পরে ব্যাট হাতেও মহামূল্য এক ইনিংস খেললেন পল। অমূল্য আরেক ইনিংসে ম্যাচ সেরা হয়েছেন কার্টি। আর এই দুইজনের দারুণ নৈপুণ্যে ফাল্গুনের শেষ বিকেলে শের-ই-বাংলার সবুজ মখমলে তাই দেখা গেল এক দল মেরুন প্রজাপতির ছুটোছুটি। সবশেষে সবাই একসঙ্গে হয়ে চলল ‘স্পিঙ্গার ড্যান্স’! চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতায় জাতীয় দলকে নিয়ে যখন চলছে অনিশ্চয়তা, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে তখন খানিকটা স্বস্তির সুবাতাস তরুণদের সৌজন্যে।