লুইসের ব্যাটিং তাণ্ডবে ঢাকার ১৫৮ রান সহজেই টপকে গেছে বরিশাল, জিতেছে ৯ উইকেটে। কুমার সাঙ্গাকারার ধ্রুপদি টি-টোয়েন্টি ইনিংস আড়াল হয়ে গেছে লুইসের খুনে ব্যাটিংয়ে।
লুইসের সঙ্গে রনি তালুকদারের ৮২ বলে ১২৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতেই গড়া হয়ে গেছে ম্যাচের ভাগ্য। মেহেদি মারুফকে (১৫*) নিয়ে বাকি পথটুকুও পাড়ি দিয়েছেন লুইস। ৭ ছক্কা ও ৬ চারে অপরাজিত ৬৫ বলে ১০১ রানে।
এবারের বিপিএলে এটিই প্রথম শতক। সব মিলিয়ে বিপিএলের অষ্টম শতক। এর মধ্যে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে ক্রিস গেইল একাই করেন ৩টি শতক!
লুইসের ব্যাটিংও অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে গেইলকে। ক্যারিবিয়ানে ছক্কা মারার জন্য দারুণ পরিচিত আছে ২৩ বছল বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনারের। গত ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দেখিয়েছেন নিজের সেই ঝলক। বিপিএলে এসে অপেক্ষা করছিলেন সুযোগের। এই ম্যাচের আগের দিন সুযোগ পেয়েছিলেন প্রথমবার। দারুণ এক চারে শুরু করলেও আউট হয়েছিলেন আম্পায়ারের সংশয়পূর্ণ সিদ্ধান্তে।
৩৯ বলে ছুঁয়েছিলেন অর্ধশতক। পরের ৭ বলে করেছেন ৩২! রনির আউট আর নিজের শতকের সুবাস পেয়ে একটু মন্থর হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শতক ছুঁয়েছেন ৬৪ বলে।
বরিশালকে স্বস্তি দেবে রনির রান পাওয়াও। দলের প্রয়োজনে এখন উইকেটকিপিং করতে হচ্ছে এই ওপেনারকে। কাজ চালানোর দায়িত্বে এই ম্যাচে দুটি স্টাম্পিংসহ তিনটি ডিসমিসাল করেছেন রনি। সেই আত্মবিশ্বাস অনূদিত হলো ব্যাটিংয়েও। লুইসকে সঙ্গ দেওয়া জুটিতে ৩৪ বলে করেছেন ৩৮ রান।
বোলিংয়ে তুলোধুনো হওয়ার আগে ব্যাট হাতে দারুণ খেলেছিলেন ডেসকাটে। আর সাঙ্গাকারা করেছেন টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক। আগের ম্যাচেই মিরপুরের মন্থর উইকেটে ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন সাঙ্গাকারা। সেদিন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তিন নম্বরে। মঙ্গলবার উঠে এলেন ওপেনিংয়ে। আবারও দেখালেন স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে কিভাবে ইনিংস গড়ে তুলতে হয়। দেখালেন, দৃষ্টিনন্দন সব ক্রিকেট শটেও কিভাবে টি-টোয়েন্টিতে কার্যকরী হওয়া যায়।
উদ্বোধনী জটিতে সাঙ্গাকারা-সৈকতের সতর্ক শুরুর পর হঠাৎই দ্রুত উইকেট হারায় ঢাকা। ঘরোয়া ক্রিকেটে সৈকত আলির চেনা সমস্যা থিতু হয়েও উইকেট বিলিয়ে আসা। বিপিএলেও সেই রোগ যথারীতি সঙ্গী তার। এবার আউট হয়েছেন ১৫ রানে। বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছেন কেভন কুপার।
তিনে নেমে লাহিরু থিরিমান্নেও সঙ্গ দিতে পারেননি সাঙ্গাকারাকে। মাহমুদউল্লার টুর্নান্ত ফ্লাইট ও টার্নে বিভ্রান্ত হয়ে ৫ রানে স্টাম্পড থিরিমান্নে।
ওই ওভারেই মাহমুদউল্লাকে চার মেরে শুরু করেছিলেন নাসির হোসেন। সাঙ্গাকারা দু দফায় তাকে গিয়ে বলছিলেন সিঙ্গেল নিয়ে খেলে রানের চাকাটা সচল রাখতে। কিন্তু অধিনায়কের কথায় কান দেননি ঢাকার আইকন ক্রিকেটার। সিকুগে প্রসন্নকে স্লগ করতে গিয়ে আউট নাসির (৫)। লঙ্কান লেগ স্পিনার নিজের পরের ওভারে ফেরার আবুল হাসানকেও। রান বাড়ানোর জন্য পাঁচ নম্বরে তুলে আনা আবুল হাসান একটি ছক্কা মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু রান বাড়ানোর চেষ্টাতে হয়েছেন স্টাম্পড।
আল আমিন হোসেনের করা শেষ ওভারে ম্যালকম ওয়ালার (৫ বলে ১০) ও ডেসকাটের ছক্কায় ঢাকার রান পৌঁছায় ১৬০-এর দোড়গোড়ায়। বরিশালের প্রসন্ন ও কুপার নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
কিন্তু পরে এই ম্যাচের আর সব কিছু ছাপিয়ে গেছে লুইসের তাণ্ডবে। প্লেয়ার্স বাই চয়েজ-এ তাকে যখন নিয়েছিল বরিশাল, বাংলাদেশের অনেকের কাছেই নামটি ছিল অচেনা। এই ম্যাচের পর আর কারও নামটি ভুলে যাওয়ার কথা নয়!