সাকিবের রংপুরকে উড়িয়ে ফাইনালে মাশরাফির কুমিল্লা

ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখালেন আশার জাইদি। আবারও জ্বলে উঠলেন এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক আবু হায়দার রনি। সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠল মাশরাফি বিন মুর্তজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2015, 09:52 AM
Updated : 12 Dec 2015, 03:34 PM

বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুরকে ৭২ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তুলেছিল কুমিল্লা। রংপুর গুটিয়ে যায় মাত্র ৯১ রানেই।

উদ্বোধনী জুটিতে কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। মাঝে থিসারা পেরেরা ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন রংপুরকে। শেষদিকে আবার ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন জাইদি।

পরে বল হাতেও জাইদি নিলেন ৪ উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিলেন আবু হায়দারও। রংপুরের ইনিংস তাতে ধ্বংসস্তুপ!

রান তাড়ায় রংপুরের শুরুটা খারাপ ছিল না। শুভাগত হোমের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আসে চারটি বাউন্ডারি। সৌম্য সরকার ও লেন্ডল সিমন্স প্রথম ৪ ওভারে তোলেন ৩৩ রান।

কিন্তু বল হাতে নিয়েই ইনিসের গতিপথ পাল্টে দেন আবু হায়দার রনি। এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক এই বাঁহাতি পেসার নিজের প্রথম ওভারেই টানা দুই বলে ফেরান রংপুরের দুই ওপেনারকে।

অনেকটা দৌড়ে শুভাগতর দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচে আউট সৌম্য (৯)। পরের বলেই অসাধারণ এক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে বোল্ড সিমন্স (২৫)। পড়িমরি করে ব্যাট নামিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ওপেনার, উল্টো ভূপাতিত উইকেটে! এর আগে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে প্রায় একই রকম ইয়র্কারে মাহমুদউল্লাহকে বোল্ড করেছিলেন আবু হায়দার।

সেই জোড়া ধাক্কা সামাল না দিতেই আবারও জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল রংপুর। জাইদিকে চার মারার এক বল পরই স্টাম্পড মোহাম্মদ মিঠুন (৫)। অধিনায়ক সাকিব নিজের প্রথম বলেই ডাউন দা উইকেটে গিয়ে ক্যাচ হয়েছেন সীমানায়। বিনা উইকেটে ৩৬ থেকে রংপুর তখন ৪ উইকেটে ৪৫!

মাশরাফি-জাইদি-রাসেলরা মিলে এরপর আরও চেপে ধরেন রংপুরকে। চোটক্রান্ত মাশরাফি কয়েক পদক্ষেপের ছোট্ট রান আপেই দারুণ সব আউট সুইঙ্গারে নাকাল করলেন ব্যাটম্যানদের। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন মোহাম্মদ নবির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ এক স্লোয়ারে থিসারা পেরেরাকে (১১) ফেরান আবু হায়দার। আরেক বিপজ্জনক অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামিকে (৬) ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ শিকার ধরেন জাইদি। আরাফাত সানিকে (৭) ইয়র্কারে বোল্ড করে ম্যাচের ইতি টেনে দেন আবু হায়দার।

ব্যাট হাতেও কুমিল্লার শুরুটা ছিল জমাট। যদিও ইমরুল ও লিটনের ব্যাটে ছিল দুই রকম সুর। শুরু থেকেই দুর্দান্ত সব শট খেলেছেন ইমরুল। লিটন আগের ইনিংসগুলোর মতোই তাড়াহুড়ো করছিলেন শুরুতে। ছন্দ না পেয়ে পরে সঙ্গ দিয়ে গেছেন ইমরুলকে।

৩৭ বল খেলে মাত্র একটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছেন লিটন। ২৮ রান করেছেন ৭৫.৬৭ স্ট্রাইক রেটে। টি-টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেননি অবশ্যই। তবে আরেক পাশে ইমরুলের ব্যাট যেভাবে কথা বলেছে, তাতে রানের গতিটা ধরে রাখতে পেরেছিল কুমিল্লা।

শেষ পর্যন্ত সাকলাইন সজিবকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন লিটন। ১১ ওভারে ৭৯ রানের জুটি এবারের বিপিএলেই এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী উদ্বোধনী জুটি, কুমিল্লার হয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটি তো বটেই।

শুরুর জুটি এতটা সময় কাটিয়ে দিয়েছে বলেই হয়ত ঝড় তুলতে নিজেকে তিনে তুলে এনেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু ফাটকাটা কাজে লাগেনি। থিসারা পেরেরাকে আকাশে তুলে ধরা পড়েছেন সাকিবের হাতে (১)।

ইমরুল অর্ধশতক ছুঁয়েছেন ৩৩ বলে। রানের মাঝে থাকলেও এবারের বিপিএল পঞ্চাশ ছুঁলেন তিনি এই প্রথম! ৫৮ রানে তার সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন রংপুরের কিপার মোহাম্মদ মিঠুন। জীবন পেয়ে ওই ওভারেই সাকিবকে তিনি উড়িয়েছেন লং অফ দিয়ে। তবে পরের ওভারেই আউট হয়েছেন থিসারা পেরেরার দারুণ ফিরতি ক্যাচে। ৭টি চার ও সাকিবকে মারা দুটি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬৭ রান ইমরুলের।

খেলার মোড়ও ঘুরে যায় ওই ওভারে। ইমরুলকে আউট করার পর ওভারের শেষ দুই বলে আন্দ্রে রাসেল ও আহমেদ শেহজাদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটিও তুলে নেন পেরেরা। স্লোয়ারে থার্ডম্যানে সাকলাইনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন রাসেল (৩)। ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ শেহজাদ (০)।

হঠাৎ করে তখন হতশ্রী চেহারা কুমিল্লার স্কোরবোর্ডের। আরও একবার দলের উদ্ধারকর্তা জাইদি। ১৫ বলে অপরাজিত ৪০ রানের টর্নোডো এক ইনিংস খেললেন ইংল্যান্ডে থিতু হওয়া পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার। ৫ বলে ১২ করলেন শুভাগত। শেষ ৪ ওভারে কুমিল্লা তুলল ৫১ রান।

২৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন পেরেরা। ১৩৬ টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেটের বেশি পেলেন এই প্রথম।

তবে ব্যাট হাতেও তার কাছে দাবি ছিল দলের। পেরেরা পারেননি, পারেননি রংপুরের কোনো ব্যাটসম্যান। জাইদি-আবু হায়দারের দ্যুতিতে আড়াল সবাই।

হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা মাশরাফির কুমিল্লা ফাইনালের ঠিকানায় পৌঁছে গেল সবার আগে।