ঘরের মাঠেও হারল চিটাগং ভাইকিংস

নিজেদের মাঠেও হারের বলয় থেকে বের হতে পারল না চিটাগং ভাইকিংস। চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে ঘরের দল হারল ৩৩ রানে। চার ম্যাচে তৃতীয় জয় তুলে নিল বরিশাল বুলস।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2015, 10:05 AM
Updated : 30 Nov 2015, 06:47 PM

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭০ রান তুলেছিল বরিশাল। রান তাড়ার শুরুর দিকেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া চিটাগং শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেছে ১৩৭ রানে। পাঁচ ম্যাচে চিটাগংয়ের এটি চতুর্থ হার।  

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল যথেষ্টই। বাউন্স ছিল সমান, ব্যাটে এসেছে ভালোমতোই। একের পর এক বাজে শটে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানরা।

১৭১ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল ভালো শুরু। চিটাগংয়ের শুরুটা ছিল উল্টো। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আল আমিন হোসেনের লেংথ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল (৬)।

এবারের বিপিএলে প্রথমবার খেলতে নামা কামরান আকমল (০) রান আউট হলেন প্রশ্নবিদ্ধভাবে। দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় ছুটেছিলেন, কিন্তু শেষ পদক্ষেপে ব্যাট ক্রিজে ছোঁয়াননি! কেভন কুপারের থ্রো সরাসরি উড়িয়ে দিল বেলস।

আল আমিনকে টানা তিন বলে চার মারার পর তাইজুল ইসলামকেও চার মেরে বোলিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। কিন্তু ওই ওভারেই ধরা পড়েছেন মিড অনে (১২ বলে ১৯)।

এনামুল হক (১২) ও এলটন চিগুম্বুরাও (৫) পরে অনুসরণ করেন সতীর্থদের। ১০ ওভারেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে চিটাগং। সেখান থেকে আর ফেরার পথ জানা ছিল না তাদের। এক পাশ আগলে রেখে নাঈম ইসলাম (৪০ বলে ৩৮) শুধু হারের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন। শেষ দিকে ২ ছক্কায় ২০ রান করেছেন আমির।

নাঈম-আমির দুজনকেই এক ওভারে ফিরিয়েছেন কুপার, ২৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি নিয়েছেন আল আমিন; একটি করে মোহাম্মদ সামি, মাহমুদউল্লাহ ও তাইজুল ইসলাম।

এর আগে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো ছিল না বরিশালেরও। কিন্তু নড়বড়ে শুরুর পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বরিশাল। শুরুর ধার পরে আর ধরে রাখতে পারেনি চিটাগংয়ের বোলাররা। সঙ্গে যোগ হয় বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ ছাড়ার মহড়া। সব মিলিয়ে বরিশাল তুলতে পেরেছে এবারের বিপিএলে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর।

ব্রেন্ডন টেলরের বদলে সুযোগ পাওয়া এভিন লুইস শুরু করেছিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই চার মেরে। কিন্তু আম্পায়ারের সংশয়পূর্ণ এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তে পরের বলেই আউট ক্যারিবিয়ান ওপেনার।

মোহাম্মদ আমিরের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ আরেক ওপেনার রনি তালুকদার (০)। রানের খাতা খুলতে পারেননি সাব্বির রহমানও। শফিউল ইসলামের সোজা বল ফ্লিক করতে হয়ে এলবিডব্লিউ তিনিও। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যানের রান ১১, ১৫, ১০ ও ০!

১২ রানে ৩ উইকেট হারানো বরিশাল খানিকটা দিশা পায় মেহেদি মারুফ ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত দুই মৌসুমের নিয়মিত পারফরমার মেহেদি একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিসের বদলে। প্রথম ম্যাচেই সামর্থ্যের ছাপ কিছুটা রাখতে পেরেছেন এই ব্যাটসম্যান।

প্রথম বলেই তিলকরত্নে দিলশানকে দারুণ এক সুইপে চার মেরে শুরু করেছিলেন মেহেদি। পরে এনামুল জুনিয়রকে উড়িয়েছেন মাথার ওপর দিয়ে। এলটন চিগুম্বুরাকে হাঁটু গেড়ে ফ্লিক করে যে ছক্কাটি মেরেছেন, এবারের বিপিএলেরই সেটি অন্যতম সেরা শট। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন জিয়াউর রহমানের স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে (২৫ বলে ২৮)।

শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে তখন একটা ভিত্তি পেয়ে গেছে বরিশাল। যেটার ওপর দাঁড়িয়ে দলের ইনিংসকে গতি এনে দেন সিকুগে প্রসন্ন। আগের দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর এবার চার ছক্কায় ২০ বলে ৩৬ রান করেছেন লঙ্কান অলরাউন্ডার।

মাহমুদউল্লাহ (৫১) আরেক প্রান্তে খেলেছেন নিজের মতোই। ইনিংস আগলে রাখার পাশাপাশি মেরেছেন দৃষ্টিনন্দন কিছু শট। ৪৩ বলে ছুঁয়েছেন অর্ধশত। ছোটো কিন্তু দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন কেভন কুপার (১১ বলে ২২*)।

শেষ ৭ ওভারে বরিশাল তুলেছে ৯৮ রান। চিগুম্বুরার করা ইনিংসের ১৯তম ওভার থেকে এসেছে ২২ রান।

২০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন চিটাগংয়ের আমির, ২৪ রানে ২টি জিয়া।

বোলারদের শেষের ব্যর্থতা ঢেকে দিতে পারতেন চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তারা রণেভঙ্গ দিয়েছেন শুরুতেই। বরিশালের জয় ধরা দিল তাই অনায়াসেই।