বিদায়ের আগে ম্যাককালামের ছক্কার ‘ডাবল সেঞ্চুরি’

বিদায়ী ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের দুইশতম ছক্কা মেরেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। রান, ক্যাচ, ডিসমিসাল, নেতৃত্ব-সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানে নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটে তিনি থাকছেন সেরাদের উচ্চতায়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 12:21 PM
Updated : 8 Feb 2016, 12:29 PM

ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ছক্কার সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাককালাম কিছু দিন আগে। এবার বিদায়ী ওয়ানডেতে ছুঁলেন ছক্কার আরেকটি মাইলফলক। ওয়ানডেতে ছক্কার ডাবল সেঞ্চুরি!

মাইলফলক ছুঁতে শেষ ওয়ানডেতে ৩টি ছক্কা প্রয়োজন ছিল ম্যাককালামের। ২৭ বলে ৪৭ রানের সহজাত ঝড়ো ইনিংসের পথে ঠিকই মেরেছেন কাঙ্ক্ষিত তিন ছক্কা। তিনটিতেই শিকার তরুণ অসি পেসার স্কট বোল্যান্ড। লং অফ দিয়ে দুটি ছক্কা মারার পর চোখধাঁধানো এক ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে স্পর্শ করেছেন মাইলফলক। ক্যারিয়ার শেষ করলেন ঠিক ২০০ ছক্কায়।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ম্যাককালাম বলেছেন, মাইলফলকের হাতছানি তিনি জানতেন এবং সেটি তার মাথায়ও ছিল! ওই তিন ছক্কার মাহাত্ম্য তাতে বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি।

ম্যাককালাম ছাড়া ওয়ানডেতে দুইশ ছক্কা মেরেছেন আর মাত্র তিন জন। ২৩৮টি ছক্কা মেরেছেন ক্রিস গেইল, ২৭০ টি সনাৎ জয়াসুরিয়া। আর সবার থেকে অনেক অনেক এগিয়ে থেকে শীর্ষে শহিদ আফ্রিদি, মেরেছেন ৩৫১টি ছক্কা!

২৬০টি ওয়ানডে খেলেছেন ম্যাককালাম, নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২৯১ টি ওয়ানডে খেলে শীর্ষে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ২৭৯টি খেলে দুইয়ে স্টিভেন ফ্লেমিং।

রান সংগ্রহেও ম্যাককালাম কিউইদের তালিকায় তৃতীয়! শেষ মাচে ৪৭ করে থামলেন তিনি ৬ হাজার ৮৩ রানে। সাবেক ওপেনার নাথান অ্যাস্টল করেছেন ৭ হাজার ৯০ রান; ৮ হাজার ৭ রান করে শীর্ষে ফ্লেমিং।

নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়াতেও ম্যাককালাম আছেন তিনে। ৬২ ওয়ানডেতে টস করতে নেমেছেন তিনি। ৮২ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভেট্টোরি, ২১৮ ম্যাচে ফ্লেমিং।

অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যে অবশ্য ম্যাককালাম নিজ দেশে সবাইকে ছাড়িয়ে। ৬২ ম্যাচের ৩৬টিতে জিতে অধিনায়ক ম্যাককালামের জয়ের হার ৬১.৮৬ শতাংশ। নিউ জিল্যান্ডকে কমপক্ষে দশটি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে জয়ের হারে কাছাকাছি কেবল ভেট্টোরি, ৫৫.৩৩ শতাংশ।

ওয়ানডেতে ম্যাককালামের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ৯৬.৩৭। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে নব্বইয়ের বেশি স্ট্রাইক রেটে ১ হাজার ২০০ রানও করতে পারেননি কেউ। স্ট্রাইক রেটের একটি পরিসংখ্যানে তিনি ওয়ানডে ইতিহাসেই আছে সেরা দুইয়ে। কমপক্ষে ২৫ ইনিংস ব্যাট করা ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট বীরেন্দের শেবাগের, ১০৪.৭২। ঠিক তার পরই ম্যাককালাম, স্ট্রাইক রেট ১০২.৭৪।

কিপিং গ্লাভস হাতে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালে ম্যাককালাম নিউ জিল্যান্ডের সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২২৭টি ক্যাচের পাশাপাশি ১৫টি স্টাম্পিং, ২৪২টি ডিসমিসাল ম্যাককালামের। ১৩৬ ডিসমিসালে যোজন যোজন পেছনে থেকে দুইয়ে অ্যাডাম প্যারোরে।

ম্যাককালাম এক ইনিংসে ৫টি ডিসমিসাল করেছেন ৫ বার। একবারের বেশি করতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের আর কেউ।

নিউ জিল্যান্ডের সেরা উদ্বোধনী জুটিতেও আছেন ম্যাককালাম। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এবারডিনে জেমস মার্শালকে নিয়ে গড়েছিলেন ২৭৪ রানের জুটি।

পরিসংখ্যানের অলি-গলি ঘুরলে পাওয়া যাবে ম্যাককালামের গড়া আরও অনেক কীর্তি। তবে পরিসংখ্যান তাকে তুলে ধরতে পারবে সামান্যই। পরিসংখ্যানে তো আর লেখা থাকবে না, বিশ্বের সেরা সব বোলারদের কাছেও আতঙ্ক হয়ে ছিলেন ব্যাটসম্যান ম্যাককালাম, বিনোদন জুগিয়েছেন দর্শকদের। পরিসংখ্যান তুলে ধরবে না, গড়পড়তা মানের মাঝারি একটি দলকে কতটা আক্রমণাত্মক ও লড়াকু দলে পরিণত করেছিলেন অধিনায়ক ম্যাককালাম। পরিসংখ্যান বলে দেবে না, খ্যাপাটে এক চরিত্র কিভাবে হয়ে উঠেছিলেন পরিণত এক নায়ক, ক্রিকেটের চেতনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে তুলে নিয়েছিলেন নতুন উচ্চতায়।

চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফি জিতে বিদায় নিলেন, তবে ম্যাককালামের সেরা প্রাপ্তি হয়ত অন্যটি। ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করতে পারা।